বিশ্বকাপ ফুটবলের সবগুলো আসরে খেলা একমাত্র দল ব্রাজিল। শিরোপা জিতেছে রেকর্ড পাঁচবার। হলুদ নীল জার্সিধারীরা প্রতিটি বিশ্বকাপ খেলতে আসে একটি মাত্র লক্ষ্য নিয়ে। আর সেটি হলো শিরোপা। এর নিচে আর কিছুতেই ভাবতে পারে না সেলেকাওদের সমর্থকরা। কাতারেও নেইমারদের কাছ থেকে একই প্রত্যাশা।
সেই প্রত্যাশার সঙ্গে তাল মিলিয়েই এবারের বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছে তিতের শিষ্যরা। নিজেদের প্রথম ম্যাচে ধরাশায়ী করেছে পেন্টাজয়ীরা। ইউরোপের অন্যতম শক্তিশালী আর কঠিন দল হিসাবে আসরে খেলতে আসা সার্বিয়াকে ধরাশায়ী করেছে দুই শূন্য গোলো। সবগুলোই এসেছে রিচার্লিসনের পা থেকে। এরমধ্যে তার করা বাইসাইকেল কিক গোল এখনো ভাইরাল হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে নেট দুনিয়া থেকে ফুটবলপ্রেমীদের মুখে মুখে। বলা হচ্ছে আসরের সেরা গোল।
এমন জয়ের পর এবার ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ সুইজারল্যান্ড। মহাদেশীয় আসরে সুইসরা এরিমধ্যে লড়িয়ে দলের খ্যাতি পেয়েছে। আর কিছু না পারুক, দলটি যে কারো ভাতে ছাই ফেলে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। গেল আসরেও ব্রাজিলের গ্ৰুপেই ছিলো সুইসরা এবং শেষ ম্যাচে ড্র করে দুই দলই দ্বিতীয় পর্ব নিশ্চিত করে নেয়। এবার সুইসরা ছেড়ে কথা বলবে না, সেটা বলেই দেয়া যায়।
আসর শুরু হবার আগে আসরের কালো ঘোড়া হিসাবে বিবেচিত ছিলো সার্বিয়া। কিন্তু ব্রাজিলের নান্দনিক আক্রমণের মুখে ম্যাচ শেষে সার্বিয়াকে খুবই সাধারণ মানের একটি দল মনে হয়েছে। খেলা শুরুর বাঁশি বাজা থেকে শেষ পর্যন্ত কোন পর্যায়ে ব্রাজিলের সঙ্গে তাল মেলাতে পারেনি। বলকান দলটিকে শেষ পর্যন্ত হারতে হয় দুই গোলে।
এ জয়ের ফলে ব্রাজিল টানা আট ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে। ২০২১ সালের কোপা আমেরিকা আসরে আর্জেন্টিনার সাথে হারের পর ব্রাজিল আর কোন ম্যাচে হারেনি। শেষ আট ম্যাচে ব্রাজিল গোল করেছে ২৮টি। সার্বিয়ার বিপক্ষে দুই গোলে জিতলেও হতে পারতো আরো বেশি। সুযোগ যেমন হারিয়েছে, তেমনি সার্বিয়ার গোলরক্ষক ভেনজা মিলিনকোভিচ একাই ব্রাজিলকে অপেক্ষায় রেখেছেন অনেক সময়। পোস্টে ২৪টি শট নিলেও ব্রাজিল গোল পেয়েছে দুইটি।
অন্যদিকে সুইজারল্যান্ড নিজেদের প্রথম ম্যাচে ক্যামেরুনের বিপক্ষে অনেক বেশি গোছানো ছিলো। ম্যাচ জয় পেলেও উদ্ভাসিত কোন ধরনের নৈপুণ্যে দেখাতে পারেনি। তবে বিশ্বের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক ইয়ান সোমারকেও তেমন কোন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়নি। ক্যামেরুনের খেলাতেও ছিলো না লড়াইয়ের মনোভাব।
নতুন ম্যানেজার মুরাত ইয়াকিনের অধীনেও সুইসরা ধারাবাহিক ভালো খেলছে। তবে আগের রক্ষণাত্মক কৌশল থেকে বেরিয়ে এসেছে তারা। আগে পেছনে পাঁচ জন রাখতো সুইসরা। এবার খেলছে চারজন নিয়ে। অর্থাৎ কোচ ইয়াকিন আক্রমণে আরও শক্তি বাড়িয়ে খেলাতে চাইছেন।
ইউরোপের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের শেষ ছয় ম্যাচে সুইসরা মাত্র একটি গোল হজম করেছে। বিশ্বকাপ শুরুও করেছে জয় দিয়ে কোন গোল না খেয়েই। ফলে ব্রাজিলকে যে সুইসরা কঠিন সময় উপহার দেবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। যেমনটা তারা গেলবার দিয়েছিলো। ম্যাচটি ড্র হয়েছিল ১-১ গোলে।
ক্যামেরুনকে হারিয়ে নিজেদের শেষ চার মাচেই জয় ধরে রেখেছে সুইজারল্যান্ড। এরমধ্যে স্পেন ও পর্তুগালের মতো দলকে হারিয়েই কাতারে এসেছে তারা। তাই ব্রাজিলকে হারাতে পারলে তাদের সামনে বিশ্ব আসরের অভিজাত দলে ঢুকে যাওয়ার সুযোগ থাকছে, যা হাতছাড়া করতে চাইবে না সুইসরা।
ক্যামেরুনের বিপক্ষে সুইসদের জয়ের নায়ক ছিলেন ব্রিল এমবোলো। যার জন্ম ক্যামেরুনেই। তাই গোল করেও বিশ্ব আসরে উৎসবের সাগরে নিজেকে ভাসাতে পারেননি তিনি। তাই মনে করা হচ্ছে ব্রাজিলের বিপক্ষে তিনি সেই কষ্ট দূর করতে চাইবেন।
আরও পড়ুন: জাপান বেদনার পর আশা বাঁচিয়ে রাখলো জার্মানি
এদিকে, ব্রাজিল দ্বিতীয় ম্যাচে পাচ্ছে না নেইমার ও দানিলোকে। ফলে পরিবর্তিত একাদশ নিয়ে মাঠে নামবে সেলেকাওরা। আক্রমণে দেখা যেতে পারে ফ্রেডকে। আর দানিলোর পরিবর্তে সুযোগ হতে পারে দানি আলভেজের, যিনি ২০১৪ সালের পর আবারো কোন বিশ্বকাপ ম্যাচে সুযোগ পাচ্ছেন। আবার রিয়েল মাদ্রিদের এডার মিলিতাওকে ডান প্রান্তের রক্ষণে দেখা যেতে পারে।
ইউরোপে বাজির বাজারে ব্রাজিলই ফেবারিট। তবে সবচেয়ে বেশি দর আছে ড্র ফলের ওপর। আর সুইসদের পক্ষে যারা বাজি রাখছে, তারা জিতলে এক রাতেই ধনী হয়ে যেতে পারেন। অন্য এক হিসাবে ব্রাজিলের জয়ের সম্ভাবনা ৬৬ শতাংশ। আর ড্রয়ের সম্ভাবনা ২১ শতাংশ। আর সুইসদের জয়ের সম্ভাবনা ১৩ শতাংশ।
ব্রাজিলের সম্ভাব্য একাদশ: অ্যালিসন, এডার মিলিতাও, থিয়াগো সিলভা, মারকুইনহোস, অ্যালেক্স সান্দ্রো, কাসিমেরো, ফ্রেড, পাকুয়েতা, রাফিনাহ, রিচার্লিসন, ভিনিসিয়াস জুনিয়র।
সুইজারল্যান্ডের সম্ভাব্য একাদশ: সোমার, উইডমার, আকানজি, এলভেডি, রডরিগুয়েজ, ফ্রিউলার, ঝাকা, সোউ, সাকিরি, এমবোলো, ভারগাস।
একাত্তর/এসি
মন্তব্য
এই নিবন্ধটি জন্য কোন মন্তব্য নেই.