ঢাকা ০৯ জুন ২০২৩, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

বৈদেশিক মুদ্রার সংকট আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কমেছে: এবিবি

কাবেরী মৈত্রেয়, একাত্তর
প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৩ ১৬:৩৮:২৯
বৈদেশিক মুদ্রার সংকট আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কমেছে: এবিবি

দেশে বিদ্যমান বৈদেশিক মুদ্রার সংকট আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কমেছে বলে মনে করে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স-এবিবি।  

সোমবার এবিবি আয়োজিত বাংলাদেশ ব্যাংকিং সেক্টর আউটলুক ২০২৩ এর এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটা জানান সংগঠনটির চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন।

তিনি জানান, পরিস্থিতি এখনও সম্পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরেনি। বিদেশি অর্থপ্রদানের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ব্যাংকই এখন নিয়মিত অবস্থায় ফিরেছে; দুয়েকটি ব্যাংকে কিছু সমস্যা থাকতে পারে।  

তার মতে, সংশ্লিষ্ট বিদেশি ব্যাংকগুলো যারা আগে ক্রেডিট লিমিট প্রত্যাহার করে নিয়েছিল, তারা এখন দেশে ফিরে আসছে। কারণ দেশের বর্তমান অবস্থা নিয়ে তারা এখন সন্তুষ্ট। 

এ সময়, সংগঠনটির ভাইস চেয়ারম্যান মাশরুর আরেফিন বলেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং আমানত বাড়তে থাকায় ব্যাংকের ডলার হোল্ডিংয়ের নিট ওপেনিং পজিশন এখন নেতিবাচক থেকে ইতিবাচক অবস্থায় পৌঁছেছে। এছাড়া, আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক মার্কেটের মাধ্যে ডলার হারের ব্যবধানও কমে এসেছে; এতে স্থিতিশীলতা ফিরে আসছে ব্যাংকিং খাতে। 

তিনি আরও বলেন , বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ বৈদেশিক মুদ্রার বাজারকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করেছে। 

আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক বাজারের হারের মধ্যে ব্যবধান সর্বোচ্চ ১ টাকায় নেমে এসেছ। 

আরও পড়ুন: সার্ক চেম্বারের সভাপতি হচ্ছেন এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন

এবিবির ভাইস চেয়ারম্যানের মতে, গত বছর ব্যাংকগুলোর ডলার হোল্ডিংয়ের নিট ওপেনিং পজিশন গিয়ে ঠেকেছিল ঋণাত্মক ৬০০ মিলিয়ন ডলারে; সেটি এখন বেড়ে ৩৮ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। একই সাথে, ২.৫ শতাংশ প্রণোদনাসহ রেমিট্যান্সের ডলার রেট ১১০.৭০ টাকা, যা অনেক সময়  হুন্ডি বাজারে আরও কমে আসে। 

এবিবির মতে, ব্যাংক খাতে অতিরিক্ত তারল্য এখন ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এ কারণে দেশে তারল্য সংকট প্রাক-সংকটকালীন পর্যায়ে না আসলেও অনেকাংশেই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। 

সংগঠনটির চেয়ারম্যান আরো জানান, ব্যাংকগুলো এখন এলসি খুলতে পারবে, তবে সবক্ষেত্রে নয়। আগে ব্যাংকগুলো অর্থপ্রদানের সক্ষমতা বিবেচনা না করেই এলসি খুলত, তবে এখন তারা এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে এসেছে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ, বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে অর্থ-পাচার কমাতে সহায়তা করেছে বলেও উল্লেখ করেন এবিবি চেয়ারম্যান। 

গেল এক দশকে দ্বিতীয় বারের মতো এবিবির এই সংবাদ সম্মেলনটি ছিলো মূলত রুশ ইউক্রেন যুদ্ধ পরবর্তী ব্যাংক খাতসহ সামষ্টিক অর্থনীতির মন্দাভাব দূরীকরণের জন্য সরকারের নেয়া যেসব পদক্ষেপ তার আদৌপান্ত তুলে ধরা। 

তবে এসব ছাপিয়ে বারবারই এ সময় গণমাধ্যমকর্মীরা দীর্ঘ দিনের পুঞ্জিভূত খেলাপি ঋণ, সুশাসন, অর্থ আত্মসাৎ আর ব্যাংক পরিচালনায় পর্ষদের কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। 

এ সময়, ২০১৯ সালের পর ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমাতে অর্থমন্ত্রণালয়ের দেয়া বিশেষ ছাড়ের পরও অনাদায়ী অর্থ ফেরানো যায়নি উল্লেক করে এবিবি বলছে, খেলাপি ঋণ কমানোর উদ্যোগ ব্যাংক খাত একা পারবে না। এ জন্য সামাজিক প্রতিশ্রুতি থাকার কথাও জানানো হয়। 

সংবাদ সমম্মেলনে প্রশ্ন ওঠে শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংক থেকে অনেক আমানতকারী টাকা তুলে নেওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় টাকা ধার দেয়ার বিষয়েও। যেখানে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের এমডি ও এবিবির ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী তা স্বীকার করে বলেন, পরিস্থিতি তখন ঘোলাটে ছিলো, আস্থার সংকটও দেখা যাচ্ছিলো। 

তিনি জানান, গত বছরের শেষ সময়ে ব্যাংক থেকে অনেক আমানতকারী টাকা তুলে নেন। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় টাকা ধার করতে হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যবসা করতে গেলে আর্থিক প্রতিবেদন ভালো থাকতে হয়। টাকা ধারের ফলে সেটা করা  সম্ভব হয়েছে।  

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে পরিচালনা পর্ষদের চাপ আছে কি না এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ পেশাদারত্বের সঙ্গে চলছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী বলেন, কোনো ব্যাংকের এমডি কি প্রকাশ্যে বলবে, পরিচালনা পর্ষদ চাপ প্রয়োগ করে?  

এ সময় এবিবির ভাইস চেয়ারম্যান ও ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের এমডি আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, জনগণকে সহায়তা করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ তারল্য সহায়তা দিয়েছে। কারণ, প্রায় দুই কোটি মানুষ ব্যাংকে টাকা রেখেছেন।

এবিবি বলছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকির ফলে বাণিজ্যনির্ভর অর্থ পাচার কমে গেছে। ব্যাংকগুলোও এখন সতর্ক হয়ে গেছে।

এ সময় এবিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ব্যাংক খাতের হালনাগাদ পরিস্থিতি তুলে ধরতে এখন থেকে প্রতি তিন মাস পরপর সংবাদ সম্মেলন করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে এবিবির চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন, তিন ভাইস চেয়ারম্যান—সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন, ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের এমডি আবুল কাশেম মো. শিরিন ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের এমডি সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী ও কোষাধ্যক্ষ এবং মিডল্যান্ড ব্যাংকের এমডি মো. আহসান-উজ জামান উপস্থিত ছিলেন।


একাত্তর/এআর

মন্তব্য

এই নিবন্ধটি জন্য কোন মন্তব্য নেই.

আপনার মন্তব্য লিখুন

Nagad Ads