টানা ছুটির সঙ্গে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত হওয়ায় এবার দেশজুড়ে ঈদুল ফিতর ও বাংলা নববর্ষ পালনে ছিলো ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা। স্বস্তি নিয়ে সবাই ঈদ ও পয়লা বৈশাখ উদযাপন করেছে দেশের মানুষ। ঈদ শেষ না হতেই বাঙালির সবচেয়ে বড় সর্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখ উদযাপন পেয়েছিলো ভিন্ন মাত্রা। সংস্কৃতি কর্মীরা বলছেন, এতো লম্বা ছুটিতেও আয়োজনে কোন ভাটা পড়েনি। কারণ মানুষ নিরাপদ বোধ করেছে।
এক মাস সিয়াম সাধনা শেষে গেলো বৃহস্পতিবার পবিত্র ইদুল ফিতর উদযাপনের দুই দিন পরেই, রোববরার নানা আয়োজনে বরণ করা হয় নতুন বাংলা বছর ১৪৩১। এবার পহেলা বৈশাখো ছিল অন্যরকম আবহ। ঈদের ছুটির সঙ্গে পহেলা বৈশাখ। তাই সরকারি বেসকারি চাকরিজীবী, পেশাজীবীরা ৬-৭ দিনের ছুটি পেয়েছেন।
প্রায় এক সপ্তাহের টানা ছুটিতে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষ এবার নিজের জন্মস্থান বা গ্রামের বাড়িতেই নববর্ষ উদযাপন করতে পেরেছেন। তারা বলছেন, একসাথে ছুটি পড়ায় এবার আনন্দ দ্বিগুন হয়েছে। নতুন বছরের একদিনের ছুটিতে গ্রামে যাওয়া সম্ভব হয় না। এবার পহেলা বৈশাখ তাই অনেক আনন্দের ছিলো।
এবার ঈদে যাওয়া-আসা ছিলো নির্বিঘ্ন। দ্রব্যমূল্য সহনীয় থাকায় আরামদায়ক ছিলো পুরো সময়টা। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ছিল। দেশবাসী স্বস্তি ও উৎসাহ নিয়ে ঈদ ও নববর্ষ পালন করেছে। সোমবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি।
আর ঈদের ছুটি শেষে প্রথম কার্যদিবসে সচিবালয়ে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বিএনপি নেতারা ঈদে মানুষের কষ্টের কথা বললেও সেই বাংলাদেশ এখন নেই। মানুষ আনন্দে ঈদ ও নববর্ষ উদযাপন করেছে। তিনি আরও বলেন, ছুটি বেশি হওয়ায় চিরচেনা ঢাকার রুপ ফিরে পেতে সময় লাগবে।
ঈদ এবং পহেলা বৈশাখের উৎসবে আনন্দে এবার একাকার হয়ে গেছে বাংলার মানুষ উল্লেখ করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ঈদ আনন্দ ধর্মীয় উৎসব হলেও এর একটি সর্বজনীনতাও আছে। অন্যদিকে পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে বড় অসাম্প্রাদিক উৎসব। কেবল ঢাকা নয় আয়োজনটা ছিলো সারাদেশব্যাপী। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমরা খবর পেয়েছি দুটো উৎসব একসঙ্গে মিলে ধনী, গরিব, নারী-পুরুষ সব শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে মৈত্রীর বন্ধন তৈরী হয়েছে।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, বাঙালির সম্প্রীতি ফুটে উঠেছে সারা দেশে। শোভাযাত্রা মানুষকে মানুষের পাশে আনে। আশার কথা হলো এটা এার ঢাকায় সীমাবদ্ধ নেই। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে গ্রামে এবার মঙ্গল শোভাযাত্রা, বৈশাখী মেলাসহ নানা আয়োজন ছিলো।
তিনি বলেন, বাঙালি আত্মপরিচয়কে নিজে ধারণ করা এবং পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সেটি প্রবাহিত করার কাজটি এই দিনগুলোর মধ্য দিয়ে হয়। এই দিনগুলো নিজে উদযাপন করুন এবং পরিবারের মানুষদের উদযাপনের ধরণগুলো শেখান। মনে রাখতে হবে শেকড়কে ভুলে কেউ বড় হতে পারে না।
এদিকে, পবিত্র ঈদুল ফিতর ও নববর্ষের টানা পাঁচদিনের ছুটির পর প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে প্রথম কার্যদিবসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি ছিল কম। টানা পাঁচদিনের ছুটি শেষে সোমবার থেকে খুলেছে সরকারি অফিস। কিন্তু ঈদ আমেজ এখনও কাটেনি। প্রথম কর্মদিবসে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মস্থলে ফিরে সহকর্মীদের সঙ্গে ঈদ ও নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে কর্মদিবস শুরু করেন।