যুদ্ধের দামামা শেষ। বিজয়ও এসেছে। এরপরও শান্তি ফেরেনি মনে। চারপাশে কেবল ধ্বংসযজ্ঞ, স্বজন হারানোর বেদনা। আশ্রয় হারানো সৈনিকদের চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ। তীর্থযাত্রী তিন তার্কিকের বয়ানে জীবনের অর্থ খোঁজার প্রয়াস, উঠে আসে ন্যায়-নীতি আর কঠোর কঠিন বাস্তবতা। অনেকটা দার্শনিক চিন্তা থেকে, স্থান কাল সময়ের ঊর্ধ্বে উঠে নাটকটির কাহিনী এগিয়েছে। যেখানে যুদ্ধের ভয়াবহতা আছে, আছে ধ্বংসের মাঝে দাঁড়িয়েও বেঁচে থাকার এক ধরণের আকুতি। আর এভাবেই এগিয়েছে ‘তীর্থযাত্রী’ নাটকের গল্প। জীবন থেমে থাকে না। এগিয়ে নিতে হয় বলে। তারও সফল চিত্রায়ন এই নাটক।
জনপ্রিয় অভিনেতা ও নির্মাতা তৌকির আহমেদের নির্দেশনায় নাটকটি মঞ্চস্থ হয়ে গেলো নিউইয়র্কের কুইন্স থিয়েটারে। শনিবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যায় লেখক হুমায়ূন কবিরের রচনায় ‘তীর্থযাত্রী তিনজন তার্কিক’ বইটি অবলম্বনে এই নাটকের মঞ্চায়নে ছিল জমকালো আয়োজন। মঞ্চজুড়ে ছিল অসাধারণ আলোছায়ার খেলা। পিনপতন নীরবতায় হলভর্তি মানুষ দেখলেন অসাধারণ একটি প্রযোজনা। আর নাটকটি পরিবেশন করে ‘নক্ষত্র’ এবং ‘বাংলা সংস্কৃতি কেন্দ্র’।
নাটকটিতে যারা অভিনয় করেছেন তারা নিউইয়র্কের বিভিন্ন নাট্য দলে কিংবা স্বাধীনভাবে কাজ করেন। মঞ্চে যারা দেখিয়েছেন দাপুটে কাজ, যা দর্শকদের অভিভূত করেছে। সেইসঙ্গে নাটকটির আয়োজনের ধরণেও ছিল ভিন্ন মাত্রা। যার সঙ্গীতায়োজনে ছিলেন পিন্টু ঘোষ ও বিপাশা হায়াত। সংলাপ নির্ভর নাটকের আবহসঙ্গীতের অপূর্ব ব্যবহারও নজর কেড়েছে সবার। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন স্থানে নাটকটির আরও মঞ্চায়নের পরিকল্পনা তাদের রয়েছে।
নাটক শেষে তৌকির আহমেদ বলেন, ‘নিউইয়র্কে এটি আমার দ্বিতীয় প্রযোজনা। এর আগে ২০০২ সালে আমি ‘ইচ্ছামৃত্যু’ নামে একটি প্রযোজনা করি। যেটা বাংলাদেশ থিয়েটার অব আমেরিকার সঙ্গে ছিল। নাটকটি বেশ জনপ্রিয়তা পায়, যার অনেকগুলো সফল মঞ্চায়ন হয়েছিল।’
তৌকির আহমেদ আরও বলেন, ‘এবার করছি নক্ষত্র এবং বাংলা সংস্কৃতি কেন্দ্রের আয়োজনে ‘তীর্থযাত্রী’। এটি একটি খুব চ্যালেঞ্জিং কাজ। কারণ এই বইটি হুমায়ুন কবিরের লেখা, খুবই বিখ্যাত। সেটিকে নাট্যরূপ নিয়ে মঞ্চে আনাটা সহজসাধ্য ছিল না। আমরা চেষ্টা করেছি। এটা একটা এক্সপেরিমেন্টাল কাজ। দর্শক এটি বেশ আগ্রহ ভরে গ্রহণ করেছেন।’
লেখক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমি খুবই আনন্দিত এমন একটি নাটকের সফল মঞ্চায়ন দেখে। স্বাভাবিকভাবে লেখক হিসেবে নাটকটিকে ঘিরে দর্শক যে ভালোবাসা দেখিয়েছেন, তাতে আমি ভীষণ খুশি। আসলে এটি অ্যাবসট্র্যাক্ট বা বিমূর্ত একটি বই। এটি মঞ্চে আনাটা ছিল অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ। খ্যাতিমান অভিনেতা ও নির্দেশক তৌকির আহমেদ অসাধারণভাবে কাজটি করেছেন। এই নাটকটিতে কয়েকটি ম্যাজিক্যাল মোমেন্ট ছিল। সবমিলিয়ে আমার কাছে মনে হচ্ছে খুব চমৎকারভাবেই কাজটি করা হয়েছে।’
এদিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নিউইয়র্কে গড়ে ওঠা সংগঠন বাংলা সংস্কৃতি কেন্দ্র। প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম উদ্যোক্তা বাশিরুল হক বলেন, ‘আমাদের কাজ হচ্ছে প্রবাসে বেড়ে ওঠা আগামী প্রজন্মের মধ্যে বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির আলো ছড়িয়ে দেয়া। তারই অংশ হিসেবে আমাদের প্রযোজনা ‘তীর্থযাত্রী’ নাটকটি।’
নাটকটিতে অভিনয় করেছেন জাকির আহমেদ রনি, কামাল হোসেন, আহমেদ নাসিম, শুক্লা রায়, মিল্টন আহমেদ, লায়লা ফারজানা, হীরা চৌধুরী, মমিনুল বসুনিয়া, প্রতিমা সুমি, মিলাদুন নাহার এ্যানী, এ শরীফ হোসেন, হৃদয় অনির্বাণ খন্দকার ও মার্জিয়া স্মৃতি। প্রযোজনা অধিকর্তা হিসেবে ছিলেন বাশিরুল হক এবং আবু হুসাইন বকুল।
যন্ত্রসঙ্গীতে সহায়তা দিয়েছেন সাত্তার মাহমুদ, চামেলি গোমেজ, আল আমিন বাবু এবং শহীদ হাসান। কণ্ঠ দিয়েছেন তাহরিনা পারভীন প্রীতি। চমৎকার আলোকসজ্জা করেছেন শামীম মামুন লিটন এবং জিয়াউল হক। সেট নির্মাণের কাজ করেছেন আইনুল ইসলাম অপু এবং হৃদয় অনির্বাণ খন্দকার। এ ছাড়া ব্যবস্থাপনায় ছিলেন রহমতউল্লাহ তুহিন।
একাত্তর/এসজে
মন্তব্য
এই নিবন্ধটি জন্য কোন মন্তব্য নেই.