অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের দায়ে দুর্নীতির মামলায় কক্সবাজারের টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশের জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ও মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক শেখ আশফাকুর রহমান প্রদীপের জামিন আবেদনের উপর শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক জানান, তারা শুনানিতে জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেছেন। আদালত শুনানি শেষে জামিন না মঞ্জুর করেছেন। এছাড়া প্রদীপের স্ত্রী চুমকী কারণ পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গেজেট প্রকাশের আবেদন করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ। তবে আদালত এ বিষয়ে কোন আদেশ দেয়নি জানিয়ে পিপি মামহমুদ বলেন, আদালত এই বিষয়ে পরে আদেশ দেবে।
এছাড়া আদালতে ওসি প্রদীপের সম্পত্তি ক্রোকের আবেদন জমা দেয়া হয়েছে বলেও জানান এই আইনজীবী।
গত এক সেপ্টেম্বর ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে করা দুদকের মামলায় অভিযোগপত্র গ্রহণ করে আদালত। এর আগে ২৬ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদকের সহকারি পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন।
অভিযোগপত্রে দুই কোটি ৩৫ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয় প্রদীপ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে। এ মামলায় পলাতক রয়েছেন প্রদীপের স্ত্রী চুমকি।
প্রসঙ্গত, গত ২৩ আগস্ট প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ দুদক আইন-২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১), মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৪ (২) ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানোর জন্য গত ২৭ আগস্ট মহানগর সিনিয়র স্পেশাল দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালতে দুদক আবেদন করে। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ১৪ সেপ্টেম্বর আবেদনের ওপর শুনানির দিন ধার্য করেন।
আরও পড়ুন: করোনা শনাক্তের হার দুইয়ের ঘরে, ১২ মৃত্যু
চুমকি দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ১৩ লাখ ১৩ হাজার ১৭৫ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন বলে মামলার এজাহারে অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া তিন কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রমাণ হয়েছে; যা ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করে পরস্পরের যোগসাজশে হস্তান্তর ও স্থানান্তরের মধ্য দিয়ে ভোগদখলে রেখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
দুদক সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-২ থেকে চুমকির কাছে সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার নোটিশ পাঠানো হয়। ১২ মে তিনি সম্পদ বিবরণী দুদকে জমা দেন। সম্পদ বিবরণীতে চুমকি ৩ কোটি ৬৬ লাখ ৫১ হাজার ৩০০ টাকা স্থাবর এবং ৪২ লাখ ৮৪ হাজার ৩৯৪ টাকার অস্থাবরসহ মোট ৪ কোটি ৯ লাখ ৩৫ হাজার ৬৯৪ টাকার সম্পদের তথ্য উল্লেখ করেন। কিন্তু দুদকের অনুসন্ধানে চুমকির নামে ৩ কোটি ৬৬ লাখ ২৪ হাজার ৪৭৫ টাকার স্থাবর এবং ৫৬ লাখ ২৪ হাজার ৩৯৪ টাকার অস্থাবরসহ মোট ৪ কোটি ২২ লাখ ৪৮ হাজার ৮৬৯ টাকার সম্পদের হিসাব উঠে আসে। এই হিসেবে এজাহারে ১৩ লাখ ১৩ হাজার ১৭৫ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে। একই সময়ে তিনি ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা পারিবারিক ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয় করেছেন। এ হিসেবে তার সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৪৪ লাখ ১৮ হাজার ৮৬৯ টাকা। কিন্তু দুদক অনুসন্ধানে তার বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয় পেয়েছে ৪৯ লাখ ১৩ হাজার ২৩৪ টাকা। এ ক্ষেত্রে তার জ্ঞাত আয়ের উৎসবহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ হচ্ছে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকা।
অন্যদিকে সম্পদ বিবরণীতে চুমকি তার বাবার কাছ থেকে দান হিসেবে পাওয়া জমিসহ একটি ছয়তলা বাড়ির তথ্য দেন। দুদক অনুসন্ধানে পেয়েছে, চুমকির বাবা সাবরেজিস্ট্রি দলিলমূলে তাকে বাড়ি দিলে তার অপর দুই ভাই ও এক বোনকে কোনও বাড়ি দেননি। অথচ দুই ছেলের নামে উল্লেখযোগ্য কোনও সম্পদও নেই। অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওসি প্রদীপ তার ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অপরাধলব্ধ অর্থ গোপন করার অসৎ উদ্দেশে স্থানান্তর ও হস্তান্তরের মাধ্যমে তার শ্বশুরের নামে বাড়ি নির্মাণ করে পরবর্তীতে তার স্ত্রী চুমকির নামে দান করিয়ে নিয়ে ভোগদখল করছেন।
একাত্তর/টিএ