৩৩৯ রানের লক্ষে খেলতে নেমে শুরু থেকেই চাপে থাকা আয়ারল্যান্ডের আর মাজা তুলে দাঁড়ানো হয়নি। প্রথম পাওয়ার প্লে’র পর নিয়মিত উইকেট হারাতে থাকা আইরিশরা শেষ পর্যন্ত গুড়িয়ে গেলো মাত্র ১৫৫ রানে। আর এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ জয় পেলো ১৮৩ রানে।
এদিকে বড় এই জয়ে নতুন এক রেকর্ডের পালক জুড়ে গেলো বাংলাদেশের মুকুটে। এর আগে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ১৬৯ রানের জয় ছিল ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়। কিন্তু সিলেটে ১৮৩ জয়ে বাংলাদেশের খাতায় লেখা হলো নতুন আরেক রেকর্ড।
বাংলাদেশের দেওয়া বড় এই লক্ষে আয়ারল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ স্কোর করেন আইরিশ মিডল অর্ডার ব্যাটার জর্জ ডকরিল (৪৫)। এছাড়া স্টিফেন ধোয়েনি (৩৪), পল স্টার্লিং (২২) ও কার্টিস ক্যাম্পার ১৬ রান করেছেন। তাছাড়া বাকি ছয় ব্যাটার দুই অঙ্কের ঘর ছুঁতে পারেননি।
বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে এবাদত হোসেন চারটি, নাসুম আহমেদ তিনটি, তাসকিন আহমেদ দুটি এবং সাকিব আল হাসান একটি উইকেট নেন।
প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন নবাগত তৌহিদ হৃদয়।
শত পার না হতেই আইরিশ শিবিরের অর্ধেক সাজঘরে
৩৩৯ রানের বড় লক্ষে খেলতে নেমে প্রথম পাওয়ার প্লে’র পরই বিপদে পড়েছে আয়ারল্যান্ড। ১১ দশমিক দুই ওভার থেকে শুরু করে ১৭ দশমিক এক ওভার খেলতেই প্রথম সারির পাঁচ ব্যাটার হারিয়েছে আয়ারল্যান্ড।
এবাদতের টানা জোড়া আঘাতের পর এবার জোড়া আঘাত হেনেছেন আরেক পেসার তাসকিন আহমেদ। লোরকান টুকারের উইকেট নিয়েছেন তিনি। আয়ারল্যান্ডের দলীয় সংগ্রহ তখন পাঁচ উইকেটে ৭৬।
এরপর আক্রমণে ফিরিয়ে আনা হয় নাসুম আহমেদকে। ২৩ দশমিক চার ওভারে কার্টিস ক্যাম্পারকে (১৬) এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তিনি।
বর্তমানে ব্যাট করছেন জর্জ ডকরিল (১৯) ও গেরেথ ডিলান (০)
২৪ ওভার শেষে ছয় উইকেট হারিয়ে আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ ১০৬।
আইরিশ শিবিরে সাকিবের পর এবাদতের জোড়া আঘাত
৩৩৯ রানের লক্ষে খেলতে নেমে শুরুতে ধীরগতির ব্যাটিং শুরু করে আয়ারল্যান্ড। তবে প্রথম থেকেই আইরিশ ওপেনারদের চেপে ধরেছেন মুস্তাফিজ ও তাসকিন। প্রথম ছয় ওভারে তারা কোনো উইকেট না হারালেও রান উঠে মাত্র ২৩।
তবে পাওয়ার প্লে’র শেষ চার ওভারে কিছুটা বিপজ্জনক হয়ে উঠেন দুই ওপেনার স্টিফেন ধোয়েনি ও পল স্টার্লিং। তাতে প্রথম পাওয়ার প্লে শেষে তাদের স্কোর গিয়ে দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ৫১।
তবে ১২তম ওভারের দ্বিতীয় বলে সাকিবের শিকার হন ধোয়ানি। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেয়ার আগে ৩৮ বলে ৩৪ রান করেন তিনি। দলের সংগ্রহ তখন ৬০ রানে এক উইকেট।
এরপর ১২ দশমিক দুই ওভারে এবাদতের শিকার হন পল স্ট্রার্লিং। তিনিও উইকেটের পেছনে ক্যাচ তুলে দেন। এর আগে ৩১ বলে ২২ রান সংগ্রহ করেন স্টালিং। তখন দলের সংগ্রহ গিয়ে দাঁড়ায় দুই উইকেটে ৬২ রান।
এর ঠিক দুই ওভার পর আবারও আঘাত হানেন এবাদত। এবার তার শিকার হন হ্যারি ট্যাক্টর। তিনিও ক্যাচ তুলে দেন উইকেটের পেছনে। আট বল খেলে তিন রান সংগ্রহ করে বিদায় নেন তিনি। তখন স্কোরবোর্ডে আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ তিন উইকেট হারিয়ে ৬৮ রান।
এদিকে এবাদতের পর পর আঘাতের পর আক্রমণের প্রান্তে আনা হয় আরেক পেসার তাসকিনকে। যথারীতি এই স্পেলে তিনিও নিরাশ করেননি। থিতু হওয়ার আগেই অ্যান্ডুকে বোল্ড করেন তাসকিন। ব্যক্তিগত পাঁচ রানে যখন তিনি প্যাভিলিয়নের পথে, আইরিশদের স্কোর তখন চার উইকেট হারিয়ে ৭৪ রান।
বর্তমানে ব্যাট করছেন লোরকান ও ক্যাম্পার।
আইরিশদের ৩৩৯ রানের লক্ষ্য দিলো বাংলাদেশ
সাকিবের সাত রানের আক্ষেপের পর আবারও ‘হৃদয় ভাঙলেন’ নবাগত তৌহিদ হৃদয়। তিনিও কাঙ্খিত সেঞ্চুরি থেকে ছিলেন মাত্র আট রান দূরে। তবে এই জুটি প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে বাংলাদেশকে মজুত জায়গায় দাঁড় করে দিয়ে গেছেন। মূলত তাদের কল্যাণে আয়ারল্যান্ডকে ৩৩৯ রানের লক্ষ দিয়েছে বাংলাদেশ।
তবে শেষের আগে মুশফিক ঝড়ও বড় অবদান রেখেছে স্কোরবোর্ডকে ৩০০ ঘর টপকাতে। মুশফিক মাত্র ২৬ বল খেলে সংগ্রহ করেছেন ৪৪ রান। এর মধ্যে তিনটি ছয় ও তিনটি চারে মার।
সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে বল করার সিদ্ধান্ত নেয় আয়ারল্যান্ড।
শুরুতে তামিম ইকবাল (৩) সাজঘরের পথ দেখেন, লম্বা হয়নি লিটন (২৬) ও শান্তর (২৫) ইনিংস। তবে সাকিব ও হৃদয় গড়েন অসাধারণ এক জুটি। এই জুটির সংগ্রহ ২১৬ রান। এর মধ্যে সাকিব আল হাসান ৯৩ রানে আউট হন।
এর পর হৃদয়কে সঙ্গে নিয়ে মারকুটেভাবে ব্যাট চালাতে থাকেন মুশফিক। দলের সংগ্রহ যখন ২৯৫ তখন প্যাভিলিয়নে ফেরত যান মুশফিক। কিন্তু ততক্ষণে তিনি বাংলাদেশের স্কোরবোর্ড বড় লক্ষের দিকে এগিয়ে দিয়েছেন।
এরপর ওয়ানডেতে অভিষেক হওয়া হৃদয় ফেরেন ৯২ রান করে। তবে থেমে থাকেনি রানের চাকা। ইয়ারিস আলী, তাসকিন আহমেদ, নাসুম আহমেদ ১৫০ বেশি স্ট্রাইট রেটে রান তুলতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত দলীয় সংগ্রহ গিয়ে দাঁড়ায় ৩৩৮। আর এই রান তুলতে তাদের খরচ হয় আটটি উইকেট।
আইরিশ বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল ছিলে গ্রাহা হুম। তিনি ১০ ওভারে ৬০ রান দিয়ে নিয়েছেন চারটি উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর- বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩৩৮/৮ (হৃদয় ৯২, সাকিব ৯৩, মুশফিক ৪৪, তামিম ৩, লিটন ২৬, শান্ত ২৫, ইয়াসির আলী ১৭, তাসকিন ১১, নাসুম আহমেদ ১১)।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বড় সংগ্রহের দিকে বাংলাদেশ
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে শক্ত অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ওপেনার তামিম লিটনের দ্রুত বিদায়ের পর ওয়ানডেতে অভিষেক হওয়া তৌহিদ হৃদয়কে নিয়ে ২১৬ রানের এক দারুণ জুটি গড়েন সাকিব। তবে কাঙ্খিত সেঞ্চুরির কাছে গিয়েও ছোঁয়া হয়নি সাকিবের। ব্যক্তিগত ৯৩ রানে প্যাভিলিয়নের ফিরেছেন তিনি।
তবে সাকিবের বিদায়ের পর মুশফিককে নিয়ে ধুমধাড়াক্কা ব্যাট চালিয়ে যাচ্ছেন হৃদয়। তিনি অপরাজিত আছেন ৬৬ রানে। আর মাঠে নেমেই মারকুটে ভূমিকায় থাকা মুশিফিক ব্যাট করছেন ১৭ রান নিয়ে। ৯ বল খেলে দুটি ছক্কা হাঁকিয়েছেন মুশফিক।
প্যাভিলিয়নে ফেরত যাওয়াদের মধ্যে তামিম ৩, লিটন ২৬ ও শান্ত ২৫ রান করেছেন।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪১ ওভারে ২৪৮ রান। এরই মধ্যে বাংলাদেশের খরচ হয়ে গেছে চারটি উইকেট।
এর আগে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে বল করার সিদ্ধান্ত নেয় আয়ারল্যান্ড।
একাত্তর/এসি
মন্তব্য
এই নিবন্ধটি জন্য কোন মন্তব্য নেই.