তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কোনো অংশ নিয়েছিলেন তা ব্যাখ্যা দিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
তিনি বলেছেন, বিএনপির আন্দোলন সফল হবে না এবং তিন বিদেশি শক্তি আওয়ামী লীহকে ক্ষমতায় রাখতে কাজ করছে বুঝতে পেরে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।
শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বর্ধিত সভায় এসব কথা বলেন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের।
নির্বাচনের প্রায় সাড়ে তিন মাস পর কেন্দ্রীয় কমিটির সামনে তিনি বলেছেন, আগেই বুঝেছিলাম, বিএনপির আন্দোলন সফল হবে না। তিন বিদেশি বড় শক্তি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। তাই দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। তবে ভোট ভালো হয়নি।
গত বছরের ১২ নভেম্বর বর্ধিত সভায় জাপার নেতারা নির্বাচন বর্জনের পক্ষে মতামত দেন। তবে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ২৬ আসনে ছাড় পেয়ে নির্বাচনে অংশ নেন জি এম কাদের।
নির্বাচনের আগের পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করে কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় জি এম কাদের বলেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গে বৈঠকে করে পরিষ্কার বুঝেছি, তিনটি বিদেশি বড় শক্তি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে এবং নির্বাচন সফল করতে কাজ করে যাচ্ছে। শুধু তারা নয়, আরও বেশ কয়েকটি বিদেশি শক্তি আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করতে প্রস্তুত ছিলো।
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ১১টি আসন পায় একাদশ সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে ২৬জন প্রার্থী দিয়েছিলো দলটি। নির্বাচনে ভরাডুবির জেরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে তুলোধুনো করেন দলটির পরাজিত প্রার্থীরা।
এই নির্বাচনে অংশ না নিয়ে আলাদা দল গঠন করেছেন জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। রওশন এরশাদ ঘোষিত জাতীয় পার্টির নতুন মহাসচিব মামুনুর রশীদ। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রতিষ্ঠিত দলটি এ নিয়ে অন্তত ছয় বার বিভক্ত হয়েছে।
২৮ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি থেকে জি এম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নুকে অব্যাহতি দেন রওশন এরশাদ।
নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রশ্নে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিল জানিয়ে জাপা চেয়ারম্যান কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় বলেন, নির্বাচন বন্ধ করে কোনো দেশে সরকার পরিবর্তন সম্ভব নয়। তাই জাতীয় পার্টি নিয়মতান্ত্রিকভাবে রাজনীতি করছে। নির্বাচনের আগে বর্ধিত সভায় নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে মতামত দেওয়া হয়েছিলো। ভোটে না গেলে ভবিষ্যতে জাতীয় পার্টিকে টিকিয়ে রাখা যাবে কি না সন্দেহ ছিল, তাই নির্বাচনে গিয়েছি। আপনারা আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। ভোটের আগ মুহূর্তে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তখন সুষ্ঠুভাবে পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করেছি। মনে হয়েছে, বিভিন্ন বিদেশি শক্তি বিভিন্নভাবে নানা দিকে নিচ্ছিলেন। আর বিএনপির আন্দোলন নিয়ে পরিষ্কার ধারণা ছিলো, তারা সফল হবে না।
তিনি বলেন, আন্দোলন চলাকালে তৃতীয় শক্তি এসে সরকার পরিবর্তন করে, এমন ইতিহাস বাংলাদেশে নেই। ফলে, বিএনপির এক কিংবা ১০ লাখ বা এক কোটি লোক নিয়ে রাস্তায় নামলেও বিএনপির আন্দোলন সফল হবে না, তা বুঝতে পেরেছিলাম।
বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, বিএনপি ও জামায়াত আন্দোলনে পরাস্ত হয়ে জাতীয় পার্টিকে দোষ দিচ্ছে। তবে এটা ঠিক নির্বাচন ভালো হয়নি। সরকার জাতীয় পার্টিকে গৃহপালিত দল হিসেবে দেখতে চায়, যা কখনও সম্ভব নয়। জাতীয় পার্টি কখনোই অনুগত বিরোধী দল ছিলো না। এবং জাতীয় পার্টি গৃহপালিত বিরোধী দল হতে রাজি না।
যারা রওশন এরশাদের সঙ্গে নতুন দলে গিয়ে তারা ভুল করেছেন বলে মনে করেন জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, সারাদেশে জাপার নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায়নি, এজন্য অনেক সমস্যা জড়িত। যেমন শাসক দলের দৌরাত্ম্য, প্রশাসনের নিরপেক্ষতার অভাব। বলা যায়, আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র যারা ছিলেন তাদের পক্ষে প্রশাসন কাজ করেছে। নিরপেক্ষতার অভাবে লাঙলের প্রার্থীরা পাস করেনি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রশাসন কাজ করেছে। প্রশাসনের নিরপেক্ষতার অভাবে জাতীয় পার্টির অনেক প্রাথী হেরেছে। দলকে সংগঠিত করতে হবে, আগামীতে দেশকে নেতৃত্ব দিতে হলে।