জ্বালানির ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে নতুন গ্যাস কূপ অনুসন্ধানের পাশাপাশি বিদ্যমান কূপগুলো খননসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত বাংলাদেশসহ বৈশ্বিক জ্বালানি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকি হয়ে দাঁড়ানোর প্রেক্ষাপটে জ্বালানি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য আমরা বিভিন্ন বিদ্যমান গ্যাস কূপ খননের পাশাপাশি নতুন কূপ অনুসন্ধানের পদক্ষেপ নিয়েছি। খবর বাসসের।
তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত গ্যাসোলিনের বৈশ্বিক আমদানি বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে এবং গ্যাস ও তেলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে।
কর্মকর্তা জানান, তবে বাংলাদেশের জ্বালানিখাতে বর্তমান সংকট সাময়িক এবং বাংলাদেশ শিগগিরই তা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকার কূপ খনন/ওয়ার্ক-ওভারের মাধ্যমে দুটি নতুন গ্যাস কূপ-শ্রীকাইল পূর্ব-১ এবং জকিগঞ্জ-১ আবিষ্কার করেছে, সিলেট-৯ কূপ খনন সম্পন্ন হয়েছে এবং বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনের জন্য গ্যাস পাওয়া গেছে।
এ ছাড়া পাঁচটি কূপ খননের কাজ চলছিল এবং ছয়টি কূপের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ৩ হাজার ব্যারেল ধারণক্ষমতার ক্যাটালিটিক রিফর্মিং ইউনিটের জন্য প্রসেস প্ল্যান্ট/মিনি রিফাইনারি স্থাপন প্রকল্প শেষ হয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, সরকার ২০০৯ থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ৩,১৭৬,০৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীনে ১৪৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।
তিনি বলেন, ২২ হাজার ২৬৬.৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪২টি প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে। সরকার শিল্প কারখানার কার্যক্রম স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে সারা দেশে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও এলপিজির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ বজায় রাখতে সক্ষম।
নসরুল বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, নতুন ৫৩৪ কিলোমিটার ট্রান্সমিশন পাইপলাইন এবং ১৫৭ কিলোমিটার ডিস্ট্রিবিউশন পাইপলাইন বসানোর কাজ চলছে এবং ৬২০ কিলোমিটার তেল সরবরাহের পাইপলাইন স্থাপন করা হচ্ছে। ডবল পাইপলাইন এবং ১৯টি ওয়েলহেড কম্প্রেসারসহ একক পয়েন্ট মুরিং ইনস্টলেশনের কাজ চলছে।
এছাড়া গ্যাস সরবরাহের জন্য ৪.৭০ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হচ্ছে এবং দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক সিসমিক জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। মহেশখালী এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ডেভেলপার নির্বাচন এবং ৩.০ মিলিয়ন মেট্রিক টন ক্ষমতা সম্পন্ন ইআরএল ইউনিট-২ স্থাপনের কাজ চলছে।
অভ্যন্তরীণ জ্বালানি চাহিদা মেটাতে সহায়তা করার জন্য সরকার গ্যাস কূপ খনন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা করছে। বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করর্পোরেশনের (পেট্রোবাংলা) গৃহীত পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৫ সাল থেকে ৪৬টি নতুন কূপ থেকে প্রতিদিন প্রায় ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।
৪৬টি নতুন কূপের মধ্যে ১৭টি অনুসন্ধান কূপ, ১২টি উন্নয়ন কূপ এবং ১৭টি ওয়ার্কওভার কূপ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। কূপ খননের প্রস্তুতির জন্য পেট্রোবাংলা সারাদেশে দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক সিসমিক জরিপ করবে।
আগামী ছয় বছর পর বড়পুকুরিয়া খনি থেকে ৪.৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলনের চুক্তিও করেছে সরকার। জার্মানির সঙ্গে মধ্যপাড়া গ্রানাইট খনির চুক্তির মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে।
মাল্টি ক্লায়েন্ট সার্ভে (গভীর এবং অগভীর সমুদ্রে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য) এবং অফশোর বিডিং রাউন্ডের জন্য উৎপাদন বণ্টন চুক্তি (পিএসসি) আপডেট করা হয়েছে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান জানান, পেট্রোবাংলা ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৬টি গ্যাস কূপ খননের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এসব কূপ পর্যায়ক্রমে খনন করা হবে।
২০২৩ সালে, মোট ১৫টি নতুন কূপ (বাপেক্স ৫, এসজিএফএল ৬, বিজিএফসিএল ৪) প্রতিদিন আরও ২১৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: মার্কিন উদ্যোক্তাদের বিপুল বিনিয়োগের আহবান প্রধানমন্ত্রীর
২০২৪ সালে, ১৪টি নতুন কূপ (বাপেক্স ৬, এসজিএফএল ৪, বিজিএফসিএল ৪) প্রতিদিন ১৭৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
২০২৫ সালে খনন করা চূড়ান্ত ১১টি কূপ (বাপেক্স ৪, এসজিএফএল ৩, বিজিএফসিএল ৪) প্রতিদিন ১৬৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
একাত্তর/আরএ
মন্তব্য
এই নিবন্ধটি জন্য কোন মন্তব্য নেই.