বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে রোডম্যাপ আশা করেছিলেন তিনি।
সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান কাজী জাফরের নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান উপদেষ্টার জাতির উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, একটা জিনিস আমি খুব… এখনও আমি ধোঁয়াশা যে অবস্থাটা, সেটা আমার কাছে পরিষ্কার হয়নি। আমরা আশা করেছিলাম যে, প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় একটা রোডম্যাপ দেবেন। সেই রোডম্যাপ ফর ট্রানজিশন টু ডেমোক্রেসি, এটা ওনার বক্তব্যের মধ্যে পাইনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, রিফর্মসের কথা বলেছেন, সেই রিফর্মসগুলো কোন কোন বিষয়… সেটারও কিছু কিছু তিনি আভাস দিয়েছেন। আমি জানি, সেগুলো এই অল্প সময়ের মধ্যে সম্ভব না। তবে সেটা সম্পর্কে একটা ধারণা থাকলে আরও বেশি করে ধারণা করতে পারতাম- ঘটনা আসলে ভালোর দিকে যাচ্ছে। যাই হোক, আমাদের প্রত্যাশা ভালোর দিকে যায়… এটা জনগণের প্রত্যাশা।
‘কবে নির্বাচন হবে এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’ প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্য উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, উনি সঠিক বলেছেন। অবশ্যই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হবে। এই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তো রাজনৈতিক নেতা, রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, আমি আশা করবো, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা সেই প্রক্রিয়াটির দিকে যাবেন, খুব দ্রুত যাবেন এবং তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলবেন।
ফখরুল বলেন, আমাদেরকে এখন অত্যন্ত ধৈর্য ধরে, অত্যন্ত সর্তকতার সঙ্গে পা বাড়াতে হবে। এই সরকার এসেছে, এই সরকার অবশ্যই কাজ করার জন্য এসেছে। সেই কাজ করার সুযোগ তাদেরকে দিতে হবে। এই কথা আমরা বার বার বলছি, যৌক্তিক সময় অবশ্যই তাদেরকে দিতে চাই।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচন ছাড়া তো সম্ভব নয়… নির্বাচন হতেই হবে। নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু অবাধ হয়, সবাই যেন ভোট দিতে পারে এবং এই নির্বাচনের ফলে এমন একটা অবস্থা তৈরি না হয় যে, আবার সেই আগের অবস্থা ফিরে আসে। তাহলে সেটা কখনই জনগণ মেনে নেবে না। সেজন্য ধৈর্য ধরে আমরা অপেক্ষা করছি, জনগণ অপেক্ষা করছে। কিন্তু সেটা অবশ্যই একটা যৌক্তিক সময় পর্যন্ত হতে হবে। আমি বিশ্বাস করি যে, সেই যৌক্তিক সময়ের মধ্যে অবশ্যই একটা নির্বাচন হবে, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন- পুলিশ স্টেট যাতে কেউ না বানাতে পারে, সেই অবস্থা তৈরি করবেন। অত্যন্ত ভালো কথা। আমরা এটাই চাচ্ছি সব সময়… যে আমরা পুলিশ স্টেটে পরিণত হতে চাই না, পুলিশ আমাদের নিয়ন্ত্রণ করবে, পুলিশ প্রতি মুহূর্তে আমাদের বলে দেবে যে, এটা করা যাবে, এটা করা যাবে না, অথবা মিথ্যা মামলা দিয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে করে আমাদের সর্বনাশ করবে, আমাদের ছেলেদের গুলি করবে… এটা আমরা আর দেখতে চাই না। এটা যদি ওনারা করে আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা তাদের প্রতি থাকবে।
বিএনপি মহাসচিব ফখরুল বলেন, তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) বলেছেন, জাস্টিস টু বি এনসিওর অল এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিংস এনফোর্স ডিসঅ্যাপিয়ারেন্সেস…আমরা এটাই চাচ্ছি। বার বার করে বলছি এই বিচার করতেই হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, একইসঙ্গে বলছি, আজকে স্বৈরাচারের (গত সরকার) বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে আমাদের প্রায় ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে, গায়েবি মামলা হয়েছে সেগুলোকে অবিলম্বে তুলে ফেলতে হবে। আমরা পত্রিকায় দেখলাম যে, প্রধান উপদেষ্টার মামলা চলে গেছে… ওঠানো হয়েছে। আরেকজন উপদেষ্টার মামলা ওঠানো হয়েছে…সাজা ছিল, সেই সাজা বাতিল করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের একজন মানুষও নাই… বিএনপি বলেন, জামায়াত বলেন, এখানে আমরা যারা বসে আছি, যাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা নাই। আমাদের আশা- এই এক লাখ ৪৫ হাজার মামলা অবিলম্বে তুলে দিতে হবে।
পুলিশ রিফর্মের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য সমর্থন করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরাও এটি চাই। সেদিন আইজিপি বলেছেন, পুলিশকে জনগণের পুলিশ তৈরি করা হবে, এটাকে আদর্শ পুলিশ তৈরি করা হবে। আমরা এটা চাই, খুব দ্রুত চাই।
আনসার সদস্যদের বিক্ষোভ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, গতকাল (রোববার) যে ঘটনা ঘটেছে, সচিবালয় ঘেরাও করে আনসার এবং কিছু লোকজন…পোশাকধারী লোক, তারা গোলযোগ সৃষ্টি করে সেখানে সমস্যা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। ছাত্ররা সেটাকে নস্যাৎ করে দিয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা কিন্তু অশনি সংকেত। এটা ভালো লক্ষণ নয়। অর্থাৎ যারা পরাজিত তারা এখন আবারও বিভিন্নভাবে সেই চক্রান্ত করছে, এ বিজয়কে নস্যাৎ করে দেওয়ার জন্য। তাই জনগণকে আহ্বান জানাবো যে, আপনারা সবাই সর্তক থাকবেন। এই বিষয়গুলোকে কখনও প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, আমি দেশের বিভিন্ন সংগঠন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান- যারা সমস্যায় আছেন সব জায়গায়, তাদের কাছে অনুরোধ করবো- যখন ফ্যাসিবাদ ছিলো তখন দাঁড়াবার কথা তো চিন্তাই করতে পারতেন না, কথা বলার সুযোগ পেতেন না। এখন সুযোগ এসেছে… সময় দিন নতুন সরকারকে। তারা এই বিষয়গুলো দেখবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, কিন্তু এভাবে সচিবালয় ঘেরাও করে, বাধ্য করে কোনো কিছু আদায় করা এই মুহূর্তে করবেন না। জনগণ সেটাকে ভালো চোখে দেখবে না।
বিএনপি মহাসিচব বলেন, আমি ছাত্র ভাইদের উদ্দেশে কিছু কথা বলতে চাই। সব সময় ছাত্ররাই সব পরিবর্তনগুলো নিয়ে এসেছে। ’৫২ সাল থেকে শুরু করে ’২৪ সাল পর্যন্ত এবং সেই পরিবর্তনের মূল ধারাটা সেটা তারা সেট করে দিয়েছে। সেজন্য বাংলাদেশের মানুষ সবসময় ছাত্রদের আলাদা চোখে দেখে। সম্মান করে ভালোবাসে, তাদের প্রতি আস্থা তাদের সবসময় থাকে।
তিনি বলেন, একইসঙ্গে আমি একজন শিক্ষক হিসেবে আমাদের স্কুল কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানাতে চাই- অযথা বল প্রয়োগ করে এমন অবস্থা তৈরি করবেন না, যাতে প্রশাসন নষ্ট হয়ে যায়। আমরা দেখলাম যে, কিছু স্কুল-কলেজ বাধ্য করছে শিক্ষকদের রিজাইন করে চলে যাওয়ার জন্য। এটার তো ব্যবস্থা আছেই… অভিযোগ করেন, অভিযোগ প্রমাণ হলে চলে যাবে। কিন্তু তাকে কাজ করতে দিতে হবে।
জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে যুগ্ম মহাসচিব এএসএম শামীমের সঞ্চলনায় আলোচনা সভায় ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জাতীয় পার্টির মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, প্রয়াত কাজী জাফরের বড় মেয়ে কাজী জয়া, ভাতিজা কাজী মো. নাহিদ বক্তব্য রাখেন।