ইসরাইলের মাটিতে ইরানের বিরোচিত হামলার পর বিশ্বজুড়েই এখন বিরাজ করছে টানটান উত্তেজনা। সবাই নড়েচড়ে বসেছে। ইরানের বজ্রকঠিন দৃঢ়তায় ভয় পেয়ে গেছে ইসরাইলের প্রধান দোসরসহ পশ্চিমা মিত্ররা। সবাই মিলে ইসরাইলের কট্টরপন্থী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে শান্ত থাকার আহবান জানাচ্ছেন। প্রতিশোধ নিতে ইরানে হামলা না চালানোর কথা বলছে আমেরিকা ও তার তাবেদার দেশগুলো।
শনিবার রাতে ইসরাইলি ভূখন্ড লক্ষ্য করে ইরানের নজিরবিহীন ড্রোন ও মিসাইল হামলার পর উভয়পক্ষেই চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। ইসরাইলের দাবি, ইরানের ছোড়া তিনশ’ ড্রোন ও মিসাইলের প্রায় সবগুলোকেই আকাশেই নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। অন্যদিকে ইরানের দাবি, হামলায় তাদের সবগুলো লক্ষ্যই পূরণ হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় হলো ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা পেয়ে ফেলা।
ইরানের তুলনায় ইসরাইল একটি ছোট্ট ভূখন্ড হলেও আমেরিকা ও পশ্চিমাদের উদার সহায়তায় বিশ্বের শীর্ষ বিশ সমর শক্তির একটি দেশ। অন্যদিকে ইরানও কম যায় না। সমর শক্তিতে এই তালিকায় ইসরাইলের চেয়ে তিন ধাপ এগিয়েই রয়েছে খামেনির দেশ। ইরান মিসাইল ও ড্রোন তৈরিতে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। এসবের বিশাল এব ভান্ডার গড়েছে ইরান। সেই সঙ্গে গড়ে তুলেছে হিজবুল্লাহ ও হুতির মতো প্রক্সি বাহিনী।
ইসরাইলের চেয়ে শুধুমাত্র একটি দিকে পিছিয়ে আছে ইরান, আর সেটি হলো যুদ্ধবিমান ও আধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। তবে এই ঘাটতি পূরণে রাশিয়া কাজ করছে বলে ধরা হয়। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে শাহেদ ড্রোন দেয়ার পর ক্রেমলিনকে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষাকে জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অন্যদিকে, ইসরাইলকে বিশ্বের অন্যতম সেরা বিমানবাহিনীতে পরিণত করে দিয়েছে আমেরিকা।
ইসরাইল যেমন ইরানি হামলার জবাব দিতে মরিয়া, তেমনি তেল আবিব ও পশ্চিমাদের প্রতি কঠোর হুশিয়ারী বার্তা পাঠিয়েছে তেহরান। বলেছে, দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলার প্রতিশোধ নেয়া হয়েছে। ফলে সেটির এখানেই শেষ। কিন্তু ইসরাইল যদি আবারও ইরানি স্বার্থে আঘাত করে, তাহলে আরও দশগুণ হামলার জন্য যেন প্রস্তুত থাকে ইসরাইল। আর এমন সব হামলাগুলোর জন্য ইসরাইলকে অনুতাপ করতে হবে।
ইসরাইলে সব কুকর্মের সঙ্গী ও সমর্থক আমেরিকাকেও আলাদা করে বার্তা পাঠিয়েছে ইরান। বলেছে, কোন ধরনের প্রতিক্রিয়ার অর্থই হবে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন স্বার্থকে তেহরানের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা। এমন কথা শুনে বাইডেনের ঘাম ছুটে গেছে। নেতানিয়াহুকে সোজা জানিয়ে দিয়েছে, যা খুশি করো, কিন্তু ইরানের কিছু করলে আমরা নেই। ইরান সংশ্লিষ্ট কোন আক্রমণে পাশে পাওয়া যাবে না আমেরিকাকে।
এতোদিন চুপচাপ ছিলো রাশিয়া। বসে বসে মজা দেখছিলেন ক্রেমলিনের নায়ক ভ্লাদিমির পুতিন। ইরানের হামলা দেখে তিনিও বিষ্মিত। তাই আর বসে থাকলেন না। ভূমধ্যসাগরে পাঠিয়ে দিয়েছেন বিশাল যুদ্ধবহর। গোটা বিশ্বকে অকপটে বলে দিয়েছেন, ইরানে পাল্টা হামলার চেষ্টা হলে বসে থাকবে না রাশিয়া। অর্থাৎ, সব মিলে জমে গেছে খেলা। এখন শুধু বাকি চীনের প্রতিক্রিয়া, তাহলেই নিশ্চিত হয়ে যাবে দুই অক্ষশক্তি।
শনিবারের হামলা নিয়ে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাগারি জানান, তারা কোন বেসামরিক ও অর্থনৈতিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করেনি। তাদের হামলা ছিলো সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে, সেই সব স্থাপনা যেখান থেকে দামেস্কে হামলা চালিয়েছিলো ইসরাইলের বিমানবাহিনী। হেরমন পর্বত ও নেগেভ মরুভূমির যেসব ঘাঁটিতে থেকে যুদ্ধবিমান উড়ে গেছে সেগুলো অকার্যকর করা হয়েছে।
জেনারেল বাগারি জানান, ইসরাইল কোন ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখালেই চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে। তবে ইসরাইল যদি পাল্টা আক্রমণ না চালায়, তবে ইসরাইলে আর হামলার কোনও পরিকল্পনা নেই তেহরানের। আর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে ইরান জানিয়েছে, খুব স্বাভাবিকভাবেই তাদের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। আর হামলার মধ্য দিয়ে ইরান সেই অধিকারই রক্ষা করেছে।