জুলাই সনদ। যা নিয়ে চলছে রাজনীতিতে নানা সমীকরণ। বিএনপির এক নীতি নির্ধারক বলছেন, বিষয়বস্তু দেখেই এতে সই করবেন তারা। জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলোর মত, ওই সনদের আলোকেই হতে হবে আগামী নির্বাচন। অন্যদিকে, অভ্যুত্থানকারী শিক্ষার্থীদের দল এনসিপি বলছে, নব্বইয়ের তিন জোটের রূপরেখার মতো জুলাই সনদের পরিণতি দেখতে চায় না তারা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থান মনে রাখতে এই সনদের বিকল্প নেই।
গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান অন্যরকম প্রাণ দেয় বাংলাদেশের রাজনীতিকে। দীর্ঘদিন ধরে জেকে বসা স্বৈরাচার-ফ্যাসিস্ট সরকারের বিদায় ঘণ্টা বাজিয়ে দেয় তরুণ প্রজন্ম। স্বৈরাচার সরকারের প্রধান পালিয়ে গেলে নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি উপদেষ্টা পরিষদ দায়িত্ব নেয়।
এর পর গঠন করা হয় বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশন। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আলোচনা করছে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে। ঐকমত্যের ভিত্তিতে সবাই মিলে প্রণয়ন করবে জুলাই সনদ। যেখানে থাকবে নতুন বাংলাদেশ পরিচালনার রূপরেখা।
তবে রাজনীতির ঘটনা প্রবাহে, অভ্যুত্থানের পরপরই যে রকম ঐক্য ছিলো, এখন সেটা তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। জুলাই সনদ নিয়েও সাবধানি বার্তা দলগুলোর। এই মুহূর্তে দেশের প্রধান দল- বিএনপি এই সনদ নিয়ে একমত। তবে ভেতরে কি থাকবে তা নিয়ে সতর্ক তারা।
কি বলছে অন্যান্য দলগুলো? বিশেষ করে ইসলামপন্থী দলগুলোর দাবি, যেভাবেই হোক জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে। জুলাই সনদ প্রণয়ন যে ঐকমত্য কমিশন করছে, তার সভাপতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। তাঁর কার্যালয় বলছে, যত দ্রুত সম্ভব এই কাজ শেষ করতে চান তারা।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এ রকম সনদ নতুন কোন বিষয় নয়। নব্বই দশকের স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতনের আগে করা হয় তিন জোটের রূপরেখা। এতে সই করে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও বাম ঘরানার দলগুলোর তিন জোট। রূপরেখায় দেশের সবক্ষেত্রে গণতন্ত্র প্রবর্তন, সাম্প্রদায়িকতা পরিহার এবং একে অপরের প্রতি বিদ্বেষমূলক আচরণ না করাসহ বেশ কিছু বিষয়ে অঙ্গীকার করে রাজনৈতিক দলগুলো।
তবে এর পরের অভিজ্ঞতা বেশ সুখকর নয়। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর শুধু গণতন্ত্রে ফেরা ছাড়া আর কোন কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। তাই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থীরা বলছেন, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়েছেন তারা। তাই তারা একানব্বইয়ের সেই পুনরাবৃত্তি দেখতে চান না।
অধ্যাপক সাব্বীর আহমেদ, বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে পড়াচ্ছেন রাজনীতি। এই বিশ্লেষকও বলছিলেন, সামনের রাজনীতির জন্য জুলাই সনদ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। শাসনতান্ত্রিক কাঠামোয় কোন কোন বিষয় পরিবর্তন আনা হবে, সেটাই উল্লেখ থাকবে জুলাই সনদে, আর সেদিকেই তাকিয়ে আছে সবাই।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আসছে জুলাই মাসেই প্রণয়ন হবে জুলাই সনদ। ১৯৯০ সালের ৩ জোটের রূপরেখার মতো জুলাই সনদের ভবিষ্যৎ কি একই হবে নাকি, এই সনদকে ঘিরেই পরিবর্তন হবে বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থা, সর্বোপরি গড়ে উঠবে নতুন বাংলাদেশ- তা বলে দিবে সময়ই।