আর কিছুক্ষণ পরই যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর শপথ অনুষ্ঠানকে ঘিরে দেশটির রাজধানীতে এখন সাজসাজ রব। স্থানীয় সময় সোমবার দুপুর ১২ টায় ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠান ঘিরে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিজুড়ে নেয়া হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসে অন্যতম নাটকীয় প্রত্যাবর্তন ঘটানো ডোনাল্ড ট্রাম্প চার বছর আগে ক্ষমতা না ছাড়তে চাইলেও, হোয়াইট হাউজ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন ট্রাম্প। চার বছর পর দেশের মানুষের বিপুল সমর্থন নিয়ে সেই হোয়াইট হাউজেই ফিরছেন তিনি।
ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ওয়াশিংটনে আসছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান। এদের মধ্যে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জাভিয়ার মাইলি ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। ২০২১ সালে জো বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানে নজিরবিহীনভাবে অনুপস্থিত ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
কিন্তু সেই বাইডেনই শুধু নন, ট্রাম্পের শপথ প্রত্যক্ষ করবেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং বারাক ওবামাও। এমনকি ট্রাম্প যাকে নির্বাচনে হারিয়েছেন সেই কমলা হ্যারিসেরও উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে টেসলার ইলন মাস্ক, মেটার মার্ক জাকারবার্গ, অ্যামাজনের জেফ বেজোস, অ্যাপলের টিম কুক, টিকটকের শু চিউ এবং গুগলের সুন্দর পিচাই-কে। যদিও শপথ অনুষ্ঠানে থাকছেন না সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা ও সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি।
তীব্র শীতের কারণে ৪০ বছরের মধ্যে এই প্রথম অভিষেক অনুষ্ঠান ক্যাপিটল ভবনের পশ্চিম দিকের খোলা সিঁড়ির পরিবর্তে গম্বুজঅলা গোলাকার হলঘর রোটান্ডায় অনুষ্ঠিত হবে। চার বছর আগে ট্রাম্পর একদল উগ্র সমর্থক মার্কিন গণতন্ত্রের প্রতীক এই ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালিয়েছিল, তারা ডেমোক্র্যাট জো বাইডেনের কাছে রিপাবলিকান ট্রাম্পের পরাজয় আটকানোর ব্যর্থ চেষ্টায় ঘটনাটি ঘটিয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ঐহিত্য অনুযায়ী প্রেসিডেন্টের অভিষেক একটি অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু এবারের শপথ অনুষ্ঠানে এই ঐতিহ্যের ভাঙছেন ট্রাম্প। এই অনুষ্ঠানে অভিষেক বক্তৃতা, প্যারেড, সঙ্গীতানুষ্ঠানের পাশাপাশি বিদেশি অতিথিরাও থাকছেন। এতে অনুষ্ঠানটি আর অভ্যন্তরীণ না থেকে আন্তর্জাতিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রায় এক ডজন বিদেশি নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তাদের অধিকাংশই রক্ষণশীল ও ডানপন্থি। এর আগে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর শুধু রাষ্ট্রদূত অথবা পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এসব অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতেন।
২০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে এ শপথ অনুষ্ঠানের নিরাপত্তায় রাজধানীতে দায়িত্ব পালন করছেন ন্যাশনাল গার্ডের ৭৮০০ সদস্যসহ ২৫ হাজার আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য। ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানটি সরাসরি উপভোগ এবং প্রেসিডেন্সিয়াল প্যারেড আয়োজন করতে সোমবার ক্যাপিটাল ওয়ান এরিনা (ইনডোর ভ্যানু) খুলে দেয়া হবে।
সাধারণত মার্কিন সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি নতুন প্রেসিডেন্টের শপথবাক্য পাঠ করান। এবার জন রবার্টস দ্বিতীয়বারের মতো ট্রাম্পের শপথবাক্য পাঠ করাবেন। এদিন নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও শপথ নেবেন। এর মাধ্যমে ট্রাম্প-ভ্যান্সের নেতৃত্বাধীন নতুন মার্কিন প্রশাসনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে।
২০১৭ সালে প্রথম অভিষেকের সময় ট্রাম্প ১৮৬১ সালে আব্রাহাম লিংকনের শপথ নেওয়া বাইবেলে ছুঁয়ে শপথ নিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে তার প্রয়াত মা মেরি অ্যান ম্যাকলিওড ট্রাম্পের উপহার দেওয়া দ্বিতীয় আরেকটি বাইবেলও ছিল। মিডিয়া রিপোর্টে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে এবারও ট্রাম্প সেই দুটি বাইবেল ছুঁয়েই শপথ নেবেন।