দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে অপারেশনের জন্য কোনো খরচ না লাগলেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে কর্মরত এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে রোগী ও তার স্বজনদের কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে রোগী অপারেশন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, জরুরি কোনো রোগীর আইসিইউ প্রয়োজন হলে তিনি পছন্দের হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। এ ব্যাপারে কয়েক রোগীর স্বজন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযুক্ত চিকিৎসকের নাম ডা. পীযুষ কান্তি মিত্র। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারী বিভাগে কর্মরত আছেন।
অভিযোগের ব্যাপারে হাসপাতালটির নিউরোসার্জারী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক অসিত চন্দ্র সরকার বলেন, অভিযোগগুলো পেয়েছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য হাসপাতাল পরিচালকের কাছে অভিযোগ দুটি পাঠানো হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২৯ আগস্ট কেরাণীগঞ্জে নাজিফা (৪) নামে এক শিশু মাথায় আঘাত পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। শিশুটির বাবা মো. খোরশেদ আলম অভিযোগ করে বলেন, ডা. পীযূষ কান্তি মিত্র সন্তানকে অপারেশন শেষে ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে অনেক আকুতি করে আট হাজার টাকা দিয়েছি। তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করে বিষয়টি তদন্ত ও টাকা ফেরতের ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
একদিন রাতে চকবাজার থানার দেবিদাস ঘাট লেন এলাকার মো. গজ নবী (৪০) মাথায় ফ্যানের আঘাত পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। রোগীর ভাতিজা মো. জুয়েল আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, ভর্তির পর চিকিৎসক পীযুষ কান্তি মিত্র কাছে শরণাপন্ন হলে তিনি জরুরি অপারেশনের পরামর্শ দেন। এসময় ওই চিকিৎসক জানান, এ অপারেশন করতে গেলে একটি মেশিন লাগবে। ওই মেশিন বাবদ ২০ হাজার টাকা দিতে হবে। পরে ১০ হাজার টাকা দেন। এক পর্যায়ে জানতে পারেন অপারেশনের জন্য কোনো মেশিন লাগেনি। পরে চিকিৎসকের কাছে টাকা ফেরত চাইলে তখন উল্টো ১০ হাজার টাকা দাবি করে বসেন। এব্যাপারে জুয়েল টাকা ফেরতসহ কর্তৃপক্ষের কাছে বিচার দাবি করেছেন।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, গত দুই আগস্ট কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার বড়ো হাটি গ্রামের আমজাদ হোসেন (৪৮) মাথায় আঘাত পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। রোগীর ভাই মোশাররফ হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ডা. পীযূষ ওই রাতেই আমার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে অপারেশন করেছেন। রোগীর অবস্থা খারাপ থাকায় একটি মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করে রোগীকে দ্রুত সেখানকার আইসিইউতে নিতে বলেন। কিন্তু সেখানে না নেওয়ায় তিনি আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন। কিন্তু সামর্থ না থাকায় হাসপাতালে রোগী রাখা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৩ আগস্ট রোগীটি মারা যায়।
আরও পড়ুন: আগামী মাসে দুই কোটি মানুষ করোনা টিকা পাবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় ডা. পীযূষ কান্তি মিত্রের সঙ্গে। টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, দেখেন এসব অপারেশন করতে গেলে একটি মেশিন ভাড়া আনতে হয়। মেশিনটির ভাড়া আট হাজার টাকা। তিনি আরও বলেন আমার পেছনে কিছু চিকিৎসক ও কর্মচারীর একটি গ্রুপ লেগে আছেন। তারাই প্রি প্লান করে অভিযোগ গুলোর ব্যবস্থা করিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, অভিযোগ এখনও হাতে পাইনি। পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একাত্তর/এসি