গণআন্দোলন ঠেকাতে সরকার তারেক রহমান এবং জোবায়দা রহমানের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে করেছেন বিএনপির নেতারা।
তারা বলেছেন, রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার এখন দুর্নীতি দমন কমিশনকে দিয়ে বিএনপিকে দমন করার চেষ্টা করছে।
শনিবার (৭ জানুয়ারি) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে এক বিক্ষোভ মিছিলের পূর্বে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশ তারা এসব কথা বলেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেয়।
তারই প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর বিএনপি প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে। সভায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা যোগ দেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক নবীউল্লাহ নবীর সভাপতিত্বে সমাবেশ পরিচালনা করেন সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিলটি নয়াপল্টন থেকে শুরু হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে আবার নয়াপল্টনে এসে শেষ হয়।
মিছিলপূর্ব সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এই সরকার এখন তারেক রহমানের প্রতি রাগ। কারণ, তিনি দেশে না থেকেও দেশবাসীকে জাগ্রত করেছেন।
তিনি বলেন, তারেক রহমানের নেতৃত্বে গণজাগরণে সরকার এখন আতঙ্কিত। তারেক রহমানের কোনো অস্থাবর সম্পত্তি নেই। এটা সরকারের মিথ্যাচার।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ভোটহীন এই সরকারের মন্ত্রী বা এমপিরা কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে কত টাকা লুটে করেছে তার সবকিছুই বেরিয়ে আসবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, তারেক রহমানের সম্পত্তি মানে সারা বাংলাদেশ। সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে বিএনপির আন্দোলন থামানো যাবে না। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এ রায়ের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার সহধর্মিনী জোবায়দা রহমানের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের আদেশ সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলক বলে মন্তব্য করেন তিনি।
হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আওয়ামী লীগের মুখে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা মানায় না। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। অন্যথায় বিএনপির আন্দোলন চলবে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি প্রহসনের নির্বাচনে যাবে না। নেতাকর্মীরা নিজের জীবন দিয়ে হলেও নির্বাচন প্রতিহত করবে। এদেশে আর দিনের ভোট রাতে হতে দেয়া হবে না।
এর আগে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দুদকের মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করেছে দলটির নেতারা।
এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রতিহিংসাপরায়ণ এই সরকার তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা-বানোয়াট-কাল্পনিক অভিযোগে মামলা ও রায় দিয়ে গোয়েবলসের মতো মিথ্যাচার করছে।
তিনি আরও বলেন, তারেক রহমান ও ডা. জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে, তা অবান্তর, ভিত্তিহীন, অমূলক। যে আদেশ দেওয়া হয়েছে তা প্রতিহিংসামূলক ফরমায়েশী।
দুর্নীতি দমন কমিশনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন যেন আজ বিএনপি দমন কমিশনে পরিণত করেছে। ফ্যাসিস্ট সরকার আবারও নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছে। আর এই চক্রান্তের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে দুদক।
বিস্তারিত উল্লেখ না করে মোশাররফ বলেন, আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, যে সকল সম্পত্তির মালিক তারেক রহমান নন, কোন দলিলে বা চুক্তিতে যেখানে তারেক রহমানের নাম, স্বাক্ষর বা সংশ্লিষ্টতা নাই, তাকে সেসব সম্পত্তির গায়েবী মালিক বানিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এমনকি তারেক রহমান এবং ডা. জোবাইদা রহমানের কর পরিশোধকৃত সম্পদ নিয়েও কাল্পনিক অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বিএনপির আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবে কে, প্রশ্ন কাদেরের
বিএনপির আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করতে এমন মামলা করা হচ্ছে বলে দাবি করেন মোশাররফ। তার নিন্দা জানিয়ে মামলা প্রত্যাহারের আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণের স্রোত দেখে ভয়ের কারণেই কিন্তু সরকার তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে মামলা চালু করে ক্রোক করার এই আদেশ দেওয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য চলমান আন্দোলনকে স্তব্ধ করা বা দুর্বল করা। তবে এই কর্মকাণ্ডে কোনো কাজ হবে না।
গত বৃহস্পতিবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরও তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানের নাগাল না পাওয়ায় তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেয় আদালত।
একাত্তর/এসি