প্রত্যাশার পারদ যেভাবে তুঙ্গে উঠিয়ে কাতার বিশ্বকাপ আসরে খেলতে এসেছিল ব্রাজিল, ঠিক সেভাবেই ধপ করে নিভে যায় তাদের হেক্সা মিশন। সেই কোয়ার্টার ফাইনালেই কাটা পরে সেলেকাওরা। টাইব্রেকারে হেরে যায় ক্রোয়েশিয়ার কাছে।
ব্রাজিল শেষ বারের মতো বিশ্বকাপের ট্রফি ছুঁতে পেরেছিল ২০০২ সালের জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া আসরে। সেবার ফাইনালে জায়ান্ট জার্মানিকে ২-০ গোলে হারিয়ে পঞ্চমবারের মতো শিরোপা ঘরে তুলে নেয় সেলেকাওরা।
রাশিয়া আসরে ব্রাজিলের মরণ হয় বেলজিয়ামের কাছে। আর এবার কাতারে হলো ক্রোয়েশিয়ার কাছে টাইব্রেকারে হেরে। ব্রাজিলের বিদায়ে যেমন বিশ্বকাপ বিবর্ণ হয়ে গেছে, তেমনি ব্রাজিল দলের মধ্যেও বয়ে যাচ্ছে একের পর এক ঝড়।
বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে পদত্যাগ করেন কোচ তিতে। এরপর একে একে আসতে থাকে দল থেকে খেলোয়াড়দের সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা। এই ধাক্কায় ভেতর থেকে বদলে যেতে শুরু করে ব্রাজিল।
কোচ তিতের উত্তরসূরি কে হবেন, তা এখনো জানা যায়নি। তবে ফেভারিট হিসাবে বেশ কয়েকজনের নাম সামনে আসছে। এখানে বলে রাখা ভালো, ব্রাজিল কখনো বিদেশি কোচের অধীনে খেলেনি।
কোচ তিতের অধীনে ব্রাজিল দল গেল ছয় বছর ধরে দারুণ ফর্মে ছিলো। এই সময়ে সেলেকাওরা ৮১ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ৬০টি ম্যাচেই জিতেছে। ড্র করেছে ১৫টি ম্যাচ। বিপরীতে হার একটি ম্যাচে। এই সময়ে গোল করেছে ১৭৪টি, খেয়েছে ৩০টি।
তাই, কোচ তিতে এবার ব্রাজিলকে বিশ্বকাপের শিরোপা এনে দেবেন, এমনটাই প্রত্যাশা ছিলো দেশটির ফুটবল পাগল মানুষদের। কিন্তু সেটি না হওয়ায় তিতেকে মুখোমুখি হতে হচ্ছে ব্যাপক সমালোচনা ও আলোচনার।
এই পরিস্থিতিতে পদত্যাগ ছাড়া আর অন্য কোন উপায় ছিলো না তিতের সামনে। শুধু তিনি নন, কোচিং শিবিরের আরো অনেকেই নতুন চাকরি খুঁজতে শুরু করেছেন। তিতের ছেলে ম্যাথিয়াস ও তার সহকারী ক্লেভার জেভিয়ারও দল ছেড়েছেন।
তিতের উত্তরসূরি হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন পালমেইরাসের কোচ এবেল ফেরেইরা, ফ্লুমিনেন্সের কোচ ফার্নান্দো ডিনিজ, ইন্টারন্যাশিওনালের কোচ মানো মানিজেস এবং ডরিভাল জুনিয়র।
ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশনের নতুন সভাপতি এডনালদো রডরিগুয়েকে খুব দ্রুতই নতুন কোচ হিসাবে কাউকে বেছে নিতে হবে। তবে দলের সমন্বয়ক হিসাবে তিনি আন্দ্রেস সানচেজকে নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন, সেটি অনেকটা নিশ্চিত।
নতুন সভাপতি জানিয়েছেন, নতুন কোচ নিয়োগ দিতে বিশ্বকাপ আসর শেষ হলেই তারা আলোচনার বসবেন। তবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ এক আভাস দিয়েছেন, সেটি হলো ব্রাজিল দলের কোচ দেশ থেকেই নির্বাচন করতে হবে, এমন ধরনের কোন কুসংস্কার তাদের নেই। যদি তার কথা সত্যি হয়, তাহলে পেপ গার্দিওলাকেও দেখা যেতে পারে ব্রাজিলের নতুন কোচ হিসেবে।
শুধু কোচ নয়, বদলে যাচ্ছে ব্রাজিলের ড্রেসিং রুমও। থিয়াগো সিলভা ও দানি আলভেসের বিদায় প্রায় নিশ্চিত। তারাও জানিয়েছেন, জাতীয় দলের হয়ে আর না খেলার কথা। নেইমারও একই সূরে কথা বললেও পরে বলেছেন, তিনি সময় নেবেন।
আরও পড়ুন: শাস্তির মুখে পড়ছে না আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা
নতুনদের মধ্যে রিচার্লিসন, এডার মিলিতাও, লুকাস পাকুয়েতা, ভিনিসিয়াস জুনিয়র ও রডরিগোরা এখন থেকে দলে আরো বেশি করে সুযোগ পাবেন। আবার অনেকেই বাদ যাবেন নৈপুণ্যের চুলচেরা বিশ্লেষণে।
তবে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ নেইমার। তিনি যেভাবে বলেছেন তার জাতীয় দলে খেলা নিয়ে, তাতে করে ব্রাজিল সমর্থকরা চিন্তায় আছেন। এমন কি মৃত্যুর প্রহর গুনতে থাকা পেলে পর্যন্ত নেইমারকে হলুদ নীল জার্সি না ছাড়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
তবে সব মিলিয়ে বলা যায়, ২০২৬ সালের বিশ্বকাপ আসরে এক নতুন ব্রাজিল দলকে দেখা যাবে। নতুন আর অভিজ্ঞদের মিশেলে সেই দলের কাছেও থাকবে একটাই প্রত্যাশা, সেটি হলো ষষ্ঠ শিরোপা।
একাত্তর/আরএ
মন্তব্য
এই নিবন্ধটি জন্য কোন মন্তব্য নেই.