যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়ার ৫১ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি বিবৃতি দিয়েছেন মার্কিন কংগ্রেসের বাংলাদেশ ককাসের কো-চেয়ার জো উইলসন।
বুধবার (২৯ মার্চ) প্রকাশিত এই বিবৃতিতে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, কংগ্রেসনাল বাংলাদেশ ককাস-এর কো-চেয়ার হিসেবে আমি স্বীকৃতি দিতে চাই যে ৫১ বছর আগে ১৯৭২ সালের ৪ এপ্রিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়।
সেখানে আরও বলা হয়, ৯ মাসব্যাপী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী এবং পাকিস্তানপন্থী মিলিশিয়ারা লাখ লাখ মানুষকে হত্যা এবং আরো অনেককে আহত করে। স্বাধীনতার যুদ্ধ ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার সংগ্রাম ।
যুদ্ধ থেকে উদ্ভূত বাংলাদেশের সামনে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ছিল ভয়ানক। বাঙালি জনগণ ব্যাপক দারিদ্র্য ও দীর্ঘস্থায়ী অপুষ্টির মুখোমুখি হয়েছিল এবং ১০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাস্তচ্যুত হয়েছিলো, যারা সংঘর্ষের সময় তাদের বাড়িঘর থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। তারা ভঙ্গুর ব্যাংকিং ও মুদ্রা ব্যবস্থা এবং ৩০০ থেকে ৪০০ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতি ও নিম্ন বৈদেশিক সম্পদের সম্মুখীন হয়েছিলো।
স্বাধীনতা যুদ্ধ অভ্যন্তরীণ যাতায়াত ব্যবস্থাকে বিকল করে দিয়েছিল এবং রাস্তা, রেলপথ এবং সেতুসহ যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো। তরুণ দেশটি তখনো ১৯৭০ সালের নভেম্বরে ভোলায় আঘাত হানা প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের ধকল সামলাচ্ছিল, যাতে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।
গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশ ব্যাপক অগ্রগতি করেছে মন্তব্য করে বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে থেকে তারা একটি দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ২০২১ সালের তথ্য অনুসারে, তাদের মাথাপিছু জিডিপি দুই হাজার ৪৫৭ ডলারে উন্নীত হয়েছে যা তাদের আঞ্চলিক প্রতিবেশীদের চেয়ে বেশি।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে অর্থনীতি ৯ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৪৫০ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। গড় আয়ু ৪৭ বছর থেকে বেড়ে ৭৩ বছর হয়েছে এবং বয়স্ক সাক্ষরতার হার বেড়েছে ৭৫ শতাংশের বেশি। জাতি তার স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে বিকশিত হয়েছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি যথেষ্ট আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি অর্জন করেছে
দুর্যোগ স্থিতিস্থাপকতা, দারিদ্র্য হ্রাস, উন্নত স্বাস্থ্য, শিক্ষা, এবং নারীর ক্ষমতায়নে। বাংলাদেশ সফলভাবে একটি সহনশীল মুসলিম সমাজ ব্যবস্থা বজায় রেখেছে দেশের ও উগ্রবাদ দমন করেছে। দেশটির জনগণ বন্দুকের কর্তৃত্ববাদী শাসনে অবতীর্ণ হওয়ার পরিবর্তে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের প্রতি সমর্থন বজায় রেখেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ এবং জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যাপক সহযোগিতা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার এবং সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় উৎস। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ মার্কিন অর্থনীতিতে অবদান রেখেছে। বাংলাদেশে প্রধান আমেরিকান রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে কৃষিপণ্য, বিমান, যন্ত্রপাতি, ইঞ্জিন, লোহা ও ইস্পাত পণ্য। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা আমদানি করে পোশাক, জুতা, টেক্সটাইল পণ্য, খেলনা, গেমস, খেলার সামগ্রী, চিংড়ি এবং কৃষিপণ্য।
প্রতিবেশি মিয়ানমার থেকে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে গ্রহণ ও আশ্রয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে তার উদার প্রশংসা করে আমেরিকান জনগণ। এই সংকট মোকাবেলায় মানবিক সহায়তা হিসেবে সবচেয়ে বেশি অর্থ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যার পরিমাণ দুই বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা প্রচেষ্টায় সবচেয়ে বড় অবদানকারী বাংলাদেশকে স্বাগত জানায় আমেরিকান জনগণ। উভয় দেশই পারস্পরিক সমৃদ্ধির জন্য জনগণের সাথে জনগণের ও সরকারের সাথে সরকারের সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে চায়। ১০০ মিলিয়নেরও বেশি ডোজ কোভিড-১০ টিকার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশি-আমেরিকান কমিউনিটি এবং বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী শিক্ষার্থী দ্বারা যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক মজবুত হয়েছে। দুই লাখেরও বেশি বাংলাদেশি-আমেরিকান নিজেদেরকে কঠোর পরিশ্রমী, আইন মান্যকারী এবং দেশপ্রেমিক বলে প্রমাণিত করেছেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫১তম বছরে আমেরিকান জনগণ বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয় এবং প্রশংসা করে। বর্তমান ও ভবিষ্যতে পারস্পরিক অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং জাতীয় নিরাপত্তা লক্ষ্য অর্জনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে থাকার জন্য আন্তরিক সংকল্প প্রকাশ করেছে।
একাত্তর/এসজে
মন্তব্য
এই নিবন্ধটি জন্য কোন মন্তব্য নেই.