ভয়ডরহীন ফুটবল খেলে সিঙ্গাপুরকে হারানোর লক্ষ্য নিয়ে আজ মাঠে নেমেছিলো টিম বাংলাদেশ। স্টেডিয়ামে ছিলো দর্শকের জোয়ার। ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দুই দলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চললেও, শেষ হাসি হেসেছে সিঙ্গাপুর। দ্বীপ দেশটির কাছে ২-১ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ ফুটবল দল।
সিঙ্গাপুরের হয়ে গোল দুটি করেছেন মিডফিল্ডার সং উয়ং ও ফরোয়ার্ড ইকশান ফান্ডি। আর বাংলাদেশের এক গোল পরিশোধ করেছেন রাকিব হোসেন।
মঙ্গলবার (১০ জুন) সন্ধ্যা ৭টায় রাজধানীর জাতীয় স্টেডিয়ামে শুরু হওয়া এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচে সিঙ্গাপুরকে অনেকটা সময় আটকে রাখে বাংলাদেশ। আক্রমণ পাল্টা-আক্রমণে জমে ওঠে খেলা।
ম্যাচের শেষভাগে বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি কর্নার পেয়েও ম্যাচে ফিরে আসতে পারেনি। ইনজুরি টাইমের শেষ মিনিটে কর্নার থেকে মোরসালিনের ক্রসে তারিক কাজির হেড অল্পের জন্য ক্রসবার দিয়ে বাইরে চলে যায়। আর এতেই ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজে। শেষ পর্যন্ত পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে স্বাগতিকদের।
এই জয়ে চার পয়েন্ট নিয়ে বাছাইপর্বে সি-গ্রুপের টেবিলের শীর্ষে থাকলো সিঙ্গাপুর। হংকং আজ ভারতকে ১-০ গোলে পরাজিত করে দুই ম্যাচে সিঙ্গাপুরের সমান চার পয়েন্ট অর্জন করেছে।
এর আগে ৮ মিনিটে ম্যাচের প্রথম সুযোগটি হাতছাড়া করে সিঙ্গাপুর। বামদিক থেকে হ্যারিস স্টুয়ার্টের লম্বা থ্রোতে জর্ডান এমাভিউর হেডে সং উয়ং ফাঁকা পোস্টে বল জালে জড়াতে ব্যর্থ হয়। ১৫ মিনিটে শাকিলের ক্রসে রাকিব পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন।
৩০ মিনিটে ইকশান ফান্ডির শট একহাতে রুখে দেন গোলরক্ষক মিতুল মার্মা।
৩১ মিনিটে তিন ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে শামিতের দুর্দান্ত পাসে রাকিব গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন।
৩৩ মিনিটে মধ্যমাঠ থেকে এগিয়ে যাওয়া ফাহমিদুলকে পিছন থেকে ধাক্কা দিয়ে হলুদ কার্ড পান ডিফেন্ডার রায়হান। হামজার ফ্রি-কিক অল্পের জন্য ক্রসবার দিয়ে বাইরে চলে যায়। ৩৯ মিনিটে আবারো শমিতের পাসে ফাহমিদুল দুজন ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে শট নিতে ব্যর্থ হন।
৪৫ মিনিটে হ্যারিস স্টুয়ার্টের লম্বা থ্রো থেকে হারিস হারুনে শটে মিতুল ফিস্ট করলে সেই বল আবারও পেয়ে যান হ্যারিস। তার ক্রসেই সংয়ের ডান পায়ের ভলিতে এগিয়ে যায় সিঙ্গাপুর।
এক গোলে পিছিয়ে থেকে প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমে ম্যাচের প্রথম কর্নার পেয়েছিলো বাংলাদেশ। শমিত সোমের কর্নার থেকে তপু বর্মনের হেডে আবারও কর্নার পায় স্বাগতিকরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্ণারের সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ।
বিরতির পর তারিক কাজিম শাহর জায়গায় মাঠে নামেন শাহরিয়ার ইমন। ৫৯ মিনিটে হামি সাইহানের শট মিতুল মার্মা রুখে দিলে ফিরতি বলে ফান্ডি গোল করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন।
৬৬ মিনিটে হামজার থ্রুতে রাকিব এক গোল পরিশোধ করলে বাংলাদেশ লড়াইয়ে ইঙ্গিত দেয়। রাকিবের গোলে স্টেডিয়াম ভর্তি ২১ হাজার দর্শক উল্লাসে ফেটে পড়ে।
ম্যাচে ফিরে আসার লক্ষ্যে ৭৩ মিনিটে জোড়া পরিবর্তন করে বাংলাদেশ। হৃদয়ের স্থানে আলআমিন ও শাকিলের জায়গায় মোরসালিনকে নামানো হয়। শেষ ২০ মিনিটে অনেকটাই একপেশে ম্যাচ খেলে সিঙ্গাপুরের রক্ষণভাগ ব্যস্ত করে তুললেও কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা পায়নি বাংলাদেশ।
আজকের দুই দলের জন্যই ম্যাচটি গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। কারণ এই ম্যাচের আগে গ্রুপ ‘সি’-তে থাকা ভারত, হংকং, সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশ এই চার দলেরই সংগ্রহ ছিলো সমান ১ পয়েন্ট করে। ঘরের মাঠে এই ম্যাচে জয়ী হয়ে বাংলাদেশের সামনে সুযোগ ছিলো টেবিলের শীর্ষে ওঠার।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এনিয়ে তিনবার সিঙ্গাপুরের মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে তিনবারই জয়ী হয়েছে র্যাংকিংয়ে এগিয়ে থাকা সিঙ্গাপুর। মাঠের লড়াইয়ে বাংলাদেশ জয়হীনই থাকলো। তবে সাম্প্রতিক ফর্মে হামজা শমিত, ফাহমিদুলদেও নিয়ে গড়া বাংলাদেশকে নিয়ে প্রত্যাশার মাত্রাটা একটু বেশি ছিলো। যা পূরণ হয়নি ঠিকই, কিন্তু স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শকের উপস্থিতি, পাশাপাশি নতুন চেহারার দল, সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ফুটবলের নতুনভাবে শুরুর আশা করাই যায়।