ভারত সরকারের অপারেশন সিঁদুর বিষয়ে বিরোধী দলের যে অকুণ্ঠ সমর্থন পাওয়া গেছে, ইসরাইল নীতি নিয়ে তেমনটা হলো না। ইসরাইলের বিষয়ে মোদী সরকারের নমনীয় নীতির কঠোর সমালোচনা করছে বিরোধী দল। কিন্তু মোদী কেন ইসরাইল ঘেঁষা?
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের মতোই স্পর্শকাতর ইসরাইল-ইরান যুদ্ধ। এ যুদ্ধে ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থা ভারতের। সরকারের তীব্র সমালোচনা করছে কংগ্রেস। প্রধান বিরোধী দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ও কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ প্রত্যেকেই সরকারি মনোভাব ও ভূমিকার সমালোচনা করে বলেছেন, বিশ্বগুরু হতে গেলে সাহসী ও মানবিক হতে হয়। পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধবিরতি ও শান্তি আলোচনা নিয়ে ভারত তার চিরায়ত অবস্থান থেকে সরে এসেছে কি না, এমন প্রশ্নও তুলেছে বিরোধী শিবির।
ইরানে ইসরাইলের হামলার বিষয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এক্সে লিখেছেন, ইসরাইলের ইরান আক্রমণকে কার্যত সমর্থন করেছে ভারত। এ ভূমিকা ভারতের স্বাধীনতাসংগ্রাম ও সাংবিধানিক আদর্শের পরিপন্থি। সত্য ও অহিংসার পক্ষে নির্ভয়ে দাঁড়ানো এখন সময়ের দাবি। অতীতে বারবার ভারত সেই সাহস দেখিয়েছে। বৈশ্বিক নেতৃত্ব দিতে গেলে ভারতকে সেই মানবিক কণ্ঠস্বর ফিরিয়ে আনতে হবে।
ইরানে ইসরাইলের হামলার বিরুদ্ধে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) একটি বিবৃতি দিয়েছে। ভারত তারও অংশীদার হয়নি। মোট ৯ দেশের এই জোটে ইরান ও ভারত দুই দেশই আছে। তবে আলাদা একটি বিবৃতি দিয়েছে ভারত। বলা হয়েছে, আলোচনা ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের মধ্য দিয়েই মীমাংসায় পৌঁছাতে হবে।
কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ সেই মানসিকতার সমালোচনা করে বলেছেন, এই বিবৃতি অর্থহীন। বিবৃতিটি পড়লে মনে হয়, যেন ইরান আক্রান্ত হলেও তাকে সংযম দেখাতে হবে। মনে হয়, ভারত যেন ইসরায়েলের হয়ে মিনমিন করে ক্ষমা চাইছে।
ইসরায়েলের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক দিন দিন ‘উন্নত’ হচ্ছে। দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার ক্ষেত্র কৃষি, প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষাসহ বিভিন্ন দিকে প্রসারিত হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, পাকিস্তানে হামলার সময় ইসরাইলই প্রথম ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারের কথা বলেছিল। এ ছাড়া ভারতের বিবেচনায় রয়েছে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও। আন্তর্জাতিক মঞ্চে ইসরায়েলের খোলাখুলি বিরোধিতা মোদির ভারতের পক্ষে যে সম্ভবপর নয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিভৃত আলোচনায় তা স্পষ্ট।
ভারতের কৌশলগত অবস্থান অনেক বেশি স্বার্থকেন্দ্রিক। একদিকে এসসিও’র বিবৃতিতে সই না করে চীন-রাশিয়া-ইরান জোটের থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখছে, আবার যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট না করে আগামী দিনের বাণিজ্য ও নিরাপত্তা স্বার্থ অক্ষুণ্ন রাখতে চাইছে। তবে এই ভারসাম্য কতদিন টিকবে, তা নির্ভর করছে সংঘাত কত দূর গড়ায় তার ওপর।