ফেসবুকে পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব, এরপর সখ্যতা, পরবর্তীতে বিদেশ থেকে মূল্যবান পার্সেল পাঠানোর কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।
গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির নাম- অ্যারণ অ্যানো। সে ক্যামেরুনের নাগরিক এবং অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। খবর ডিএমপি নিউজের।
গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের টিম লিডার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. নাজমুল হক জানান, জনৈক শাহরিয়ারের স্ত্রী এর সাথে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিবাদীর পরিচয় হয়। সে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে নিজেকে মালটার সংসদের চেয়ারম্যান পরিচয়ে দেয়। পরবর্তীতে উক্ত ব্যক্তির সাথে ম্যাসেঞ্জারে ভুক্তভোগীর সখ্যতা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে সে বন্ধুত্বের নিদর্শনস্বরূপ কিছু মূল্যবান উপহার (স্বর্ণের চেইন, ঘড়ি, ডলার, কাপড়-চোপড়, ল্যাপটপ, আইফোন) ইত্যাদি দেওয়ার প্রস্তাব দেয়।
অভিযুক্তের প্রস্তাবে ভুক্তভোগী রাজি হলে সে তাকে একটি পার্সেলের ছবি প্রদান করেন এবং পার্সেলটি ২৩ এপ্রিল ঢাকা কাস্টমসে পৌঁছবে বলে জানান।
পার্সেলটি ২৫ এপ্রিল বিমানবন্দরের কাস্টমসে পৌঁছেছে মর্মে ভুক্তভোগীকে কথিত কাস্টমস অফিসার ফাহিমা আক্তার -০১৭২৩****৪৯ নম্বর থেকে ফোন করে এবং তাদের একজন এজেন্ট তার সাথে দ্রুত যোগাযোগ করবে বলে জানায়। এরপর তাদের একজন অফিসার বিস্তারিত জানিয়ে তাকে হোয়াটসঅ্যাপ করবে বলে জানায়।
কিছুক্ষণ পরে ০১৮১****২৪৩ নাম্বার হতে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পার্সেলটি কাস্টমস থেকে আনতে কাস্টমস চার্জ বাবদ ১ লাখ ৮৯ হাজার টাকা দিতে হবে বলে জানায়।
ভুক্তভোগী তাদের কথা মতো প্রতারকের অ্যাকাউন্টে ৪৫ হাজার ৫শ’ টাকা জমা দেয়। বাকি টাকা জমা দেওয়ার বিষয়টি ভুক্তভোগী তার স্বামীর সাথে শেয়ার করলে তিনি যে প্রতারিত হয়েছেন বিষয়টি বুঝতে পারেন। এরপর ভুক্তভোগীর স্বামী ভাটারা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
তিনি বলেন, অনলাইন মনিটরিং ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তার ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে শনাক্ত করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৯ আগস্ট রাত সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ভাটারা থানায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে অ্যারণ অ্যানোকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তার হেফাজত থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ২টি মোবাইল ফোন ও ২টি সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি ব্যবসায়ী ও মহিলাদের টার্গেট করে প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠায়। এরপর অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই সখ্যতা বাড়িয়ে তুলেন। আলাপচারিতা ইংরেজিতে হওয়ার ফলে বিদেশি বন্ধুর প্রতি বিশ্বস্ততা কাজ করে। আলাপচারিতার একপর্যায়ে টার্গেট ব্যক্তিকে বন্ধুত্বের নিদর্শন স্বরূপ উপহার পাঠানোর প্রলোভন দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করতেন অভিযুক্ত।
আরও পড়ুন: রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশি অভিযান, গ্রেপ্তার ৪৩
জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, প্রতারক একজন ক্যামেরুনের নাগরিক। তিনি গত ৫ বছর ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। আটকের সময় তিনি পাসপোর্ট ও ভিসা দেখাতে পারেননি।
গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে ভাটারা থানায় রুজুকৃত মামলায় বিজ্ঞ আদালতে রিমান্ডের আবেদনসহ পাঠানো হয়েছে।
একাত্তর/আরএ