দেশব্যাপী হেফাজতে ইসলাম কর্তৃক হামলা, ভাঙচুর, সাম্প্রদায়িক উস্কানি ও অসন্তোষ সৃষ্টি, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ বিরোধীতামূলক কার্মকাণ্ড ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও রাজাকার-আলবদরদের দ্বারা পরিচালিত ঘৃণ্য ও নৃশংস অতীতকে স্মরণ করিয়ে দেয় বলে মন্তব্য করেছেন দেশের বিশিষ্ট ১১ জন লেখক, সাংবাদিক, অধ্যাপক, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।
গতকাল ২৯ মার্চ এক যৌথ বিবৃতিতে তাঁরা হেফাজতের এই সাম্প্রদায়িক তাণ্ডবের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ দাবি করেন।
বিবৃতিদাতারা হলেন- সাংবাদিক ও সাহিত্যিক আবদুল গাফফার চৌধুরী, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, সমাজবিজ্ঞানী অনুপম সেন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, সাংবাদিক আবেদ খান, লেখক-অধ্যাপক আবদুস সেলিম, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির এবং অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন।
বিবৃতিতে বলা হয়, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত হয়ে অথবা ভার্চুয়ালি উপস্থিত থেকে সারা বিশ্বের রাষ্ট্র নায়করা যখন বাংলাদেশের সার্বিক অগ্রগতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুসরণীয় নেতৃত্বের প্রশংসায় পঞ্চমুখ তখন স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চক্র আমাদের অর্জিত গৌরবকে ধূলিস্যাৎ করার নীল নকশা বাস্তবায়নে তৎপর। হেফাজত ও অন্যান্য স্বাধীনতাবিরোধী চক্র গত ২৬ মার্চ হাটাহাজারি ও ব্রাহ্মবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি অফিস, স্থাপনা, যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে এবং রাস্তাঘাট ও রেললাইনের ক্ষতিসাধন করে ত্রাসের সৃষ্টি করে। এমন কি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ও প্রতিকৃতি ধ্বংস করার ধৃষ্টতা দেখায়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে একাত্তরের বন্ধুদেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতীকী সফরকে কেন্দ্র করে যেভাবে দেশের সম্পদ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে তা মুক্তিযুদ্ধের পথ থেকে দেশকে আবার পাকিস্তানি পথে নেয়ার গভীর ষড়যন্ত্র মেলে ধরেছে। হেফাজতি ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে আপস করে যে তাদের উগ্র ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড উস্কে দেয়া হয়েছে সেটা আজ পরিষ্কার। আমরা এই সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সরকারের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ দেখতে চাই। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের ঘোষিত যুদ্ধের মোকাবেলায় সরকারের সর্বশক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে এদের নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানাই।
সাম্প্রদায়িক অপশক্তিগুলো মসজিদ ও মাদ্রাসাকে ব্যবহার করে স্বাধীনতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিবিরোধী তৎপরতা যেন চালাতে না পারে সে জন্য দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিবৃতিদাতারা। তাঁরা বলেছেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। তাই ইসলামের পবিত্র স্থাপনাসমূহকে ব্যবহার করে গণবিরোধী এ তৎপরতা সমাজ ও রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করবে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।