রাশিয়া ইউক্রেন-যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে বেড়েছে খাদ্য ও জ্বালানির দাম। পাশাপাশি, করোনা মহামারি এবং জলবায়ু বদলের কারণে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির মুখে পড়েছে বিশ্বের অর্থনীতি।
এরই মধ্যে শুরু হয়েছে রমজান মাস। তাই, দামবৃদ্ধি এবং গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের ঘাটতিতে ক্ষতিগ্রস্ত এশিয়া থেকে মধ্যপ্রাচ্য। আফ্রিকা থেকে আমেরিকা-ব্রিটেনের মুসলমানরা।
বিশ্বখাদ্য কর্মসূচি জানায়, ২০২২ সালে ৩৪৯ মিলিয়ন মানুষ চরম খাদ্য অনিরাপত্তায় ছিলো। ১৪০ মিলিয়ন মানুষের প্রয়োজন পড়ে খাদ্য সহায়তা।
অপুষ্টির শিকার সবচেয়ে বেশি এশিয়া-আফ্রিকায়। ২০২৩ সালেও এ সংখ্যা কমার আশা নেই। বর্তমানে গরীবের আয়ের ৫০ শতাংশের বেশি অর্থ খাবার কিনতে খরচ।
কমাতে বাধ্য হচ্ছে খাদ্য-পণ্যসেবা গ্রহণ। দামের কারণে রমজানে ঐতিহ্যবাহী খাবার বাদ দিতে হচ্ছে রোজাদারদের। কিনতে হচ্ছে কমদামী বিকল্পপণ্য।
বিদেশি সৈন্য, যুদ্ধ, খরা প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নান সংকটে জর্জরিত মধ্যপ্রাচ্য। ১২ বছর ধরে গৃহযুদ্ধে সিরিয়া। ৯০ শতাংশের বেশি নাগরিক দরিদ্র সীমার নিচে।
ফেব্রুয়ারিতে ভূমিকম্পে সিরিয়া-তুরস্কে মারা যায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষ। সেই তুরস্কে এখন মুদ্রাস্ফীতি ৫৫ শতাংশ। ভূমিকম্পের আগ থেকেই ধুঁকছিল দেশটির অর্থনীতি।
মিশরে ফেব্রুয়ারিতে মুদ্রাস্ফীতি ছিলো ৩২ শতাংশ। তিন মাস আগে থেকে ৩০ শতাংশ ছাড়ে দরিদ্রদের আটা, গোশত, পাস্তা দিচ্ছে সরকার।
খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ৬১ দশমিক আট শতাংশ। রমজান উদযাপন উপলক্ষে ফানুস কিনতে হিমশিম খান বাসিন্দারা।
ওই অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি লেবাননের জনগণের। রমজানে খাবার টেবিল থেকে গণজমায়েত সব জায়গায় জীবনধারণ ব্যয়ের সীমাহীন বৃদ্ধির প্রভাব দৃশ্যমান।
চার বছর ধরে গভীর আর্থিক, রাজনৈতিক, সামাজিক সংকটে বৈরুত। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি শরণার্থী আশ্রিত সেখানে। জানুয়ারিতে মুদ্রাস্ফীতি ছোঁয় ১২৩ শতাংশ।
ইফতার-রাতের খাবার জোগাড়ে ব্যর্থ হচ্ছেন ৮০ শতাংশ মানুষ। জিনিসপত্রের দাম দ্বিগুণ এমন কি তিন-চারগুণও বেড়ে যাচ্ছে। নাগরিকরা সবকিছু কিনতে পারে না।
সংকটে জর্জরিত পাকিস্তানের ২০ কোটি মানুষ। মুদ্রাস্ফীতি অর্ধশতকের মধ্যে সর্বোচ্চ। ভয়াবহ আর্থিক চ্যালেঞ্জের মুখে তারা। গত বছর বন্যায় অধিকাংশ কৃষি জমি তলিয়ে যায়।
তীব্র হয় খাদ্য সংকট। ২০ কেজি আটা আগে ৬০০ রুপিতে পাওয়া গেলেও এখন ১১শ রুপি। জনগণের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে ৪০ শতাংশ।
এ পরিস্থিতির জন্য রাজনৈতিক অস্থিরতাকেও দায়ী করা হচ্ছে। দেশটির নাগরিকরা বলছেন,
সব জিনিসের দাম বেশি। সকাল-সন্ধ্যা পরিশ্রম করে শ্রমিকরা ২৩০ রুপি আয় করে।
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মুসলমান বাস করে ইন্দোনেশিয়ায়। ৭০ শতাংশ ভোক্তা জানান, রমজানে খরচ কমানোর চিন্তা করছেন। জানুয়ারিতে মুদ্রাস্ফীতি ছিলো ৫.৪৭ শতাংশ।
বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, রমজানে গত বছরের চেয়ে বিস্কুট, রুটি, ভোজ্যতেলের চাহিদা ২০ শতাংশ কমবে। মুদ্রাস্ফীতির হার ৯ শতাংশের কিছু কম।
যা গত কয়েক দশকে দেখা যায়নি। ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা দেশটিতে আশ্রয়ে। রমজানে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি সহায়তা কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। উদযাপন দূরে, বেঁচে থাকাই কঠিন তাদের।
কেনিয়ার ১৭ শতাংশ মানুষ চরম দরিদ্রসীমার নিচে। সেপ্টেম্বর থেকে মুদ্রাস্ফীতি ছিলো ৯ শতাংশের বেশি। কঠিন হয়ে পড়েছে জীবনধারণ।
তিনবেলা খেতে পারেন না অধিকাংশ নাগরিক। আছে রাজনৈতিক অস্থিরতাও। খরায় মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত ৫৪ লাখ বাসিন্দাকে থাকতে হবে পর্যাপ্ত খাবার ও পানি ছাড়া।
আফ্রিকার ৪০ শতাংশ গম রপ্তানি করতো ইউক্রেন-রাশিয়া। যুদ্ধে যা ব্যাহত হচ্ছে। আর্থিক সংকটের কারণে জাকাত দিতে পারবেন না অনেক মুসলিম ব্যবসায়ী।
আর্থিক সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত পশ্চিমের মুসলিমরা। ২০ মার্চ নিউইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষ জানায়, রোজায় দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিদিন সাড়ে সাত হাজার মানুষকে বিনামূল্যে ইফতার দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: পলাতক নই, শিগগিরই সবার সামনে আসব: অমৃতপাল
ব্রিটেন ন্যাশনাল জাকাত ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী সোহাইল হানিফ জানান, জীবনধারণের ব্যয় বহনে ব্রিটিশ মুসলিমদের এতোটা লড়াই কখনোই করতে হয়নি। খুবই ভয়াবহ পরিস্থিতি।
প্রতি ৪০ মিনিটে একজন জাকাত চেয়ে আবেদন করছেন। এ সংখ্যা ২০২১ সালের থেকে দ্বিগুণ। খাদ্যপণ্যের দাম ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
জানুয়ারিতে খাবার এবং সবজীতে মুদ্রাস্ফীতি ছিলো ১৬.৮ শতাংশ। ১২ মাসে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ৬৬ দশমিক সাত শতাংশ। গ্যাসের দাম বেড়েছে ১২৯ দশমিক চার শতাংশ।
একাত্তর/এসজে
মন্তব্য
এই নিবন্ধটি জন্য কোন মন্তব্য নেই.