ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস। তারই জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে থাকলো ক্রাইস্টচার্চ। সহজ ক্যাচ ফেলে দেয়ার খেসারত হিসাবে কিউইদের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেও ফসকে গেছে টাইগারদের হাত থেকে।
ক্রাইস্টচার্চে দিবারাত্রির ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছে ৫ উইকেটে। ফলে এক ম্যাচ হাতে রেখেই ২-০ তে সিরিজ নিশ্চিত করে নিয়েছে স্বাগতিকরা। প্রথমে ব্যাট করে তামিমরা ২৭২ রানের লড়িয়ে পূঁজি পেলেও, ১০ বল হাতে রেখেই জয় নিশ্চিত করে কিউইরা।
শুধু তাই নয়, হ্যাগলি ওভালে রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডও করেছে নিউজিল্যান্ড। এই মাঠে ২৬০ রানের বেশি তাড়া করে জয় এটিই প্রথম। সেই অর্জন সম্ভব হয়েছে টম লাথামের হার না মানা ১১০ রানের ইনিংসে।
তবে লাথামের এই ম্যাচ জয়ী ইনিংসে বাংলাদেশ দলের ফিল্ডারদের ভূমিকাও কম নয়। জীবন পাওয়ার সময় তার রান ছিল ৫৮। অন্যদিকে লাথামের সঙ্গী নিশামকেও জীবন দিয়েছেন উইকেটকিপার মুশফিকুর রহিম। পরে নিশাম আউট হন ৩০ রানে।
এই দুই জনের ৭২ বলে ৭৬ রানের জুটিই কিউইদের জয়ের ভিত গড়ে দেয়ার আগ পর্যন্ত টাইগাররা জয়ের রাস্তাতেই ছিলো। ওপেনার মার্টিস গাপটিল বিপজ্জনক হয়ে উঠার আগেই তাকে দুর্দান্ত এক স্লোয়ারে ফেরান পেসার মুস্তাফিজুর রহমান।
এরপর পাওয়ার প্লের ভেতরেই আক্রমণে আসেন মেহেদি হাসান। এই অফ স্পিনারের প্রথম দুই ওভারে বোল্ড হেনরি নিকোলস ও উইল ইয়াং। ১১ ওভার শেষে নিউ জিল্যান্ডের ছিল ৩ উইকেটে ৫৩।
সেখান থেকে দলকে এগিয়ে নেয় ল্যাথাম ও ডেভন কনওয়ের জুটি। পরিস্থিতি মাথায় রেখে সেভাবেই ব্যাট করতে থাকেন তারা। ১২৩ বলে শতরানের জুটি গড়ে ম্যাচকে আবারো নিজেদের দখলে নেয় নিউজিল্যান্ড।
তামিমের সরাসরি থ্রোতে কনওয়ে সাজঘরে ফেরার পর বাংলাদেশ আবারো লড়াইয়ে ফেরার সুযোগ তৈরি করলেও, সব আয়োজন ভেস্তে যায় দুই ক্যাচ ফেলে দেয়ায়। যার সুযোগ নিয়ে লাথাম, নিশাম আর মিচেল দলের জয় নিশ্চিত করে নেন।
এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শুরুতেই খেই হারানোর গল্পটা বদলে দেন তামিম ইকবাল। ১১ বাউন্ডারিতে খেলেন ৭৮ রানের ইনিংস। এর মধ্য দিয়ে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তুলে নেন ফিফটির ফিফটি। একই সঙ্গে ওয়ানডে ক্রিকেটে ৮৩১ ওপেনারের মধ্যে সপ্তম ক্রিকেটার হিসেবে ৫০টা অর্ধশতকের অনন্য রেকর্ডের মালিক বনে যান এই বাংলাদেশি ওপেনারের।
তামিমের এই উপাখ্যানের আগেই অবশ্য ব্যর্থতার কালিমা একে যান লিটন দাস। ম্যাট হ্যানরির শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দেন স্কয়ার লেগে। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে লিটনের এমন ব্যর্থতার গল্প সবশেষ ৫ ম্যাচ ধরেই।
দুই ওপেনারে বিদায়ের পর মুশফিক-মিঠুনের ফিফটি রানের জুটি বড় সংগ্রহের পথ দেখায়। কিন্তু যখনই শেষ ১০ ওভারে রান তোলার সময় এসেছে সেট হয়েও মুশির এমন শট অবাকই করেছে।
তবে নিয়মিত উপহাসের শিকার হওয়া মোহাম্মদ মিঠুন এদিন কিউই বোলারদের নিয়ে উপহাস করেছেন। ডেথ ওভারে দারুণ ফিনিশিংয়ে ৪৩ বলেই তুলে নিয়েছেন ফিফটি। ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ অর্ধশতকের পাশাপাশি নিউজিল্যান্ডের মাটিতে খেলা শেষ চার ম্যাচের তিনটাতেই তার ফিফটি।
তাসমান পাড়ের ওপারে বাকিরা যখন ধুকতে থাকে তখন নিয়োমিত রান করা মোহাম্মদ মিঠুন শেষ ১০ ওভারে উঠিয়েছে ৮৮ রান। শেষ পর্যন্ত নিজে ৭৩ রানে অপরাজিত থেকেছেন, দলকে ২৭১ রানের লড়াই করার মতো পুঁজি এনে দেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ২৭১/৬, ৫০ ওভার (তামিম ৭৮, লিটন ০, সৌম্য ৩২, মুশফিক ৩৪, মিঠুন ৭৩*, মাহমুদউল্লাহ ১৬, মেহেদি ৭, সাইফ ৭*; বোল্ট ১/৪৯, হেনরি ১/৪৮, জেমিসন ১/৩৬, স্যান্টনার ২/৫১, এবং নিউজিল্যান্ড ২৭৫/৫, ৪৮.২ ওভার (গাপটিল ২০, নিকোলস ১৩, কনওয়ে ৭২, ইয়াং ১, ল্যাথাম ১১০*, নিশাম ৩০, মিচেল ১২*; মুস্তাফিজ ২/৬২, মেহেদি ২/৪২।
ফল: নিউজিল্যান্ড ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: টম ল্যাথাম।