ঢাকা ০৫ জুন ২০২৩, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

লেখা হলো আরেকটি ইংলিশ রূপকথা

একাত্তর অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২২ ১৩:৩৯:২৬ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২২ ২০:২৭:৪৪
লেখা হলো আরেকটি ইংলিশ রূপকথা

মেলবোর্নে ১৯৯২ -এর ওয়ানডে বিশ্বকাপের স্মৃতির পুনরাবৃত্তি করতে চেয়েছিলো পাকিস্তান। সেবার এই ভেন্যুতেই ইংল্যান্ডকে ফাইনালে হারিয়ে ওয়ানডেতে নিজেদের ইতিহাসে একমাত্র বিশ্বকাপ শিরোপা জেতে বাবর আজমরা

অপরদিকে মুখে ইংল্যান্ডের কেউ প্রতিশোধ শব্দটা উচ্চারণ না করলেও পাকিস্তানকে হারিয়ে পূর্বসূরিদের সেই পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতেই মাঠে নেমেছিলো বাটলার-হেলসরা। অবশেষে তাই হলো। পাঁচ উইকেটে নিজেদের হিসেব ঠিকঠাক মিটিয়ে নিলো বাটলার বাহিনী। আর এরই মাধ্যেম তিন দশকের পুরনো সেই ক্ষতে কিছুটা প্রলেপ দিলো ইংলিশরা।

টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড

গ্রুপ পর্বে বিদায়ের শঙ্কা থেকে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের ফাইনালে পা রেখেছিল পাকিস্তান। ঠিক পঞ্চাশ ওভারের ৯২ আসরের মতো। প্রতিপক্ষ হিসেবে ইংল্যান্ডকে পেয়ে যাওয়ায় ৩০ বছর আগের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি দেখাতে চেয়েছিলেন বাবর আজমরা। কিন্তু ইতিহাস ফিরে আসেনি! বরং ৫ উইকেটের সহজ জয়ে পাকিস্তানের হৃদয় ভেঙে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইংল্যান্ড।

রোববারের (১৩ নভেম্বর) ম্যাচে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ২০ ওভারে পাকিস্তান ৮ উইকেট হারিয়ে তুলতে পারে মাত্র ১৩৭ রান।


জবাবে ১ ওভার হাতে রেখেই ইংল্যান্ড বনে যায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন।

ম্যাচের শুরুতে ভালোই চাপে পড়েছিলো ইংল্যান্ড। ওপেনার অ্যালেক্স হেলস ১ রান করে শাহিন শাহ’র প্রথম ওভারেই ফিরে যান।

তিনে নামা ফিল সল্ট ১০ রানের ইনিংস খেলেন। অধিনায়ক ও দলের সেরা ব্যাটিং ভরসা জস বাটলার দলকে আশা দিলেও ১৭ বলে তিন চার ও এক ছক্কায় ২৬ রান তুলে সাজঘরে ফেরেন। ৫.৩ ওভারে ৪৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে তখন কিছুটা বিপদে ইংল্যান্ড।

এরপর পেস অলরাউন্ডার বেন স্টোকস ৪৯ বলে পাঁচটি চার ও এক ছক্কায় ৫২ রানের দারুণ ইনিংস খেলে ওই চাপ সামলে দলকে এক ওভার হাতে থাকতে জয় এনে দিয়েছেন।

হ্যারি ব্রুক ২৩ বলে ২০ রানের ছোট ইনিংস খেললেও গুরুত্বপূর্ণ একটি জুটি দিয়েছেন।

স্পিন অলরাউন্ডার মঈন আলী ১৩ বলে তিন চারে ১৯ রানের আত্মবিশ্বাসী ইনিংস খেলে দলের জয়ের পথ সহজ করেন। দেশকে দ্বিতীয় টি-২০ বিশ্বকাপের শিরোপা এনে দেন।

টুর্নামেন্টসেরা ও ফাইনালের ম্যাচসেরা স্যাম কারেন


৯ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা দিয়েছিল আইসিসি। সেখান থেকে নির্বাচক ও সমর্থকদের ভোটে প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট হয়েছেন ইংল্যান্ডের স্যাম কারেন। এছাড়া ফাইনালে দুর্দান্ত বোলিংয়ের জন্য ম্যাচসেরাও হয়েছেন তিনি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

পাকিস্তান: ২০ ওভারে ১৩৭/৮ (রিজওয়ান ১৫, বাবর ৩২, হারিস ৮, শান ৩৮, ইফতিখার ০, শাদাব ২০, নাওয়াজ ৫, ওয়াসিম ৪, শাহিন ৫*, হারিস ১*; স্টোকস ৪-০-৩২-১, ওকস ৩-০-২৬-০, কারান ৪-০-১২-৩, রশিদ ৪-১-২২-২, জর্ডান ৪-০-২৭-২, লিভিংস্টোন ১-০-১৬-০)।

ইংল্যান্ড: ১৯ ওভারে ১৩৮/৫ (বাটলার ২৬, হেলস ১, সল্ট ১০, স্টোকস ৫২*, ব্রুক ২০, মইন ১৯, লিভিংস্টোন ১*; শাহিন ২.১-০-১৩-১, নাসিম ৪-০-৩০-০, হারিস ৪-০-২৩-২, শাদাব ৪-০-২০-১, ওয়াসিম ৪-০-৩৮-১, ইফতিখার ০.৫-০-১৩-০) মঈন বোল্ড।

মঈন বোল্ড

১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ঘুরে দাঁড়ালেন ওয়াসিম। তার ইয়র্কারে বোল্ড হয়েছেন মঈন আলী।

ব্রুককে ফিরিয়ে জুটি ভাঙলেন শাদাব

নিজের শেষ ওভার করতে এসে সফল শাদাব খান। চাপ বাড়ছিল, ফুললেংথে পেয়ে তুলে মারতে গিয়েছিলেন হ্যারি ব্রুক। তবে বল ছিল অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে, ঠিক যেভাবে মারতে চেয়েছিলেন হয়নি।


ওয়াইড লং অফে ছুটে এসে ভালো ক্যাচ নিয়েছেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। স্টোকসের সঙ্গে ব্রুকের জুটি থেমেছে ৩৯ রানে। ফিল্ডিং করতে গিয়ে চোট পেয়েছেন আফ্রিদি, ফিজিওর সঙ্গে মাঠ ছেড়েছেন তিনি।

১০ ওভারে ৭৭

১০ ওভার শেষে পাকিস্তানের স্কোর ছিল ২ উইকেটে ৬৮ রান। ১০ ওভার শেষে ইংল্যান্ড তুলেছে ৩ উইকেটে ৭৭ রান।

বাটলারকেও ফেরালেন রউফ


এ চ্যানেলে তখন থেকেই ভুগছিলেন বাটলার। অবশেষে ধরা পড়লেন তাতে। হারিস রউফের অফ স্টাম্পের বাইরে গুডলেংথ থেকে বাড়তি বাউন্সের বলে খোঁচা দিলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক, ১৭ বলে ২৬ রান করার পর।

পাওয়ারপ্লেতে পাকিস্তানের তৃতীয় আঘাত, রউফের দ্বিতীয়!

ফিরলেন সল্ট

হারিস রউফের ইনটু দ্য উইকেট ডেলিভারিটা টেনে মারতে গিয়েছিলেন সল্ট, মিডউইকেটে সরাসরি ক্যাচ গেছে ইফতিখারের হাতে।


হেলস ফেরার পর বাটলার ও হেলস চড়াও হয়েছিলেন, পাওয়ারপ্লেতে দ্বিতীয় উইকেট নিয়ে লড়াইয়েই থাকলো পাকিস্তান।

প্রথম ওভারেই উইকেট হারালো ইংল্যান্ড

শাহিন শাহ আফ্রিদির সিম আপ ডেলিভারি, ফুললেংথে পড়ে ঢুকল ভেতরের দিকে। এমন বলের কোনো জবাব ছিল না অ্যালেক্স হেলসের কাছে।

প্রথম ওভারের শেষ বলে বোল্ড হয়েছেন ইংল্যান্ডের সেমিফাইনালের নায়ক। ইংল্যান্ড প্রথম উইকেট হারিয়েছে ৭ রান তুলতেই।

পূর্বসূরিদের প্রতিশোধ নিতে ইংল্যান্ডের লক্ষ্য ১৩৮

সাবধানী শুরুর পর মাঝে ভালোই এগিয়েছিলো পাকিস্তান। কিন্তু শেষের দিকে চাপে পড়তে হয় বাবর-নাওয়াজদের।

শেষ ৪ ওভারে উঠেছে মাত্র ১৮ রান।

জর্ডানের করা শেষ ওভারের পঞ্চম বলে টপ এজে চার পেয়েছেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। শেষ ওভারে পাকিস্তান তুলতে পেরেছে মাত্র ৬ রান। ফাইনালে পাকিস্তান আটকে গেছে ১৩৭ রানে।


জয়ের জন্য এবং ১৯৯২ -এর পূর্বসূরিদের প্রতিশোধ নিতে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ১৩৮।

ওয়াসিমও আউট

জর্ডানকে তুলে মারতে গিয়ে লং অনে লিভিংস্টোনের হাতে ধরা পড়েন ওয়াসিম। ইনিংসে লিভিংস্টোনের এটি তৃতীয় ক্যাচ। 

কারেনের তৃতীয়

ফুললেংথ, সেটিতে ফ্লিক করেছিলেন নেওয়াজ। তবে সরাসরি মিডউইকেটে ক্যাচ গেছে লিভিংস্টোনের হাতে। কারেন পেয়েছেন তৃতীয় উইকেট, পাকিস্তান হারিয়েছে সপ্তম উইকেট।

ফিরলেন শাদাব

আরেকটি বল, আরেকবার তুলে মারার চেষ্টায় ব্যর্থ ব্যাটসম্যান। ক্রিস জর্ডানের শিকার এবার শাদাব খান।

ডেথ ওভারে এসে পথ হারাচ্ছে পাকিস্তান, ১২৩ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারালো তারা।

মাসুদকে ফেরালেন কারান


ইনটু দ্য পিচ, এমসিজির বড় স্কয়ার বাউন্ডারির দিকে শট খেলার আমন্ত্রণ। মাসুদ ধরা পড়লেন তাতেই। ১৭তম ওভারে আসা স্যাম কারেনকে পুল করেছিলেন, মিডউইকেটে লিয়াম লিভিংস্টোনের হাতে ধরা পড়েছেন ২৮ বলে ৩৮ রান করে। পঞ্চম উইকেট হারিয়েছে পাকিস্তান।

ইফতিখার আউট

অফ স্টাম্পের বাইরে গুডলেংথ থেকে লাফিয়ে ওঠা বল। ইফতিখার আহমেদ খোঁচা দিলেন তাতেই। বেন স্টোকস ফিরতি স্পেলে এসেই সফল। ৬ বল খেলে কোনো রান না করেই ফিরে গেলেন ইফতিখার, চতুর্থ উইকেট হারিয়ে এমসিজিতে চাপে পাকিস্তান!


বাবরকেও ফেরালেন রশিদ

আদিল রশিদের গুগলিতে ভড়কে গেছেন বাবর আজম। শেষ মুহূর্তে ব্যাট চালিয়েছিলেন, লিডিং-এজে ক্যাচ গেছে রশিদের কাছেই। ডানদিকে ডাইভ দিয়ে সেটি নিয়েছেন রশিদ। প্রথম ওভারের প্রথম বলে উইকেট নিয়েছিলেন, তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেও নিলেন।


পাকিস্তান অধিনায়ক ফিরেছেন ২৮ বলে ৩২ রান করে।

রশিদের শিকার হারিস

আক্রমণে এসেই দলকে উইকেট এনে দিলেন আদিল রশিদ। এই লেগ স্পিনারকে ছক্কার চেষ্টায় বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন মোহাম্মদ হারিস।

অষ্টম ওভারে রশিদের হাতে বল তুলে দেন জস বাটলার। অধিনায়ককে নিরাশ করেননি তিনি। তার ঝুলিয়ে দেওয়া বলে উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে উড়িয়ে মারেন হারিস। কিন্তু টাইমিং হয়নি ঠিকঠাক। লং-অনে সহজ ক্যাচ নেন বেন স্টোকস।

রিজওয়ানকে ফেরালেন কারেন

মার্ক উড নেই, স্যাম কারেনের হাতে তাই বাড়তি দায়িত্ব। প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দিলেন তিনিই। অফ স্টাম্পের বাইরের বল স্টাম্পে ডেকে এনেছেন রিজওয়ান। টুর্নামেন্টে এ নিয়ে তৃতীয়বার ইনসাইড-এজে বোল্ড হলেন পাকিস্তান ব্যাটসম্যান।


২৯ রানে প্রথম উইকেট হারাল পাকিস্তান।

ঘটনাবহুল প্রথম ওভার

শুরুর বলটাই নো করেছেন বেন স্টোকস, টুর্নামেন্টে ইংল্যান্ডের এটি প্রথম নো। পরের বলটি আবার হয়েছে ওয়াইড, তবে এরপর ফ্রি হিটে কোনো রান আসেনি।


চতুর্থ বলে রানআউট হতে নিয়েছিলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান, মিডঅফ থেকে সিঙ্গেল নিতে গিয়ে। ক্রিস জর্ডান—ইংল্যান্ডের সেরা ফিল্ডার -লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি। স্টোকসের শুরুর ওভারে এসেছে ৮ রান।

পেসারদের জন্য সহায়ক উইকেট

উইকেট দেখে পেসারদের জন্য সহায়ক মনে হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক পেসার ইয়ান বিশপের।


তিনি বলেন, উইকেটে কিছু শুষ্ক ঘাস দেখা যাচ্ছে। তবে কিছু জায়গায় সবুজ অংশও রয়েছে। উইকেট খুবই শক্ত। শর্ট বল এখানে ভালো হতে পারে। অন্য যেকোন মাঠের চেয়ে এখানে পাওয়ার প্লে’তে বেশি সুইং দেখা গেছে।

টস জিতলো ইংল্যান্ড, ব্যাটিংয়ে পাকিস্তান


মেলবোর্নে রোববার (১৩ নভেম্বর) টসে জিতেছেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক জস বাটলার। ম্যাচে রয়েছে বৃষ্টির শঙ্কা। মেঘলা আবহাওয়ায় পাকিস্তানকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছেন তিনি।

পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম অবশ্য বলেছেন, টস জিতলে তিনিও নিতেন বোলিং।

অপরিবর্তিত পাকিস্তান ও ইংল্যান্ড একাদশ

চোট থেকে পুরোপুরি সেরে উঠতে পারেননি পেসার মার্ক উড ও টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান দাভিদ মালান। সেমি-ফাইনালের মতো ফাইনালেও এই দুই জনকে ছাড়াই নামতে হচ্ছে ইংল্যান্ডকে। ফলে একাদশে কোনো পরিবর্তন আসেনি।


অপরদিকে ইংলিশদের মতো একাদশ অপরিবর্তিত রেখেছে পাকিস্তানও।

পাকিস্তান একাদশ: মোহাম্মদ রিজওয়ান, বাবর আজম (অধিনায়ক), মোহাম্মদ নাওয়াজ, মোহাম্মদ হারিস, শান মাসুদ, ইফতিখার আহমেদ, শাদাব খান, মোহাম্মদ ওয়াসিম, নাসিম শাহ, হারিস রউফ, শাহিন শাহ আফ্রিদি।


ইংল্যান্ড একাদশ: জস বাটলার (অধিনায়ক), আলেক্স হেলস, বেন স্টোকস, হ্যারি ব্রুক, লিয়াম লিভিংস্টোন, মইন আলি, স্যাম কারান, ক্রিস ওকস, ক্রিস জর্ডান, আদিল রশিদ, ফিল সল্ট।


একাত্তর/আরএ

মন্তব্য

এই নিবন্ধটি জন্য কোন মন্তব্য নেই.

আপনার মন্তব্য লিখুন

Nagad Ads