বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার আটকে থাকা অর্থ আদায়ে রোডম্যাপ তৈরি করতে যাচ্ছে সরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ, অর্থ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে আলোচনা করে টাকা আদায়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই রোডম্যাপ তৈরি করা হবে।
বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বৈঠকের তথ্য তুলে ধরেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সময় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের ব্যয় নির্বাহের জন্য ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত অর্থ বিভাগ থেকে ১০৫ কোটি টাকা এবং এই ফান্ডে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত তিন হাজার ৯৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) বিভিন্ন শাখায় ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক বছর মেয়াদে স্থায়ী আমানত হিসেবে ৫৯৭ কোটি ৬২ লাখ টাকার বেশি রাখা হয়। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সুদহারে আসলসহ ব্যাংকের কাছে পাওনা ৮৭৩ কোটি ৮১ লাখ টাকার বেশি। স্থায়ী আমানতের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ব্যাংক টাকা নগদায়ন করছে না। এমনকি ট্রাস্টের অনুমোদন ছাড়া স্বপ্রণোদিতভাবে নবায়ন করে যাচ্ছে। কিন্তু আমানতগুলো ২০৩৮ সালে পরিশোধ করা হবে বলে পদ্মা ব্যাংক অর্থ পরিশোধের পরিকল্পনা জমা দেয়। ২০২২ সালে এই পরিকল্পনা জমার পর ২০২৩ সালে মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় ২০৩০ সালের মধ্যে পরিশোধের পরিকল্পনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু গত জানুয়ারিতে পদ্মা ব্যাংক ছয় শতাংশ সুদহারে ৭৬০ কোটির বেশি টাকা পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মতামত ছাড়াই আট বছর মেয়াদি ব্যাংকের প্রেফারেন্স শেয়ারে রূপান্তর করে।
এ অবস্থায় উপদেষ্টা পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের স্থায়ী আমানত পাওনা পরিশোধ না করায় উদ্ভূত সমস্যাসহ অন্যান্য সরকারি সংস্থার একই জাতীয় সমস্যা সমাধানে রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এসব টাকা কী বিবেচনায়, কে, কেন রেখেছিলেন, সেটা তদন্ত করে দেখবে প্রতিটি মন্ত্রণালয়।
পদ্মা ব্যাংকে রাখা টাকার প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, তারা সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই নিজেরাই বছর বছর এই এফডিআর রিনিউ করছে। তাদের এখন বক্তব্য হচ্ছে, ২০৩৮ সালের আগে এই টাকা আমাদেরকে দিতে পারবে না। না সুদ না আসল। এরকম সমস্যা শ্রম ও কর্ম সংস্থান মন্ত্রণালয়সহ আরও অনেক জায়গায় রয়েছে। সেগুলো কী বিবেচনায় রাখা হয়েছে, আমরা তো বলতে পারছি না। এ বিষয়টি আমরা উপদেষ্টা পরিষদে তুলেছিলাম। পরে সিদ্ধান্ত হয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে বলা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ওই বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে নিয়ে এবং যেসব মন্ত্রণালয় বা সরকারি সংস্থার অর্থ আটকে রয়েছে— তারা সবাই একসঙ্গে বসে একটা রোডম্যাপ তৈরি করে দেবে। যাতে পাবলিক মানিটা ফেরত আসে। সরকারি কাজে লাগানো যায়।
তিনি বলেন, আমাদের ব্যাংকিং খাত যে কতটা ভঙ্গুর হয়েছে, এ খাত সংস্কারে কতটা সময় ও প্রচেষ্টা দিতে হচ্ছে, এটা তার একটি নমুনা।
কত দিনের মধ্যে অর্থ আদায় করা হবে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, কত দিনে এই অর্থ পাওয়া যাবে, আমরা নিজেরাও সেটা জানতে পারছি না। তবে খুব দ্রুতই মিটিংটা ডাকা হবে। কারণ বড় অঙ্কের সরকারি অর্থ আটকে রয়েছে। তবে ব্যাংকগুলোর বাস্তব অবস্থা হয়তো আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। তারা কত সময়ের মধ্যে ফেরত দিতে পারবে, কত অনুপাতে ফেরত আনতে পারবো, সেটা রোডম্যাপটা করা হলে বলা যাবে।