আফগানিস্তানের তালেবান সরকারে বড় ধাক্কা। রাজধানী কাবুলে শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কার্যালয়ে আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে দেশটির শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন বিষয়কমন্ত্রী ও প্রভাবশালী হাক্কানি পরিবারের সদস্য খলিল হাক্কানি নিহত হয়েছেন।
বুধবার কাবুলে শরণার্থীবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বিস্ফোরণে মন্ত্রীর প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটেছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছেন হাক্কানির ভাতিজা আনাস হাক্কানি। এতে আরও ছয়জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে সরকারের দুইজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও রয়েছেন বলে জানা গেছে।
হামলার পেছনে, জঙ্গি সংগঠন আইএসের আফগান শাখা ইসলামিক স্টেট খোরাসান(আইএসকে) রয়েছে বলে তালেবান নিয়ন্ত্রিত কাবুল পুলিশের প্রাথমিক ধারণা। তবে শেষ খবর পর্যন্ত কাবুল আত্মঘাতী বোমা হামলার দায় স্বীকার করে কোন গোষ্ঠি কোন বিবৃতি দেয়নি।
আনাস হাক্কানি বলেন, আমরা একজন সাহসী মুজাহিদকে হারিয়েছি। আমরা তাকে ও তার ত্যাগকে কখনো ভুলতে পারব না। নিহত খলিল হক্কানি আফগানিস্তানের শরণার্থী বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। তালেবানের ‘পাকিস্তান ঘনিষ্ঠ’ অংশের নেতা হিসাবেও তাঁর পরিচিতি ছিলো।
বুধবার কাবুলের কালা বখতিয়ারপারায় খলিল হাক্কানির দপ্তরে ঢুকে বিস্ফোরণ ঘটায় এক আত্মঘাতী। খলিল হাক্কানি ছিলেন জালালউদ্দিন হাক্কানির ভাই, যিনি দুর্ধর্ষ গেরিলা বাহিনী হাক্কানি নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেন। তালেবানের দুই দশকের প্রতিরোধ যুদ্ধের সময় আফগান ও ন্যাটো বাহিনীর বিরুদ্ধে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলার জন্য পরিচিত এই হাক্কানি নেটওয়ার্ক।
বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজুদ্দিন হাক্কানির চাচা ছিলেন খলিল হাক্কানি। মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীর বিরুদ্ধে দুই দশকের যুদ্ধ শেষে ২০২১ সালে কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং সরকার গঠন করে তালেবান।
২০২১ সালের অগস্ট মাসে আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর, যখন নাগরিকদের নিজ নিজ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ চালাচ্ছিল আমেরিকা-ব্রিটেনসহ বহু দেশ। সেসময়ে কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে আইএসকের আত্মঘাতী বিস্ফোরণে বহু আফগান ও আমেরিকার সেনা নিহত হয়েছিলো।
তারপর থেকে ধারাবাহিকভাবে তালেবান সরকার ও আফগান নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করছে এই জঙ্গি গোষ্ঠি। পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং উজবেকিস্তানের একাংশ নিয়ে ছিল প্রাচীন খোরাসান অঞ্চল। আইএস-এর আফগান শাখা ওই অঞ্চলকে তাদের দাবি করে আসছে।
তালেবান সরকার গঠনের পর আফগানিস্তানে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে। সহিংসতাও কমেছে। তবে আইএসআইএস-খোরাসান নামে পরিচিত জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের একটি আঞ্চলিক শাখা সক্রিয় রয়েছে এবং নিয়মিত বন্দুক ও বোমা হামলা চালাচ্ছে।