নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কথা ডিসি-এসপিরাও শোনে না; এজন্য নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোন নির্বাচন হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে আন্দোলন শুরু হয়েছে। আন্দোলনের একটাই দফা, সরকারের পতন।
বুধবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে নগরের পলোগ্রাউন্ড মাঠে বিএনপির গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, পুলিশের গুলিতে পাঁচ নেতাকে হত্যা ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপি এই গণসমাবেশের আয়োজন করে।
এই সমাবেশে যোগ দিতে সকাল থেকে মিছিল নিয়ে আসতে শুরু করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তাদের অভিযোগ, বিভিন্ন পয়েন্টে পয়েন্টে সরকারি দল আর পুলিশি বাধার মুখে পড়তে হয়েছে তাদের। সেই বাধা উপেক্ষা করেই সমাবেশে যোগ দেয় হাজার হাজার মানুষ।
বিশাল গণসমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। নির্বাচন কমিশন ভেঙে দিয়ে গ্রহণযোগ্য কমিশন গঠন করতে হবে। সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
চট্টগ্রামে আন্দোলন শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশকে মুক্ত করার জন্য, গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য, এই দেশকে আরেকেবার পরাজয় থেকে মুক্ত করার জন্য আন্দোলন শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে শুরু করেছি গণতন্ত্রকে মুক্ত করার আন্দোলন, খালেদাকে মুক্ত করার আন্দোলন৷
এই আন্দোলনের সূচনা হয়েছে চট্টগ্রাম থেকে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য এই সরকারকে, শেখ হাসিনাকে এখনই পদত্যাগ করতে হবে। কারণ তাদের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এক দফা এক দাবি। সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। আজকে চট্টগ্রাম থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। আন্দোলনে পতন হবে সরকারের। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে নির্বাচন।
ফখরুল বলেন, শেখ হাসিনা বলে, দুর্ভিক্ষ আসতেছে, কম খান। বাতি কম জ্বালান, পানি কম ব্যবহার করেন। এসব কথা বলছে এখন। আপনারা আছেন কেনো? বিদায় হন। আমি আগেই বলেছি সেভ এক্সিট করেন। নিরাপদে চলে যান। তা না হলে পালাবার পথটাও খুঁজে পাবেন না।
সরকার বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে এমন অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা শুনতে পাচ্ছি বিদ্যুতের দাম বাড়াবে। সব কিছুর দাম বাড়িয়েছে। সব কিছুর দাম বাড়াতে হয় কেন? কারণ একটাই তারা লুট করে, চুরি করে ডাকাতি করে।
তিনি বলেন, জনগণের পকেট থেকে টাকা নিয়ে বিদেশে পাচার করে। মালয়েশিয়ায়, কানাডা ও লন্ডন, বাড়ি করে। আর আমার দেশের মানুষ না খেয়ে মারা যায়। খুব বড় বড় কথা বলে। কিন্তু দেশের শতকরা ৪২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে।
বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে শ্মশানে পরিণত করেছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এ সরকার নির্বাচিত সরকার নয়। তাই সবকিছু লুট করে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। দেশের মানুষ গরিব হয়ে আছে। শেখ হাসিনার ১০ টাকার চাল এখন ৭০ টাকা।
তিনি আরও বলেন, চালসহ নিত্যপণ্যের দাম তিন থেকে পাঁচ গুণ বেড়ে গেছে। সামনে বিদ্যুতের দামও বাড়ানো হবে। পেট্রল, গ্যাস, পানির দামও বাড়ানো হয়েছে। দাম বাড়ার কারণে জনগণের পকেট থেকে টাকা নিয়ে কানাডার বেগমপাড়া ও লন্ডনে বাড়ি করছে তারা।
আজ দেশে কোনো মানুষের নিরাপত্তা নেই এমন অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, দিনে দুপুরে ডাকাতি হয়। মা মেয়েদের কোনো সম্ভ্রম রক্ষা হয় না। মানুষকে হত্যা ও গুম করে। এমন একটা অবস্থা এসেছে আমাদের বাংলাদেশের মানুষের একটা প্রতিষ্ঠানকে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আমি বলি নিষেধাজ্ঞা দিয়ে হবে না। নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে শেখ হাসিনার সরকারকে। কারণ হাসিনা সরকারের নির্দেশেই এসব ঘটনা ঘটেছে।
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, চট্টগ্রামের গণ সমাবেশ বার্তা দিয়েছে, এখনই শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। শেখ হাসিনার বিদায়ের পালা এসে গেছে, পদত্যাগ করুন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের মানুষ গণসমাবেশে বুঝিয়ে দিয়েছে, চট্টগ্রামের মাটি বিএনপির ঘাঁটি। আজকের জনসভা থেকে সারাদেশে যে বার্তাটি যাবে, সেটি হলো শেখ হাসিনা আপনি এখনই পদত্যাগ করুন। আগামীকাল, পরশু নয়, এখনই পদত্যাগ করুন।
আমীর খসরু বলেন, এই গণসমাবেশের দিন জনগন যে রায় দিয়েছে, তার একদিনও ক্ষমতা থাকা অবৈধ। চট্টগ্রামের মাটি থেকে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তার ফল শিগগিরই ঘরে আনতে পারব। জীবন দিয়ে গণতন্ত্র আনব। সরকারের পতন ঘটাব।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন সভাপতিত্বে এই গণসমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
একাত্তর/এআর