ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শুরু হওয়া বিভিন্ন দুর্নীতির তদন্ত শুরুর সময়ে সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় সাবেক সরকার প্রধানের দালালদের ‘অপকর্ম’ দেখতে পাচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সারজিস আলম।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সচিবালয়ের পোড়া ভবনের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে সারজিস আলম বলেছেন, শেখ হাসিনার দালালেরা বিভিন্ন অপকর্মের নথি আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। যখনই বিপ্লবীরা হাসিনার অপকর্ম, চুরি, লুটপাট, দুর্নীতির দিকে নজর দিয়েছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে, তখনই সচিবালয়ে ঘাপটি মেরে থাকা হাসিনার দালালেরা বিভিন্ন অপকর্মের ফাইলগুলোকে আগুনে পুড়িয়ে দিল।
ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারে তিন উপদেষ্টা হওয়া নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমকে ট্যাগ করে ওই পোস্ট তিনি লিখেছেন, যখনই বিপ্লবীরা হাসিনার অপকর্ম, চুরি, লুটপাট, দুর্নীতির দিকে নজর দিয়েছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে, তখনই সচিবালয়ে ঘাপটি মেরে থাকা হাসিনার দালালেরা বিভিন্ন অপকর্মের ফাইলগুলোকে আগুনে পুড়িয়ে দিল।
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস লিখেছেন, বিগত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগের যারা চাটার দল ছিল, তাদের মধ্যে অন্যতম স্টেকহোল্ডার ছিল আমলাদের বৃহৎ একটা অংশ। এদের উপর ভর দিয়েই হাসিনা এই দেশে তার ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিল।
জাতীয় নাগরিক কমিটির এই নেতা বলেন, রাষ্ট্র সংস্কার করতে হলে সবার আগে আমলাতন্ত্র ও প্রশাসনে যেসব চাটার দল এখনো ঘাপটি মেরে লুকিয়ে আছে, তাদের শেকড় থেকে উপড়ে ফেলতে হবে।
উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, সাবধান করার সময় আর নাই। তিনি লেখেন, নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, মাহফুজ আলম ভাই- বিপ্লবী ভূমিকায় অবতীর্ণ হোন। পুরো বাংলাদেশে আপনাদের সাথে আছে।
‘সচিবালয়ে পরিকল্পনা করে অগ্নিকাণ্ড ঘটানো হয়েছে’
সচিবালয়ে আগুনের ঘটনাটি ‘ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পিত’ বলে মন্তব্য করে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, আগুন শুধুমাত্র আমাদের দুই সহযোদ্ধা আসিফ মাহমুদ ও নাহিদ ইসলামের রুমে লাগানো হয়েছে। সেখানে কুকুরের মরদেহ প্রমাণ করে এটি ষড়যন্ত্র।
বৃহস্পতিবার দুপুরের পর পঞ্চগড় সরকারি অডিটরিয়মে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেন, সচিবালয়ে আমলারা খুনি হাসিনাকে বসিয়ে রেখেছিলো। গণঅভ্যুত্থানের আগে কিছু আমলা নামক দাস ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় স্লোগান দিয়েছে খুনি হাসিনার পক্ষে। তারা এখনো সচিবালয়ে চাকরি করে। তারা চাকরি করলে সচিবালয় কীভাবে নিরাপদ থাকবে?
হয় সাদা নয়তো কালা। তাদের চেয়ারে বসিয়ে রাখলে তাদের দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পাওয়া সম্ভব না। সে কারণে এখন অপকর্ম হচ্ছে, দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন হচ্ছে।
তিনি বলেন, বলেন, ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে যারা সরকারে প্রতিনিধিত্ব করছে, নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ; তাদের অফিসগুলো জ্বলেপুড়ে শেষ হয়ে গেছে। সেখানে খুনি শেখ হাসিনার দালালদের বিভিন্ন সময়ের অন্যায়, অপকর্ম, দুর্নীতির ফাইলগুলো ছিল। এই ফাইলগুলো তারা যখন বিভিন্নভাবে তদন্ত করছিল, এই ফাইলগুলো সংরক্ষণ করছিল বিচারের জন্য, ঠিক তখনি এই সচিবালয়ে এ রকম একটি পরিকল্পনা করে অগ্নিকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।
সরকারের উদ্দেশে সারজিস বলেন, আসলে এত বড় অভ্যুত্থানের পরে আমাদের যেই বিপ্লবী ভূমিকায় থাকা উচিত ছিল, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে যেই বিপ্লবী ভূমিকায় থাকা উচিত ছিল, আমরা এখন পর্যন্ত সেটা হতে পারিনি। আমরা আসলে বেশি ভালো সাজতে গিয়েছি, সুশীল হতে গিয়েছি, সুযোগ দিতে গিয়েছি।
কিন্তু যাদের রক্তে দালালি, যাদের রক্তে দাসত্ব, যারা এত বছরের অপকর্মের সাথে জড়িত, তাদেরকে আপনি যতই সুযোগ দেন কোনো লাভ নেই। আমরা আমাদের জায়গা থেকে মনে করি, অন্তর্বর্তী সরকারে আমাদের যারা প্রতিনিধি রয়েছে, আমরা যারা রাজপথে রয়েছি আমাদের এখন সময় এসেছে এই বিপ্লবকে ধারণ করে বিপ্লবী ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার।
সারজিস আলম বলেন, যে কোনো জায়গায়, সেটা সচিবালয় হোক, আমলাতন্ত্র হোক, বাংলাদেশের যেকোনো সরকারি অফিসে হোক। কেউ যদি বিন্দুমাত্র অন্যায়–অনিয়ম, অপকর্ম, দুর্নীতি, ঘুষ এগুলোর সাথে জড়িত থাকে, তাদের চেয়ার থেকে টেনে তুলতে হবে। এই সুযোগ আর দেওয়া যাবে না।
ওই তিন, চার, পাঁচই আগস্টে খুনি শেখ হাসিনার পক্ষে স্লোগান দিয়েছিল, তারা এখনো কীভাবে সচিবালয়ে বসে অফিস করে? অথচ এই অভ্যুত্থান যদি সফল না হতো। তাহলে ওই খুনি শেষ হাসিনার দোসররাই আমরা যারা আন্দোলন করেছি, আমাদের সকলকে জেলে ভরার জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা করতো।
সচিবালয়ের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে সারজিস আলম বলেন, সচিবালয়ের এই ঘটনার একদম সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে। তদন্ত করে তাদের দৃশ্যমান বিচারের আওতায় আনতে হবে। এ রকম ঘটনা আর যেন না হয়, সেটার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার এবং রাজপথে যারা রয়েছে, তাদের সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করতে হবে।
পরে বিকালের দিকে ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবের হলরুমে জাতীয় নাগরিক কমিটির ‘ঠাকুরগাঁও রাইজিং’ প্রোগ্রামে উপস্থিত হয়েও বক্তব্য রাখেন সারজিস আলম।