শারীরিক প্রতিবন্ধী জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় বাদশা মিয়া। দলে বাদশা মিয়ার ভূমিকা পেস বোলার ও টেল এন্ডার ব্যাটসম্যান।
জন্মের পর এক অগ্নিকাণ্ডে তার শরীরের বামপাশ ও মুখমণ্ডল দগ্ধ হয়। সেই থেকে বাম হাত প্রায় অকেজো, মুখমণ্ডলেও বয়ে বেড়াচ্ছেন ক্ষতচিহ্ন।
একহাত বিকল হলেও থেমে থাকেননি বাদশা মিয়া। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ মিজমিজি এলাকায় নিয়মিত ক্রিকেট খেলতেন। ২০১৫ সালে তার শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ক্রিকেট শুরু, জাতীয় দলে সুযোগ পান পরের বছর।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে ক্রিকেটের মাঠে পৌঁছে গেলেও, জীবনের প্রতিবন্ধকতা জয় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বাদশাকে। ছোট এক অফিসের টি-বয় বাদশা মিয়া বর্তমানে পেশায় হকার। বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দোকানে চা সরবরাহ করেন।
বাদশা মিয়া জানান, জাতীয় দলে খেলাটা উপভোগ করেন তিনি। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র ও স্থানীয় কাউন্সিলররা তাকে উৎসাহও দিয়ে যাচ্ছেন।
‘উৎসাহ পাচ্ছি ঠিকই, তা দিয়ে তো আর সংসার চলবে না’, দীর্ঘশ্বাস ভরা কণ্ঠে বলেন বাদশা মিয়া।
হালের বাংলাদেশ ক্রিকেট অভিজাত্য অর্জন করলেও বাদশা মিয়াদের ডাল-ভাতের অনিশ্চয়তা এখনও কাটেনি! এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকারের উর্ধ্বতন মহল ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) দিকে চেয়ে আছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটাররা।
এ প্রসঙ্গে ২৪ বছর বয়সী বাদশা মিয়া বলেন, ‘আমরা চাই শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের আওতায় নিয়ে আসা হোক।’
তাহলে তাদের সুযোগ-সুবিধা ও আর্থিক নিরাপত্তা কিছুটা নিশ্চিত হবে এবং পুরোপুরি খেলার দিকে মনোযোগ দিতে পারবেন বলে মনে করেন বাদশা।
বাবা-মা, ভাই-বোন নিয়ে পাঁচজনের সংসার বাদশার। পরিবারের বড় সন্তান তিনি। সংসারের বোঝাও নিজের কাঁধে।
শারীরিক প্রতিবন্ধী দলের খেলা চলাকালে কাজ ফেলে আসতে হয় তাকে। খেলা থেকে যা পাওয়া যায়, তা সংসারের চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।
বঙ্গবন্ধু চার জাতি শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেট খেলতে আসা বাদশা মিয়া বলেন, ‘খেলতে আসায় আমার কাজ বন্ধ। আমি যেসব দোকানে চা সরবরাহ করি, এখানে ব্যস্ত থাকায় তার অনেক দোকান হয়তো হাতছাড়া হয়ে যাবে।’
এমন অচলাবস্থা কাটাতে সরকার ও বিসিবির কাছে শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটারদের একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসার দাবি জানান তিনি।
একাত্তর/জো