মিরপুরের মাঠে লজ্জার শেষটাও দেখে ছাড়লো প্রবল প্রতাপশালী অস্ট্রেলিয়া কিংবা বলা যায় বাঘের থাবাকে অবজ্ঞা করার ফল পেয়েছে ক্যাঙ্গারু।
সিরিজের ৫ম ও শেষ টি-২০তে বাংলাদেশের দেওয়া ১২২ রান তাড়া করতে নেমে ১৩ ওভার ৩ বলেই ৬২ রানে অস্ট্রেলিয়া খুইয়েছে সবগুলো উইকেট। ৬০ রানে বাংলাদেশের বিজয়ের মধ্য দিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন ইতিহাস। টি-২০তে অস্ট্রেলিয়ার সর্বনিম্ন রানের রেকর্ডটা লেখা হলো মিরপুরের মাঠে। এর আগে ক্রিকেটের শর্ট ফর্মেটে অস্ট্রেলিয়ার সর্বনিম্ন স্কোর ছিল সাউদাম্পটন মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৯ রান।
এই রেকর্ডের মধ্যে দিয়েই পাঁচ ম্যাচের এই সিরিজ শেষ হলো অস্ট্রেলিয়ার সাথে বিপক্ষে ৪-১ ম্যাচ জয়ের ব্যবধানে।
বাংলাদেশের এই জয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও মন্ত্রীপরিষদের সদস্যবৃন্দ।
এদিকে, এইম্যাচে দুটি ব্যক্তিগত রেকর্ড গড়েছেন সাকিব আল হাসান। তিন ওভার ৪ বলে মাত্র ৯ রানে ৪ উইকেট তুলে নেওয়া ম্যাজিকাল স্পেলে পুষিয়ে দিয়েছেন গত ম্যাচের ছন্দহারা বোলিং ব্যর্থতা। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে সাকিব গড়েছেন টি-২০তে ১ হাজার রান ও ১০০ উইকেট নেবার কৃতিত্ব। এছাড়া, টি-২০তে নিজের ৮৪ তম ম্যাচ খেলতে নেমে প্রথমবারের মতো এলবিডব্লিউ এর ফাঁদে পড়েছেন সাকিব। যা আরেকটি রেকর্ড। সবচেয়ে কম এলডব্লিউয়ের তালিকায় সাকিবের উপরে আছেন মাত্র ১ জন, ভারতের হয়ে টি-২০ বিশ্বকাপ জেতা সাবেক অধিনায়ক মাহেন্দ্র সিং ধনি। ৮৫ টি-২০ ইনিংসে একবারও এলবিডব্লিউ এর ফাঁদে পড়েননি এই উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান।
স্বীকৃতি স্বরূপ ম্যাচে ও পুরো সিরিজে স্বকীয়তার ছাপ রাখায় সাকিব লুফে নিয়েছেন ম্যান অব দ্যা ম্যাচ ও ম্যান অব দ্যা সিরিজের পুরষ্কার।
সাকিব ছাড়াও এই ম্যাচে টাইগারদের পক্ষে যথেক্রমে ৩ টি ২ টি ও একটি করে উইকেট নিয়েছেন সাইফুদ্দিন, নাসুম ও ক্যাপ্টেন মাহমুদুল্লাহ।
লজ্জার এই ম্যাচে অজিদের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করেছে পরাজিত কাপ্তান ম্যাথু ওয়েড। দুই ছক্কায় তার ২২ বলে ২২ রানের ইনিংস অতিক্রম করতে পারেনি অজি শিবিরের আর কেউ।
এর আগে, সিরিজের ৫ম ও সর্বশেষ টি-৮০ ম্যাচে অজিদের বোলিং তোপে ২০ ওভারে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ৮ উইকেটে ১২২ রান।
৩-১ ব্যবধানে সিরিজে এগিয়ে থাকা টাইগাররা টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। এদিন ব্যাটিংয়ের উদ্বোধন করেন শেখ মেহেদী হাসান ও নাঈম শেখ। ৪.৩ ওভারে ৪২ রান এনে দেয় এই উদ্বোধনী জুটি।
মেহেদী ১২ বলে ১৩ রান করে ফিরলেও নাঈম দিচ্ছিলেন ইনিংস বড় করার ইঙ্গিত। ওয়ান ডাউনে নেমে সাকিব আল হাসান এদিনও ছন্দে ছিলেন না। ২০ বল মোকাবেলা করে সাজঘরে ফেরার আগে করেন মাত্র ১১ রান। তার আগে অবশ্য বিদায় নেন নাঈম, একটি করে চার-ছক্কায় ২৩ বলে ২৩ রান করে।
সমালোচনার মুখে থাকা সৌম্য সরকার চার নম্বরে নেমে শ্লথ শুরু করে। ১৪ বলে ১৯ রান করে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বিদায় নেওয়ার পর মারমুখী ব্যাটিংয়ের চেষ্টা করেন সৌম্য। তবে একটি করে চার-ছক্কা হাঁকালেও ১৮ বলে ১৬ রান করে ফেরেন সাজঘরে, সিরিজে নিজের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলে।
এরপর নুরুল হাসান সোহানের ১৩ বলে ৮, আফিফ হোসেন ধ্রুবর ১১ বলে ১০ এবং একাদশে ফেরা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের ৯ বলে ৫ রানের ইনিংস বাংলাদেশকে এনে দেয় স্বল্প পুঁজি। অজি বোলারদের দেওয়া এক্সট্রা ১৮ রান পেয়েছে বাংলাদেশ।
১৫ ওভারে ১০২ রান জড়ো করা বাংলাদেশের নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে দলীয় সংগ্রহ দাঁড়ায় ১২২ রান। অজিদের পক্ষে নাথান এলিস ও ড্যান ক্রিশ্চিয়ান দুটি করে উইকেট শিকার করেন।
যদিও ক্রিকেটে শেষ হাসি যার, সব হাসি তার। তবে, শুধু হাসি নয়, ক্যাঙ্গারুদের বিপক্ষে এই সিরিজ শেষ হলো যেন বাঘের গর্জন দিয়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
টস : বাংলাদেশ
বাংলাদেশ : ১২২/৮ (২০ ওভার)
নাঈম ২৩, রিয়াদ ১৯, সৌম্য ১৬, মেহেদী ১৩
এলিস ১৬/২, ক্রিশ্চিয়ান ১৭/৪
অস্ট্রেলিয়া : ৬২/১০ (১৩.৪ ওভার)
ওয়েড ২২, ম্যাকডারমট ১৭
সাকিব ৯/৪, সাইফউদ্দিন ১২/৩, নাসুম ৮/২
ফল : বাংলাদেশ ৬০ রানে জয়ী।
একাত্তর/এসএ