যুদ্ধের মধ্যেই ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হচ্ছে রাশিয়া ও পশ্চিমারা। যার মধ্যে অন্যতম টাইটানিয়াম পদার্থ।
যুদ্ধে ইউক্রেন জয়ী হলে তাদের খনিজ সম্পদে পশ্চিমাদের কৌশলগত অবস্থান পোক্ত হবে। আর রাশিয়া নিয়ন্ত্রণে নিলে বিশ্বে কৌশলগত সম্পদের উপর মস্কোর আধিপত্য আরো বাড়বে।
মার্কিন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের তালিকায় টাইটানিয়ামের অবস্থান ৩৫ নাম্বারে। স্টিলের মতো শক্তিশালী এ পদার্থ, ওজনে ৪৫ শতাংশ হালকা।
স্টিল সাড়ে তিনশো ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা সহ্য করতে পারলেও টাইটানিয়ামের সহ্য ক্ষমতা এক হাজার থেকে সাড়ে এগারোশো ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত।
ক্ষয়রোধ ও প্রতিরোধ ক্ষমতার দিক থেকেও টাইটানিয়াম চমৎকার। এসব কারণে মহাকাশ শিল্পে টাইটানিয়াম ব্যাপকহারে ব্যবহার হয়।
যা বিমানের কাঠামো ও ইঞ্জিনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই ধাতুর জন্য ইউরোপ এবং আমেরিকাকে নির্ভর করতে হয় রাশিয়া ও চীনের উপর।
এই কারণে, রাশিয়ার উপর ব্যাপক হারে নিষেধাজ্ঞা দিলেও, সব সময়ই টাইটানিয়ামকে বাইরে রাখে পশ্চিমারা। কারণ রাশিয়ার টাইটানিয়াম ছাড়া অচল হবে বহু দামি শিল্প।
ইউরোপের কোম্পানি এয়ারবাসের বিমানকাঠামোর ১৪শতাংশ টাইটানিয়াম রাশিয়ার। ব্যবহার হয় ল্যান্ডিং গিয়ার, পাইলন, সংযুক্তিকরণ, দরজার আশপাশসহ অন্যান্য অংশে।
মার্কিন কোম্পানি বোয়িংয়ের বিমানকাঠামোর ১৫ শতাংশ রুশ টাইটানিয়াম। যদিও মার্চে বোয়িং জানায়, তারা আর রুশ টাইটানিয়াম ব্যবহার করছে না।
টাইটানিয়ামের জন্য রাশিয়ার উপর যুক্তরাষ্ট্রের নির্ভরতা স্নায়ুযুদ্ধের যুগে তাকালেই স্পষ্ট। ১৯৫০ সালে সিআইএ অনেকগুলো শেল কোম্পানি গঠন কোরে, ব্ল্যাকবার্ড স্পাই প্লেন তৈরির জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে গোপনে টাইটানিয়াম ক্রয় করেছিলো।
যুক্তরাষ্ট্র কি এখন ইউক্রেনের টাইটানিয়াম চাচ্ছে? গত বছর মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ ইউক্রেনের টাইটানিয়াম ব্যবহারের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের নির্দেশ দেয়।
মার্কিন কংগ্রেসের একজনকর্মী জানান, ইউক্রেন পৃথিবীর বিরল খনিজ সম্পদের গুরুত্বপূর্ণ ভাণ্ডার। রাশিয়া-চীনের বিকল্প হতে পারে কিয়েভ। ইউক্রেনকে সমর্থন নিয়ে পশ্চিমে চলমান বিতর্কের জবাবও খনিজ সম্পদ।
যুদ্ধে জয়ী হলে ইউক্রেনের টাইটানিয়ামে অবস্থান পোক্ত হবে পশ্চিমের। রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করলে বিশ্বের কৌশলগত সম্পদে মস্কোর আধিপত্য আরো শক্তিশালী হবে।
বর্তমানে ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে যুদ্ধ চলমান। যেখানে কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের খনিজ সম্পদ রয়েছে। কয়েকটি খনি ইতোমধ্যে দখলে নিয়েছে রাশিয়া।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারাও কিয়েভকে টাইটানিয়ামের বিকল্প উৎস হিসাবে উপস্থান করছেন। দেশটি বলছে, তাদের টাইটানিয়াম ও লিথিয়াম রয়েছে। এই খাতে বাণিজ্যের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।
ফরেন পলিসি ইনসটিটিউটের সিনিয়র ফেলো স্টেফান ব্ল্যাংক জানান, যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটলে কয়েকমাসের মধ্যে পশ্চিমাদের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টাইটানিয়াম দিতে পারবে ইউক্রেন।
ইউক্রেনকে যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্রের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত পুনর্গঠন করতে হবে। যা উভয়পক্ষের জন্য বিশাল সুযোগ।
একাত্তর/এআর
মন্তব্য
এই নিবন্ধটি জন্য কোন মন্তব্য নেই.