আর মাত্র কয়েক প্রহরের অপেক্ষা। রোববার দুপুর দুটোয় মেলর্বোন ক্রিকেট
গ্রাউন্ডে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের শিরোপা লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে পাকিস্তান ও
ইংল্যান্ড। এই ম্যাচকে ঘিরে তাসমান পাড়ে পারদ চড়তে থাকলেও বৃষ্টিতে অনাসৃষ্টির সম্ভবনাও
জোরালো হচ্ছে।
স্থানীয় হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস, ম্যাচের দিন শতভাগ বৃষ্টির সম্ভাবনা।
বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হতে পারে ২৫ মিলিমিটার। দুপুরের পর পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা
রয়েছে। পানি জমতে পারে শহরের বিভিন্ন এলাকায়। তাই ফাইনালে বল গড়াবে কিনা, তা নিয়ে সংশয়
থেকেই যাচ্ছে।
সেক্ষেত্রে রিজার্ভ ডে ভরসা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোনও কারণে
খেলা যদি নির্ধারিত দিনে সম্পূর্ণ না হয়, তাহলে রিজার্ভ ডে’তে তা হবে। অর্থাৎ পরের
দিন আবার জয়ের খোঁজে ঝাঁপানোর সুযোগ পাবেন বাবর আজম-জস বাটলাররা। কিন্তু সোমবারও
বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
টি টোয়েন্টির নিয়ম অনুযায়ী ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণে কমপক্ষে পাঁচ ওভার করে দুই দলকে ব্যাট করতে হয়। যদিও ফাইনালের ক্ষেত্রে ওভার সংখ্যা বাড়িয়ে ১০ করা হয়েছে। তাই রোববার যদি ম্যাচ শুরু হয়ে বৃষ্টির জেরে শেষ না হয়, তাহলে সোমবার বাকি অংশ হবে।
আর যদি বৃষ্টির কারণে ম্যাচ অমীমাংসিত থাকলে তাহলে দুই দলকে যুগ্মভাবে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হবে। সেক্ষেত্রে কোন মীসাংসা ছাড়াই ট্রফি ভগাভাগি করে নেবে পাকিস্তান ও ইংল্যান্ড। যা কোন দলেই সমর্থকদের কাছে গ্রহণযোগ্য তো নয়ই, হতাশারও বটে।
রোরবারের ফাইনাল বিশ্বজুড়ে ক্রিকেট সমর্থকদের প্রায় ত্রিশ বছর পেছনে
ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, যেবার ওয়ানডে বিশ্বকাপে দুরন্ত-দূর্বার এক ইমরান খানের নেতৃত্বে
পাকিস্তান ক্রিকেট দল প্রথম বারের মতো ক্রিকেটের কোনও শিরোপা জিতেছিলো।
সেবারও পাকিস্তান আসরের প্রথম ম্যাচ হেরে গিয়েছিল ভারতের বিপক্ষেই।
গ্রুপ পর্বের শেষদিন এক পয়েন্টে এগিয়ে থেকে সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত করেছিল। এখানেই
শেষ না, পাকিস্তান সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকেই হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেছিলো।
আর, মেলবোর্নের ফাইনালে ২২ রানে হারিয়েছিলো ইংল্যান্ডকে। এবারও কি
তাই হবে, এমন প্রশ্নের সরাসরি কোন জবাব নেই। তবে, সেমিতে ইংল্যান্ড যেভাবে ভারতকে হারিয়েছে,
তাতে ফাইনালে বাটলারদের এগিয়ে রাখলে, খুব বেশি বাড়িয়ে বলা হবে না।
দুই ইংলিশ ওপেনার জস বাটলার ও অ্যালেক্স হেলস দারুণ ফর্মে আছেন। বিশেষ
করে সেমিতে যেভাবে এডিলেড দাপিয়েছেন তাতে করে যে কোন প্রতিপক্ষের বোলারদের মাথা ব্যাথার
কারণ হতে পারেন। ফলে ফাইনালে ইংল্যান্ডের প্রধান নিয়ামক এই দুজনের ব্যাট।
ফাইনালের মঞ্চে এ দুই ওপেনারের বড় দায়িত্ব থাকবে পাকিস্তানের ফাস্ট
বোলিং লাইন আপকে সামলানো। যেখানে ইনজুরি ফেরত শাহীন শাহ আফ্রিদি আছেন দুর্দান্ত ফর্মে।
এই বিশ্বকাপে শাহীন শাহ আফ্রিদি ধীরে ধীরে নিজের ফর্ম ফিরে পেয়েছেন।
এই বছর এশিয়া কাপেই প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলা নাসিম
শাহ এবার ডেথ ওভার বোলিংয়ে নিজেকে অনন্য পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। স্লোয়ার বাউন্সারের দিক
থেকে বিশেষত, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে শেষ পাঁচ ওভারে মাত্র দুটি চার হজম
করেছে।
অন্যদিকে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিতে শত রানের জুটি গড়েছেন পাকিস্তানের
আলোচিত ওপেনিং জুটি- বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। বাবর-রিজওয়ান, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে
তিনটি শত রানের জুটি গড়েছেন। টুর্নামেন্টের ইতিহাসে এ রেকর্ড আর কোনও জুটির নেই।
ফাইনালের ঠিক আগের দিন শনিবার আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের
অধিনায়ক বাবর আজম বলেন, ভারতের মতো শক্তিশালী দলকে হারিয়ে ইংল্যান্ডের ফাইনালে আসাই
প্রমাণ করে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দল। ফাইনালে জিততে আমাদের শক্তি পেস আক্রমণকে
কাজে লাগাব।
অন্যদিকে, ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জস বাটলার বলেন, দারুণ সব ফাস্ট বোলার
তৈরি করার ইতিহাস আছে পাকিস্তানের। এই দলও ব্যতিক্রম নয়। পাকিস্তানের ফাইনালে আসার
পেছনে তাদের বড় ভূমিকা আছে। ওদের কাছে আমরা কঠিন চ্যালেঞ্জই আশা করছি।
চলতি বিশ্বকাপের দুই ফাইনালিস্ট দল এর আগে একবার করে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের
শিরোপা জিতেছে। ২০০৯ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের দ্বিতীয় আসরে শিরোপা
জেতে পাকিস্তান। লর্ডসের ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে আট উইকেটে হারায় পাকিস্তান।
২০১০ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের তৃতীয় আসরের ফাইনালিস্ট ছিলো ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্রিজটাউনের কিংস্টন ওভালের ফাইনাল ম্যাচে সাত উইকেটে জয় পেয়েছিলো ইংল্যান্ড। টি-টোয়েন্টিতে ২৮ বার মুখোমুখি হয়েছে দুই দল।
আরও পড়ুন: রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির কবলে জার্মানি
এরমধ্যে ১৮টিতে জিতেছে ইংলিশরা। নয়টিতে জয় পাকিস্তানের। ১টি ম্যাচ
পরিত্যক্ত হয়। ২০০৬ সালের ২৯ আগস্ট পাকিস্তান-ইংল্যান্ডের প্রথম দেখা হয় ক্রিকেটের
ক্ষুদ্র এ সংস্করণে। বিষ্ট্রলের ওই ম্যাচে ১৩ বল বাকি রেখে পাঁচ উইকেটের জয় পায় পাকিস্তান।
বিশ্বকাপের আগে গেল অক্টোবরে সবশেষ টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি হয়েছিল
দু’দল। পাকিস্তানের মাটিতে সাত ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ৪-৩ ব্যবধানে জিতেছিলো ইংল্যান্ড।
আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুইবারের দেখায় প্রতিবারই জয় পেয়েছে ইংল্যান্ড।
এক যুগ পর আবারও বিশ্বকাপে মুখোমুখি এই দু’দল। এবারের মঞ্চটা অন্য
যে কোনো বারের তুলনায় অনেক বড়। বিগত সময়ে পরিবর্তন এসেছে দু’পক্ষেই। ৯২ থেকে যেমন অনুপ্রেরণা
খুঁজছে পাকিস্তান, ঠিক তেমনই আগের জয় ইংলিশদের ভালো করার পেছনে বড় হাতিয়ার।
একাত্তর/আরবিএস
মন্তব্য
এই নিবন্ধটি জন্য কোন মন্তব্য নেই.