এক দশক ধরে দিল্লিতে রাজত্ব করা আম আদমি পার্টির (এএপি) ভরাডুবি হলো। এর মাধ্যমে ২৬ বছর পর ভারতের রাজধানী দখল করলো পদ্মফুল প্রতীকের কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)।
দিল্লি বিধানসভার ৭০ আসনের মধ্যে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ৩৬টি আসন। শনিবার বিকেল পাঁচটার পর ইন্ডিয়াটুডে জানিয়েছে, ইতিমধ্যে ৪৭টিতে জয়ী এবং একটিতে এগিয়ে আছে বিজেপি। আর কেজরির দল আপ ২১টি জিতে এগিয়ে আছে একটিতে। একই সঙ্গে শূন্যের হ্যাটট্রিক পূরণ করেছে কংগ্রেস।
আম আদমিপ্রধান কেজরিওয়াল ও তার ডেপুটি মনীষ সিসৌদিয়া, রমেশ বিধুরী, সন্দিপ দীক্ষিত তাদের আসনে পরাজিত হয়েছেন। কালকাজি কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আতিশী মার্লেনা।
ফল মেনে নিলেন কেজরি
এক প্রতিক্রিয়ায় অরবিন্দ কেজরি আগরওয়াল বলেন, রাজনীতিতে কোনো লাভের উদ্দেশ্য নিয়ে আসেননি। মানুষের রায় মাথা পেতে নিচ্ছেন। আগামী দিনে দিল্লিতে তারা গঠনমূলক বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করবেন, জানিয়েছেন তিনি। ভোটে হেরে গেলেও দিল্লির আপ কর্মীদের পরিশ্রমকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।
বিধানসভা নির্বাচনের ফল স্পষ্ট হতেই সমাজমাধ্যমে ভিডিয়োবার্তা দিয়েছেন কেজরিওয়াল। বলেছেন, ‘দিল্লির ভোটের ফল প্রকাশিত। জনতার এই রায় আমরা মাথা পেতে নিচ্ছি। বিজেপিকে জয়ের জন্য অভিনন্দন। যে আশা নিয়ে মানুষ ওদের ভোট দিয়েছেন, আশা করি ওরা তা পূরণ করবো।’
দিল্লিতে আপের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করে কেজরি আরও বলেন, গত ১০ বছরে আমরা অনেক কাজ করেছি। দিল্লিতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জল- সব ক্ষেত্রে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার চেষ্টা করেছি। দেশের রাজধানীর পরিকাঠামোগত উন্নয়নের চেষ্টা করেছি। এখন দিল্লির মানুষের রায় অনুযায়ী আমরা এখানে গঠনমূলক বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করবো।
মানুষের জন্য কাজ চালিয়ে যাবেন বার্তা দিয়ে সাবকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সমাজসেবা এবং মানুষের হিতার্থে আমরা কাজ চালিয়ে যাবো। মানুষের সুখেদুঃখে পাশে থাকবো।
আণ্ণা হাজারের আক্ষেপ
দিল্লির বিধানসভা ভোটে হেরে গিয়েছেন আম আদমি পার্টি (আপ)-র প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়াল। তাকে নিয়ে আক্ষেপের সুর সমাজকর্মী আণ্ণা হাজারের গলায়। আণ্ণা জানান, নির্বাচনে সাফল্য পেতে কী কী করণীয়, সে বিষয়ে তিনি অতীতে বার বার বুঝিয়েছেন কেজরিকে। কিন্তু তার কথায় গুরুত্ব দেননি আপ প্রধান। উল্টো ধনদৌলতের মধ্যেই আচ্ছন্ন থেকেছেন তিনি।
দিল্লির নির্বাচন প্রসঙ্গে আণ্ণা বলেন, আমি আগে থেকেই বলে আসছি, নির্বাচনের সময়ে প্রার্থীর আচরণ এবং ভাবনাচিন্তায় শুদ্ধতা থাকা প্রয়োজন। নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্য কোনো প্রার্থীর জীবন নিষ্কলঙ্ক হওয়া প্রয়োজন। তার জীবনে ত্যাগ থাকা উচিত। কারও মধ্যে এই গুণগুলি থাকলে ভোটারদের মনে বিশ্বাস জন্মায়। আমি এ সব কথা বার বার বলেছি। কিন্তু তার (কেজরির) মাথায় এ সব প্রবেশ করেনি। তিনি বেশি গুরুত্ব দেন মদের ওপর। কেন মদের দোকানের প্রসঙ্গ উঠল? কারণ, তিনি ধনদৌলতের মধ্যে বয়ে গিয়েছিলেন।
শূন্য হওয়ার হ্যাটট্রিকও করলো কংগ্রেস
দেশের রাজধানীতে আবার শূন্যহাতে কংগ্রেস। ২০১৫ থেকে এই নিয়ে পর পর তিন বার। ঘটনাচক্রে, ১৯৯৮ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত দিল্লিতে টানা তিনটি বিধানসভা নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে নজির গড়েছিল তারা। অর্থাৎ, জয়ের হ্যাটট্রিকের পরে এ বার দিল্লিতে শূন্যের হ্যাটট্রিক করল রাহুল গান্ধী-মল্লিকার্জুন খড়্গের দল। অন্ধ্রপ্রদেশ এবং সিকিমের বিধানসভা ভোটে শূন্যের হ্যাটট্রিক করার নজির রয়েছে কংগ্রেসের। এ বার সেই তালিকায় যোগ হল দিল্লি।
ভোটের ট্রেন্ড দেখে বিজেপির দিল্লি সদরদপ্তরে উৎসব শুরু হয়েছে, কবরের নিস্তব্ধতা আম আদমির কার্যালয়ে। ভোটের পর বুথফেরত জরিপগুলোতেও বিজেপির ফেরার আভাস মিলেছিল।
যেভাবে এগিয়ে গেলো বিজেপি জোট
দুর্নীতি মুক্ত, জোটবদ্ধতা ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের (আরএসএস) সক্রিয়তা এই তিন কৌশলে বিজেপি এগিয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন একজনই, তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
প্রতিষ্ঠার কিছুকাল পরেই ২০১৫ সালের নির্বাচনে ভূমিধস জয়ে দিল্লিতে সরকার গড়েছিল কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি, সেবার তারা ৭০টি আসনের ৬৭টিই ব্যাগে পুরেছিল।