ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সংবাদ সম্মেলনে দুই পক্ষের সংঘর্ষে
কমপক্ষে দশজন আহত হয়েছে। ২৪
ঘন্টার মধ্যে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে
সংগঠনটির একাংশের নেতাকর্মীরা। সেই
সঙ্গে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে কলেজ ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিতও ঘোষণা করেছেন তারা।
ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে
ক্যাম্পাস থেকে বের না করা পর্যন্ত অবস্থান চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে একটি পক্ষ।
আরেকটি পক্ষ শনিবার রাতের ঘটনার ভুক্তভোগী পক্ষের অংশকে ক্যাম্পাস থেকে বহিস্কারের
দাবি জানিয়ে অবস্থান করছে।
রোববার বিকেল পাঁচটার দিকে ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের
সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানার সংবাদ সম্মেলন
করছিলেন। এ সময় কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌসের সমর্থকদের সাথে তাদের
সংঘর্ষ বাধে।
দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় চলে ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া।
এতে দুই পক্ষেরই বেশ কয়েকজন কর্মী ও সমর্থক আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালায় কলেজ কর্তৃপক্ষ ও
পুলিশ। সংঘর্ষ ঠেকাতে মোতায়েন করা হয় বিপুল পুলিশ।
সংঘর্ষে সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও যুগ্ম সাধারণ
সম্পাদক রিতু আক্তার আহত হয়েছেন। তারা বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে
চিকিৎসাধীন। সন্ধ্যার পরে তাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসেন সংগঠনের সহপাঠী
ও শিক্ষকরা।
এর আগে রোববার দুপুরে আগের রাতের হামলার বিচার চেয়ে
এক সংবাদ সম্মেলন করেন সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস। এতে কলেজ ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে
উত্তেজনা শুরু হয়।
জান্নাতুল ফেরদৌসকে নির্যাতনের অভিযোগে সভাপতি
তামান্না জেসমিন রিভা, সম্পাদক রাজিয়া সুলতানা ও তাদের
অনুসারী সমর্থকদের মধ্যে কোন্দল তৈরি হয়। এরপর থেকে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার
ঘটনাও ঘটে।
জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আমরা তাদের কাছের মানুষ হতে
পারিনি। তাই নির্যাতন করা হচ্ছে। আমরা যারা তাদের ভুল ধরিয়ে দিই, তারাই শত্রু হয়ে গেছি। কারণে-অকারণে আমাদের হেনস্তা করা হচ্ছে। আগামী ২৪
ঘণ্টার মধ্যে এ ঘটনার বিচার না হলে আমি সুইসাইড করব।
ওপর মহলে বিষয়গুলো জানানোর পরও কোনো সুরাহা হয়নি
উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি আমার জায়গা থেকে ছাত্রলীগের ওপর
মহলে জানিয়েছি। আর সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য তো
ফোনই রিসিভ করেন না। তাদের কীভাবে জানাব?
তবে, জান্নাতুল ফেরদৌসকে কোনোরকম শারীরিক নির্যাতন
করা হয়নি বলে দাবি করেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী সহ-সভাপতি রুকসানা
আক্তার।
তিনি বলেন, জান্নাতুল ফেরদৌস
সাধারণ শিক্ষার্থীদের নানাভাবে হেনস্তা করেন। শিক্ষার্থীরাই এক হয়ে তাকে প্রতিহত
করেছে। আর কোনো প্রকার শারীরিক নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেনি।
ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সামিয়া আক্তার বৈশাখী বলেন, শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে জান্নাতুল আপা ক্যাম্পাসে ঢুকছিলেন। তখন আয়শা সিদ্দিকা হলের সামনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের প্রায় ১০-১৫ জন অনুসারী তার ওপর হামলা চালান।
বৈশাখী আরও বলেন, তার সঙ্গে দুইজন জুনিয়র মেয়ে ছিলেন। তাদের সবার ফোন কেড়ে নেয়া হয়। পরে সেগুলো বকুলতলায় বসে থাকা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে জমা দেয়া হয়। পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে থেকে আমি নিজ চোখে এ ঘটনা দেখেছি।
ছাত্রলীগের এই নেত্রী আরও বলেন, আমাদের প্রশাসন, শিক্ষক, হল প্রভোস্টসহ সংশ্লিষ্ট সবাই এ ঘটনা
সম্পর্কে সব কিছুই জানেন। কিন্তু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে তারা জব্দ। কারণ
এর আগে রিভা আপার এ বিষয়ে একটা অডিও ফাঁস হয়েছে।
বৈশাখী আরও বলেন, ছাত্রলীগ সভাপতি ও
সাধারণ সম্পাদকের দিন দিন এমন বৈরী আচরণ মেনে নেয়া যায় না। দিনের পর দিন এমন ঘটনা
ঘটতে থাকলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে আমাদের ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, আমাদেরকে ছাত্রলীগের প্রতিনিধি বানানো
হয়েছে শিক্ষার্থীদের সাহায্যের জন্য। সেখানে শিক্ষার্থীদের সাহায্য না করে যদি সিট
ও মেয়ে বাণিজ্যসহ নানা অপকর্ম করি, তবে তো ইডেন
কলেজেরও বদনাম হবে। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি বিষয়টা মানতে পারছি না।
দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, অভিযোগ, সংবাদ সম্মেলনের ঘটনায় রোববার সকাল থেকেই ইডেন কলেজের ক্যাম্পাস উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয় দুই পক্ষ। তবে কলেজের পরিস্থিতি নিয়ে গণমাধ্যমে কোন কথা বলতে রাজি হননি অধ্যক্ষ।
আরও পড়ুন: অবশেষে মুখ খুললেন রহিমা, বললেন অপহরণের শিকার
অন্য শিক্ষকরা জানান ঘটনা তদন্তে একাডেমিক কাউন্সিলের
পক্ষ থেকে কমিটি করা হয়েছে। একাডেমিক
কাউন্সিলের সদস্য জিয়াউল আহসান বলেন, তারা উভয় পক্ষকে শান্ত করে পরিস্থিতি
নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন।
ঘটনা তদন্তে দুই সদস্যের কমিটি করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কেন্দ্রীয় সহসভাপতি তিলোত্তমা শিকদার ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেনজির হোসেন নিশিকে নিয়ে এ তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
একাত্তর/আরবিএস
মন্তব্য
এই নিবন্ধটি জন্য কোন মন্তব্য নেই.