রাজউক বলছে সাধারণ মানুষের কল্যাণেই সংশোধিত ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ)। তবে এটিকে শুভঙ্করের ফাঁকি হিসাবে বর্ণনা করেছেন স্থপতিরা।
আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি উচ্চবিত্তের সুবিধা বাস্তবায়নের নকশা। পরিবেশবিদ আর নদী রক্ষা কমিশনের দাবি, নানা বিষয়ে সাংঘর্ষিক ড্যাপ।
জনপ্রতিনিধিদের ঘোষণা, নকশায় থাকা খেলার মাঠ ও জলাধার উদ্ধারে উদ্যোগী হবেন তারা। শনিবার এডিটরস গিল্ডের এক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন তারা।
রাজধানী ঢাকাকে আধুনিক ও বাসযোগ্য করার লক্ষ্যে গেলো ২৩ আগস্ট সংশোধিত ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।
এটি বাস্তবায়নের সময় ধরা হয়েছে ২০১৬ থেকে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত। অর্থাৎ আগামী ১৩ বছরে বাস্তবায়ন করতে হবে ড্যাপ। আর এই নিয়েই বিতর্ক।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ড্যাপ নিয়েই এক গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশ। শনিবার সকালে রাজধানীর বনানীর ঢাকা গ্যালারিতে বৈঠকটি শুরু হয়।
এডিটরস গিল্ডের আয়োজনের শুরুতেই অতিথিদের কাছে প্রশ্ন ছিলো, ড্যাপ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সাধারন মানুষকে তাদের জমি বড়লোকের হাতে তুলে দিতে বাধ্য করা হবে কি না?
রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ ও ড্যাপ প্রকল্পের পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম এমন সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, এই নগরে ভূমিমালিকদের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।
তিনি আরও দাবি করেন, ২০৩৫ সালের মধ্যে ১৫২৮ বর্গকিলোমিটার সীমানায় ড্যাপ বাস্তবায়ন হলে সাড়ে সাত কোটি মানুষ থাকতে পারবে এই শহরে।
তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন এটি শুভঙ্করের ফাঁকি। ড্যাপ বাস্তবায়ন করার ক্ষমতা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নেই। এটি বাস্তবায়ন করতে হলে একটি নগর সরকার দরকার।
স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, বিল্ডিংয়ের উচ্চতা বা অ্যাপার্টমেন্ট কমাতে পারলে জনঘনত্ব কমবে; আসলে কি তাই? পৃথিবীর কোথাও এমনটা ঘটনা নেই।
ড্যাপেই বলা হয়েছে, প্রতি বছর পাঁচ লাখ লোক ঢাকায় ঢুকছে। এই ঢোকা যদি বন্ধ করতে না পারি... ঢাকায় মানুষ কেন আসে?
একজন ভিক্ষুক এখানে আয় করতে পারে, যেটা আর কোথাও পারে না। তার তো এখানে আসা ছাড়া বিকল্প নেই।
বাসস্থানের সংখ্যা কমিয়ে জনঘনত্ব কমানোর ইতিহাস পৃথিবীর কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই। এটা কোনোদিন সম্ভব নয়।
জনগণ যদি আসে থাকার জায়গা না পেলে রাস্তায় থাকবে, উন্মুক্ত আকাশের নিচে থাকবে, আর না হয় বস্তিতে থাকবে। আর একটু ভালো হলে দ্বো-তলা খাট বানিয়ে থাকবে।
আপত্তি আইপিডি ও রিহ্যাবেরও। আইপিডি বলছে নিম্নবিত্তকে আবাসন দিলেই হবে না। শিক্ষা ও স্বাস্হ্য সেবা নিশ্চিত করতে হবে। রিহ্যাব বলছে, বহুতল ছাড়া বিনিয়োগে আগ্রহ নেই।
নদী রক্ষা কমিশনের দাবি, ড্যাপ নিয়ে তাদের সাথে কোন আলোচনাই করেনি রাজউক। তবে ড্যাপের নকশায় থাকা মাঠ ও জলাধার উদ্ধারে তৎপর হবার কথা জানালেন মেয়র আতিক।
প্রস্তাবিত মহানগর সরকার, স্থপতি ও নগরপরিকল্পনাবিদ ছাড়া কেবল রাজউকের ওপর ভরসা করে ড্যাপ বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে একমত প্রকাশ করেন সবাই।
একাত্তর/এআর