ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ান সেনারা ইউক্রেনীয়দের ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে বলে স্বীকার করেছেন সাবেক এক রুশ সেনা কর্মকর্তা। তিনি জানিয়েছেন, নৃশংস জিজ্ঞাসাবাদের সময় ইউক্রেনীয় পুরুষদের গুলি করা হয় এবং ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়।
এক একান্ত সাক্ষাৎকারে বিবিসিকে এসব বিস্ফোরক তথ্য জানিয়েছেন কনস্ট্যান্টিন ইয়েফ্রেমভ, যিনি বেশ কয়েকবার সেনাবাহিনী ছেড়ে দেয়ার চেষ্টা করে অবশেষে ইউক্রেনে ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানান। চাকরিচ্যুত হওয়ার পর তিনি রাশিয়া থেকে পালিয়ে আসেন।
দক্ষিণ ইউক্রেনের একটি স্থানে 'প্রায় এক সপ্তাহ ধরে জিজ্ঞাসাবাদ, নির্যাতন অব্যাহত ছিল' জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতি দিন, প্রতি রাতে, কখনও কখনও দিনে দুবারও এসব নির্যাতন চালানো হতো।
ইয়েফ্রেমভের সরবরাহ করা ছবি এবং সামরিক নথি ব্যবহার করে বিবিসি নিশ্চিত করেছে যে তিনি যুদ্ধের শুরুর দিকে মেলিতোপোল শহরসহ জাপোরিঝিয়া অঞ্চলে ছিলেন।
সাক্ষাৎকারে ইয়েফ্রেমভ জানান, ২০২২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি রাশিয়া অধিকৃত ক্রিমিয়া অঞ্চলে পৌঁছান। তিনি ৪২তম মোটরাইজড রাইফেল ডিভিশনের একটি ডি-মাইনিং ইউনিটের প্রধান ছিলেন এবং সাধারণত রাশিয়ার উত্তর ককেশাসের চেচনিয়ায় নিযুক্ত থাকতেন। তাকে এবং তার লোকদের 'সামরিক মহড়ায়' অংশ নিতে ক্রিমিয়ায় পাঠানো হয়েছিল।
তিনি জানান, রাশিয়ান সৈন্যদের তাদের ইউনিফর্মে শনাক্তকরণ চিহ্নবিশিষ্ট টেপ লাগাতে দেখেন তিনি। এছাড়াও সামরিক সরঞ্জাম এবং যানবাহনে 'জেড' অক্ষর আঁকতে শুরু করেন তারা। কয়েকদিনের মধ্যে 'জেড' হয়ে ওঠে ক্রেমলিনের তথাকথিত 'বিশেষ সামরিক অভিযানের' প্রতীক।
ইয়েফ্রেমভ দাবি করেছেন যে তিনি এর সাথে যুক্ত হতে চাননি।
তিনি বলেন, তিনি চাকরি ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন ও তার কমান্ডারের কাছে গিয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। তিনি তাকে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে নিয়ে গেলেন যিনি ইয়েফ্রেমভকে বিশ্বাসঘাতক এবং কাপুরুষ বলেন।
'আমি আমার বন্দুক রেখে দেই, ট্যাক্সিতে উঠি এবং চলে যাই। আমি চেচনিয়ায় আমার ঘাঁটিতে ফিরে যেতে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করতে চেয়েছিলাম। তারপর আমার কমরেডরা আমাকে একটি সতর্কবার্তা দিয়ে টেলিফোন করেছিল। একজন কর্নেল আমাকে সেনাবাহিনী পরিত্যাগের জন্য ১০ বছর পর্যন্ত কারাগারে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং তিনি পুলিশকে সতর্ক করেছিলেন', বলেন তিনি।
পরে এক সামরিক আইনজীবীর পরামর্শে তিনি আবার ক্রিমিয়ায় ফেরত যান।
আরও পড়ুন: দশকের সবচেয়ে বড় ধর্মঘট দেখলো ব্রিটেন
কনস্ট্যান্টিন ইয়েফ্রেমভের দল এপ্রিল মাসে মেলিটোপোলের উত্তর-পূর্বে বিলমাক শহরে একটি 'লজিস্টিক হেডকোয়ার্টার' পাহারা দিতে যান। সেখানে, তিনি বলেছেন যে তিনি ইউক্রেনীয় বন্দীদের সাথে জিজ্ঞাসাবাদ ও দুর্ব্যবহার প্রত্যক্ষ করেছেন। সাক্ষাৎকারে তিনি সেসব নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন।
মে মাসের শেষে চেচনিয়ায় ফিরে ইয়েফ্রেমভ তার পদত্যাগপত্র জমা দেন। তবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে কাপুরুষ এবং বিশ্বাসঘাতক আখ্যা দিয়ে তাকে বরখাস্ত করেন।
পরে একটি রাশিয়ান মানবাধিকার সংস্থার সহায়তায় তিনি রাশিয়া ত্যাগ করেন।
একাত্তর/এসজে
মন্তব্য
এই নিবন্ধটি জন্য কোন মন্তব্য নেই.