সময় ঘনিয়ে আসছে। অপেক্ষা একটি ভোরের। এরপরই বাংলাদেশ-ভারতের ফুটবল মহারণ। ম্যাচটি ঘিরে উন্মাদনার কমতি নেই সমর্থকদের মধ্যে। দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে সবচেয়ে ডার্বি এই ম্যাচ; তাই উত্তেজার পারদ তুঙ্গে। এমন আবহেই মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে দুই পড়শী দেশ মুখোমুখি হবে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের প্রথম ম্যাচে।
আন্তর্জাতিক ময়দানে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের অতীত নিয়ে গর্ব করার মতো নেই। হারের পাল্লা ঝুলে আছে লাল-সবুজ জার্সিধারীদের দিকে। মুখোমুখিতে ভারতের চেয়ে অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ। দুই দলের ৩১ বারের মুখোমুখিতে ১৬ ম্যাচে জয়ী ভারত। বাংলাদেশের জয় মাত্র তিনটিতে। ড্র হয়েছে ১২ বার। ফিফার হিসাবেও বেশ পিছিয়ে। ভারতের র্যাঙ্কিং ১২৬, বাংলাদেশ আছে ১৮৫তম স্থানে।
বাংলাদেশ-ভারত প্রথম দেখা হয়েছিল ১৯৭৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর, এশিয়ান গেমসে। সেই ম্যাচে ৩-০ জিতে ভারত। বাংলাদেশ তাদের প্রথম জয় পায় ১৯৯১ সালের ২৬ ডিসেম্বর, দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে। সেবার লাল সবুজের প্রতিনিধিরা জেতে ২-১ গোলে। সবশেষ ২০০৩ সালের সাফের সেমিতে ভারতকে হারানেরা কীর্তি দেখাতে পেরেছিল। তাছাড়া শেষ পাঁচ লড়াইয়ে ভারতের জয় মাত্র এক ম্যাচে। বাকি চারটি ড্র হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় সামনের ম্যাচে ভারতই ফেবারিট। তবে, হিসাব বদলে গেছে। ইংলিশ লিগের শেফিল্ড ইউনাইটেডের ফুটবলার হামজা চৌধুরীর অন্তর্ভূক্তি বাংলাদেশ দলকে বদলে দিয়েছে। যে কারণে, এই প্রথম বাংলাদেশ ও ভারতের ম্যাচ নিয়ে দর্শকদের তুমুল আকর্ষণ। কারণ একটাই, হামজা চৌধুরী। ভারত বেশি ম্যাচ জিতলেও বাংলাদেশ দলকে এবার বাড়তি অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে হামজা।
জামাল ভূইয়া, কাজী তারিক রায়হানরা আগে থেকেই ছিলেন। মিতুল মারমা, শেখ মোরসালিনদের মতো স্থানীয়রা নিজেদের মানের উন্নতি ঘটিয়েছে। যোগ হয়েছে হামজা। সেই সঙ্গে টানা ২৪ দিনের প্রস্তুতি। তাই কোজ কাবরেরাও দারুণ আত্মবিশ্বাসী এই ম্যাচ নিয়ে। সোমবার ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে তাই বলেই দিলেন, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে, প্রস্তুত হয়ে শিলংয়ে এসেছে তার দল।
সোমবার ভিভান্তা হোটেলে হওয়া সংবাদ সম্মেলনে কোচ কাবরেরা আত্মবিশ্বাসী উচ্চারণে বলতে থাকলেন ভারত ম্যাচ নিয়ে লক্ষ্য। তিনি বলেন, আবারও বলছি, আমরা খুবই আত্মবিশ্বাসী এবং অতীতের চেয়ে এবার বেশি শক্তিশালী। তা কেবল পারফরম্যান্সের দিক থেকে নয়, মানসিকভাবেও। আমরা মানসিকভাবেও ভীষণ শক্তিশালী অনুভব করছি। আগামীকালের জন্য আমরা প্রস্তুত।
ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচের ভেতরে অন্য এক লড়াই চলবে হামজা চৌধুরী ও সুনিল ছেত্রির। দুজন দুই দলের সবচেয়ে বড় তারকা। এ নিয়ে রোমাঞ্চিত কাবরেরা। তিনি বলেন, হামজার আসা এবং সুনিলের ফেরা আরও রোমাঞ্চকর বিষয়। এটা খুব, খুব প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ হতে যাচ্ছে। তবে নিশ্চিতভাবেই এটা কেবল ওই দুজনের ম্যাচ নয়, আমরা যদি আগামীকাল জিতি, সেটা কেবল হামজার জন্য নয়।
তিনি বলেন, সত্যি অনুভব করছি, আগামীকালের জন্য আমরা প্রস্তুত। নিশ্চিতভাবে ভারতের সিনিয়র দলের বিপক্ষে আমার কোচ হিসেবে খেলার প্রথম অভিজ্ঞতা হবে। আমরা জানি, ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ভালো নয়। আমরা জানি, ২০০৩ সালের পর বাংলাদেশ তাদেরকে হারাতে পারেনি। কিন্তু আবারও বলছি, আমরা খুবই আত্মবিশ্বাসী।
উত্তাপ পাওয়া গেলো অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার কণ্ঠেও। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আপনি যখন আপনার বড় ভাইয়ের সঙ্গে খেলেন, তখন আপনারা জিততে চান তাই না। আমরাও তাই। ভারতের বিপক্ষে আমরা জিততে চাই। চাপ তো আছেই, প্রতিম্যাচেই থাকে তবে এই ম্যাচ নিয়ে আমরা আরও বেশি মনোযোগী এবং শান্ত রয়েছি। কারণ ভারতের বিপক্ষে সবশেষ ম্যাচে কী হয়েছে সবাই জানে।
র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে ৫৯ ধাপ এগিয়ে রয়েছে ভারত। তবে সেটা নিয়ে খুব একটা ভাবছেন না জামাল। কারণ, হামজা চৌধুরী যোগ দেওয়ার পর দল হিসেবে ভারতের চেয়ে খুব একটা বড় ব্যবধানে বাংলাদেশ। তাই তিন পয়েন্ট অর্জন করাই জামালের মূল লক্ষ্য।
বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘সত্যি বলতে আমরা র্যাংকিং নিয়ে চিন্তা করিছি না। ম্যাচ জেতা নিয়েই এখন মনোযোগী আমরা। কোচ যেমনটা বলেছেন, এই দলটিই সেরা এবং খুবই শক্তিশালী। হামজাও এসেছে, যা আমাদের জন্য বাড়তি অনুপ্রেরণার। সবাই চায় তিন পয়েন্ট নিতে আমিও চাই। আমরা জানি ম্যাচটি কঠিন হবে। তবে আমরা আমাদের সেরাটা দেব। আমরা স্বাগতিকদের দর্শক নিয়েও ভাবছি না।