মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশু ও তার বোনকে রক্ষা করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে সোমবার (৯ মার্চ) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
আদালতে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আনেন ব্যারিস্টার মাহসিব হোসাইন।
শুনানি শেষে শিশুটির ছবি, ভিডিও ও পরিচয় শনাক্তকরণ সব বিষয়াদি দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়াও পুলিশ, সাইবার ক্রাইম ইউনিট, ডিবিসহ একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।
পাশাপাশি শিশুটি ও তার বোনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এক জন সমাজ কল্যাণ কর্মকর্তা নিযুক্ত করতে বলা হয়েছে। পরবর্তী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মামলার তদন্ত সম্পন্ন এবং সংশ্লিষ্ট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে ৬ মাসের মধ্যে বিচার শেষ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এসময় আদালত আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা লিখে এসেছেন (লিখিত আবেদন আকারে), এতে ভালো হয়েছে। নয়তো আমাদের স্বপ্রণোদিত হয়ে আদেশ দিতে হতো। মূলত আমাদের (আদালতের) কাজ হলো বার্তা দেয়া।
দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ আদালত অপর আদেশে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৪ ধারা অনুসরণের মাধ্যমে ভিকটিম ও পরিবারকে রক্ষা করতে বলেছেন।
আদালত বলেন, মানুষকে জানাতে হবে। ১৪ ধারা অনুসারে কোনটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই ধারাটির প্রচারে কাজ করতে হবে যে, এসব করা যাবেনা করলে শাস্তি হবে।
১৪ ধারায় বলা আছে, (১) এই আইনে বর্ণিত অপরাধের শিকার হইয়াছেন এইরূপ নারী বা শিশুর ব্যাপারে সংঘটিত অপরাধ বা তৎসম্পর্কিত আইনগত কার্যধারার সংবাদ বা তথ্য বা নাম-ঠিকানা বা অন্যবিধ তথ্য কোন সংবাদ পত্রে বা অন্য কোন সংবাদ মাধ্যমে এমনভাবে প্রকাশ বা পরিবেশন করা যাইবে যাহাতে উক্ত নারী বা শিশুর পরিচয় প্রকাশ না পায়।
(২) উপ-ধারা (১) এর বিধান লঙ্ঘন করা হইলে উক্ত লঙ্ঘনের জন্য দায়ী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের প্রত্যেকে অনধিক দুই বৎসর কারাদণ্ডে বা অনূর্ধ্ব এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
আদেশ শেষে আদালত মন্তব্য করেন, ঘটনাটি নিয়ে আমাদের বলার কোন ভাষা নেই, হয়তো থামাতে পারিনি। তবে ঘটনার পরের ঘটনা থামাতে কাজ করতে পারছি।
এদিকে এ ঘটনায় মামলা করেছেন শিশুটির মা।
মামলার এজাহারে তিনি অভিযোগ করেন, তার মেয়ের স্বামীর সহায়তায় মেয়ের শ্বশুর শিশুটিকে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি মেয়ের শাশুড়ি ও ভাসুর জানতেন। পরে ঘটনা ধামাচাপা দিতে শিশুটিকে হত্যাচেষ্টা চালায় অভিযুক্তরা। শনিবার সকালে বড় বোন ও বাবাকে দিয়ে মাগুরা সদর থানায় এজাহার পাঠান শিশুর মা। সেই অনুযায়ী বেলা তিনটার দিকে মামলা রেকর্ড হয়।
মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (৪)–এর ক/৩০ ধারায় ধর্ষণ ও ধর্ষণের মাধ্যমে আহত করার অভিযোগ করা হয়। মামলায় শিশুর বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাসুরকে আসামি করা হয়েছে। তারা আগে থেকেই পুলিশের হেফাজতে ছিলো।
পুলিশ ও শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী শিশুর বাড়ি জেলার শ্রীপুর উপজেলায়। কয়েক দিন আগে তার বড় বোনের (শ্বশুর) বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলো। গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার বোনের শাশুড়ি। পরে শিশুটির মা হাসপাতালে যান। ওই দিন দুপুরেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার রাতেই পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শুক্রবার রাতে শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়।
মাগুরার হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, তাৎক্ষণিক পরীক্ষা করে দেখা গেছে, শিশুটির গলায় একটা দাগ আছে। মনে হচ্ছে, কিছু দিয়ে চেপে ধরা হয়েছিল। শরীরের বেশ কিছু জায়গায় আঁচড় আছে। তার যৌনাঙ্গে রক্তক্ষরণ হয়েছে।
শিশুর সবশেষ অবস্থার কথা জানিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান শনিবার গণমাধ্যমকে বলেন, শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক। ভেন্টিলেটর যন্ত্রের সাহায্যে তার শ্বাসপ্রশ্বাস চলছে।
তিনি বলেন, পাশবিক নির্যাতনের কারণে শিশুটির যৌনাঙ্গে ক্ষত রয়েছে। তার গলার আঘাত গুরুতর।