ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের নৈসর্গিক বাইসারান উপত্যকার তৃণভূমির আশেপাশের পাইন বন থেকে সন্ত্রাসীদের একটি দল বেরিয়ে এসে প্রকৃতির সৌন্দর্য্য আবগাহনে ব্যস্ত থাকা পর্যটকদের একটি দলের ওপর গুলি চালানোর পর থেকেই সেখানের দেশি-বিদেশি মেহমানে ভরপুর পেহেলগাম প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়।
অবশেষে ভয়াবহ সেই সন্ত্রাসী হামলার পাঁচ দিন পর, আতঙ্ক কাটিয়ে পেহেলগামে ফিরতে শুরু করেছেন পর্যটক। কাশ্মীর উপত্যকায় গ্রীষ্মকাল উপভোগ করতে ইচ্ছুক পর্যটকরা তাদের সিদ্ধান্তে অটল বলেই মনে করছেন সেখানকার পর্যটন ব্যবসায়ীরা। পর্যটকরা বলছেন, তারা ভেবেচিন্তে আসার সিদ্ধান্ত নেয়েছেন।
‘ছোট্ট সুইজারল্যান্ড’ তকমা পাওয়া মনোরম এলাকাটি মঙ্গলবারের হামলার কয়েকদিন পর পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়া হলেও, হামলার গ্রাউন্ড জিরো, বৈসরান তৃণভূমি এখনও বন্ধ রয়েছে। এই বৈসারনকে ঘিরে থাকা পাইন বনের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে ২৬ জন পর্যটককে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।
কাশ্মীরে স্মরণকালের অন্যতম ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হামলার পর, সেখানে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ থেকে সাত হাজারের পরিবর্তে মাত্র ১০০ পর্যটককে দেখা যায়। এতে করে পর্যটনের উপর নির্ভরশীল স্থানীয়দের জন্য বড় রকমের আর্থিক অনিশ্চিয়তা তৈরি করে। তবে রোববার থেকেই প্রাণ ফিরে শুরু করে পেহেলগাম।
শহরের রাস্তায় রাস্তায় দেখা মেলে বিদেশি ও দেশি পর্যটকরা। তারা শহরের মধ্যে দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছিলেন, যা স্বাভাবিকতার অনুভূতি ফিরিয়ে এনে সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে। আর ভারত জুড়ে পর্যটকরা বলেছেন যে এই ধরনের ঘটনা যে কোনও জায়গায় ঘটতে পারে। তাই ঘরে বসে থাকার কোন মানে হয় না।
মহারাষ্ট্র থেকে আসা একটি দল বলেছে যে, তারা ভয় পাচ্ছে না কারণ তাদের ট্র্যাভেল এজেন্ট এবং তাদের ট্যুর গ্রুপের ব্যাপক সমর্থন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। তাদের একজন বলছিলেন, আমাদের ভয় পাওয়া উচিত নয়। যা ঘটার, তাই ঘটবে। তাই হাত-পা গুটিয়ে ঘরে বসে থাকার কোন দরকার নেই।
ক্রোয়েশিয়ান এবং সার্বিয়ান পর্যটকদের সম্পূর্ণ স্বাচ্ছন্দ্যে পাহেলগামের রাস্তাগুলো ঘুরে দেখতে দেখা গেছে। ক্রোয়াট পর্যটক ভ্লাটকো বলেন, এটি আমার দশমবার কাশ্মীরে আসা এবং প্রতিবারই দুর্দান্ত। আমার জন্য, এটি বিশ্বের এক নম্বর স্থান। আমার সঙ্গীরাও খুব খুশি; তবে তাদের জন্য প্রথম কা্শ্মীর দর্শন।
ক্রোয়েশিয়ার লিলজানা বলেন যে তারা খুব নিরাপদ বোধ করছেন। তিনি বলেন, এখানে থাকতে আমাদের কোনও সমস্যা নেই। কাশ্মীর সুন্দর, খুব সুন্দর। আমরা এখনকার মানুষের আচরণ নিয়ে খুব সন্তুষ্ট, এবং মানুষগুলো খুব দয়ালু আর আন্তরিক।
ক্রোয়েশিয়ার আরেক পর্যটক অ্যাডমির জাহিকও একই রকম অনুভূতি প্রকাশ করেন। হামলার ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি কোনও ভয় পাইনি। আমি জানি এটি এমন কিছু নয় যা এখানে নিয়মিত ঘটে। যদি আপনি ভয় পান, আপনি বাড়িতে থাকতে পারেন, তবে সেখানেও এটি ঘটতে পারে। এটি ইউরোপে ঘটে, এটি সর্বত্র ঘটে। পৃথিবীতে আর কোনও নিরাপদ স্থান নেই।