জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার করছে বলে জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধান অতিথি ছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
শুক্রবার (২৬ মার্চ) জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে মোদি বলেন, এই মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে স্মরণ করার দিন। মুক্তিযুদ্ধের যে ভাবনা ছিল এখন সেটিকে আবারও মনে করার সময়।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মোদী বলেন, আমাদের ভারতীয়দের জন্য এটি গর্বের বিষয় যে, আমরা শেখ মুজিবুরজীকে গান্ধি শান্তি পুরস্কারে সম্মানিত করার সুযোগ পেয়েছি। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে উপস্থিত থাকা এবং এমন একটি পুরস্কার তুলে দিতে পারা আমার জীবনের সেরা মুহূর্তগুলোর একটি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্বের ৫০ বছর পূর্ণ হচ্ছে এবং সকল ভারতীয়দের পক্ষ থেকে আমি আপনাদের সকলকে এবং বাংলাদেশের সকল নাগরিককে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বাংলাদেশের জনগণের মতো ভারতের জনগণের মধ্যেও স্বাধীনতার আকুলতা ছিল। আমাদের যারা শত্রু তারাও বাংলাদেশের শত্রু। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সমর্থনে আমি ও আমার বন্ধুরা সত্যাগ্রহ (আন্দোলন) করেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অনেকেই আমার সঙ্গে এখানে আছেন। আমার জীবনের প্রথম আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধ। তখন আমার বয়স ছিল ২০-২২ বছর।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক মজবুত করতে তরুণদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। এ সময় মোদি ভাষা শহীদ সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারকে স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত জঘন্য অপরাধ ও নৃশংসতার চিত্রগুলো আমাদের বিচলিত করতো এবং রাতের পর রাত বিনিদ্র করে রাখতো। অপারেশন সার্চলাইটের নিষ্ঠুরতা, নিপীড়ন ও অত্যাচারের বিষয়টি নিয়ে বিশ্বের যতটা সোচ্চার হওয়া উচিত ছিল, তা হয়নি।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি ভারতের প্রতিটি কোণা থেকে, প্রতিটি দল থেকে সমর্থন দিয়েছিল জানিয়ে মোদি বলেন, ‘ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীজীর প্রয়াস ও মাহাত্ম্যপূর্ণ ভূমিকা সর্বজনবিদিত।’
তিনি বলেন, ‘ওই সময়েই ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ অটল বিহারী বাজপেয়ীজী বলেছিলেন, আমরা কেবল মুক্তি সংগ্রামে আত্মোৎসর্গকারীদের সঙ্গে লড়াই করছি, সেই সঙ্গে আমরা ইতিহাসকে একটি নতুন দিশা দেওয়ার প্রচেষ্টাও করছি। আজ বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামীদের সঙ্গে ভারতীয় সেনারাও নিজেদের রক্ত বিসর্জন দিচ্ছেন। এই রক্ত একটি নতুন বন্ধন সৃষ্টি করবে, যা কোনও অবস্থাতেই ভাঙবে না, কোনও কূটনীতিরও শিকার হবে না।”
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুই দেশের লাখ লাখ মানুষের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য, দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য দুই দেশের লক্ষ্য এক এবং প্রচেষ্টাও এক হওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের উভয় দেশেরই জন্য একবিংশ শতাব্দীর আগামী ২৫ বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ঐতিহ্যের অংশীদার, আমরা উন্নয়নেরও অংশীদার। আমরা লক্ষ্যও ভাগাভাগি করি, চ্যালেঞ্জগুলোও ভাগাভাগি করি।’
আমাদের মনে রাখতে হবে যে, বাণিজ্য ও শিল্পে যেখানে আমাদের জন্য একই ধরনের সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনই সন্ত্রাসবাদের মতো সমান বিপদও রয়েছে। এই জাতীয় অমানবিক ঘটনাবলীর পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবে রূপদানকারী শক্তিগুলো এখনও সক্রিয় রয়েছে বলে তিনি জানান।
মোদি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই তাদের থেকে সাবধানে থাকতে হবে এবং ওদের মোকাবিলা করার জন্য সংগঠিতও হতে হবে। আমাদের উভয় দেশেই গণতন্ত্রের শক্তি রয়েছে, এগিয়ে যাওয়ার সুস্পষ্ট দূরদর্শিতা রয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ অগ্রযাত্রা এই পুরো অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য সমান জরুরি।’
তিনি বলেন, আমি আনন্দিত যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বে তার সক্ষমতা প্রদর্শন করছে। যারা বাংলাদেশ গঠনে আপত্তি করছেলিনে, যারা এখানকার মানুষকে নিচু চোখে দেখতেন, যারা বাংলাদেশের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দিহান ছিলেন, বাংলাদেশ তাদের ভুল প্রমাণ করছে।’