খুলনার আলোচিত ‘নিখোঁজ’ নারী রহিমা বেগম ফরিদপুর থেকে
উদ্ধারের পর তিন বেলায় তির ধরনের কথাবার্তা বললেও গেলো আট দিন যেই বাড়িতে ছিলেন
সেখানকার বাসিন্দাদের কাছে অন্যকথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছিলেন, জমি নিয়ে আশান্তির
কারণে তিনি পালিয়েছেন।
গেল ১৭ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার
সৈয়দপুর গ্রামে কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে আশ্রয় নেন রহিমা। কুদ্দুস মোল্লা
কর্মসূত্রে দীর্ঘদিন খুলনায় ছিলেন। তিনি খুলনার সোনালী জুট মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ
করতেন। তখন রহিমা বেগমের বাড়িতে ভাড়া ছিলেন।
বছর দশেক আগে ওই পাটকল বন্ধ হওয়ার পর কুদ্দুস
বোয়ালমারীর সৈয়দপুরে নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। সেই পূর্ব পরিচয়ের সূত্রেই রহিমা
সেখানে হাজির হন। ওই বাড়ির লোকজনকে রহিমা জানান, ছেলে–মেয়েদের ওপর রাগ করে তিনি ঘর
ছেড়েছেন। তিনি আর বাড়ি ফিরতে চান না। প্রতিবেশীদের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধের কথাও
বলেছিলেন তিনি।
১৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে একটি বাসে করে
রহিমা বেগম সৈয়দপুর বাসস্ট্যান্ড নামেন। তখন তার হাতে একটি ব্যাগ ছিলো। তিনি এসে
ওই বাজারের মুদি দোকানদার ইউনুস বিশ্বাসের কাছে মোতালেব মুসল্লির (কুদ্দুস মোল্লার
বাবা) বাড়ি কোথায় জানতে চান।
তখন ইউনুস বিশ্বাস রহিমা বেগমের পরিচয় জানতে চান।
রহিমা বেগম বলেন, তিনি বরিশাল থেকে এসেছেন, তিনি কুদ্দুস মোল্লার স্ত্রী হীরার চাচাতো বোন। তখন ইউনুস এক শিশুকে সঙ্গে
দিয়ে তাঁকে কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
কুদ্দুসের মেয়ে সুমাইয়া জানান, রহিমা বাড়িতে
স্বাভাবিক ছিলেন। নিয়মিত নামাজ পড়তেন এবং সবার সঙ্গে কথাবার্তা বলতেন। এ বাড়ি-ও
বাড়িতে বেড়াতে যেতেন। তার চোখের সমস্যা ছিলো, চোখ দিয়ে পানি পড়তও।
এ জন্য চিকিৎসকও দেখানো হয়েছে।
রহিমা বেগম সুমাইয়াকে বলেছেন, জমি নিয়ে প্রতিবেশীর সঙ্গে তাদের ঝামেলা চলছে। এজন্য জন্য তাকে মারধর করা
হয়েছে। তাই তিনি বাড়ি থেকে চলে এসেছেন। যদিও তার শরীরে মারপিট করার কোনো আঘাত
পাওয়া যায়নি। তবে তিনি শারীরিকভাবে দুর্বল ছিলেন।
গত শুক্রবার ফেসবুকে রহিমা বেগমের ছবি দেখার পর
শনিবার সকালে ইউপি সদস্য মোশারফ মোল্লাকে বিষয়টি জানান কুদ্দুসের ভাগনে জয়নাল ও
জামাতা নূর মোহাম্মদ। মোশারফ খুলনা সিটির দুই নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলের সহযোগিতায়
বিষয়টি খুলনা পুলিশকে জানান।
মোশারফ মোল্লার সঙ্গে কথা বলে পুলিশ নিশ্চিত হয় যে,
রহিমা বেগম সৈয়দপুর গ্রামে আছেন। পুলিশ রহিমা বেগমকে নজরে রাখতে বলেন। পুলিশ জানায়, যে কোনো মুহূর্তে তারা সৈয়দপুর আসবে। অল্প সময়ের মধ্যে খুলনার পুলিশ
সেখানেও পৌঁছেও যায়।
জয়নাল জানান, রাত সাড়ে ১০টার দিকে ইউপি সদস্য মোশারফ
তাকে ফোন করে বলেন খুলনা থেকে লোকজন এসেছে। এরপর খুলনা মহানগর পুলিশের এডিসি আবদুর
রহমানের সঙ্গে একজন নারী পুলিশ পুলিশ সদস্যসহ চার–পাঁচজন কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে
প্রবেশ করেন।
এডিসি গিয়ে রহিমার সামনে দাঁড়ান। তাকে বলেন, আপনি আমাকে চিনেছেন, আমি আবদুর রহমান। এ সময় রহিমাকে আরও কিছু প্রশ্ন করেন
তিনি। তবে কোনো উত্তরই রহিমা দেননি। পুলিশ আসার আগেও তিনি সবার সঙ্গে গল্প
করছিলেন। পুলিশ দেখে তিনি চুপ হয়ে যান।
পরে রহিমা বেগমকে নিয়ে যান পুলিশ সদস্যরা। এ সময় কুদ্দুস মোল্লার স্ত্রী হীরা বেগম, ছেলে আল আমিন ও কুদ্দুসের ভাইয়ের স্ত্রী রাহেলা বেগমকেও নিয়ে যায় পুলিশ।
আরও পড়ুন: রহিমার নিখোঁজ নাটকের পুরোটাই সাজানো?
কুদ্দুস মোল্লার বাড়িটি একটি টিনের চৌচালা ঘরবিশিষ্ট।
বাড়িতে চারটি কক্ষ রয়েছে। যার একটি কক্ষে রহিমা বেগম থাকতেন। নূর মোহাম্মদ জানান, রহিমা প্রথমে একাই কক্ষে থাকতেন। তবে শুক্রবার রহিমা বেগমের বিষয়টি জানার
পর হীরা বেগম তার সঙ্গে থাকতেন।
গত ২৭ আগস্ট রাত ১০টার দিকে খুলনার দৌলতপুরের
মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার বাসার উঠানের নলকূপে পানি আনতে যান রহিমা বেগম।
এরপর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন তিনি।
পরদিন তার মেয়ে আদুরী আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা
ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় অপহরণ মামলা করেন। এ মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে
পুলিশ। মায়ের সন্ধান চেয়ে ঢাকায় মানববন্ধনের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে দৌড়ঝাঁপ করে
আসছিলেন সন্তানেরা।
একাত্তর/আরবিএস
মন্তব্য
এই নিবন্ধটি জন্য কোন মন্তব্য নেই.