মহামারি করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেওয়ার পর থেকে নানা উপসর্গ নিয়ে ৩২ মাস ধরে একাত্তর টেলিভিশনের বাগেরহাটের নিজস্ব প্রতিবেদক বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী এখনও অসুস্থ। বেঁচে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত শরীরে নানা ধরণের উপসর্গের সঙ্গে লড়াই করছেন তিনি। দেশে-বিদেশে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েও তিনি এখনও সুস্থ হননি।
সাংবাদিক বিষ্ণু ২০২১ সালের সাত ফেব্রুয়ারি বাগেরহাট সদর হাসপাতাল থেকে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন। এর এক ঘণ্টার মধ্যে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর একের পর এক উপসর্গ দেখা দেয় তার শরীরে। জ্বর, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, মাথায় যন্ত্রণা, গলায় ব্যথা, মুখ ও গলা শুকিয়ে আসা, কথা বলতে কষ্ট হওয়া, মেমোরি লস, শরীরের ভারসাম্য ধরে রাখতে না পাড়া, চোখে ঝাপসা দেখা ইত্যাদি।
প্রথমে বাগেরহাটের চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা শুরু করেন। এর পর খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সিসিউতে তাকে দুই দফা ভর্তি করা হয়। সেখানেও তার অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় তাকে ২০২১ সালের ১৬ মার্চ ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি করা হয়। একটানা ২১ দিন বিএসএমএমইউতে ভর্তি ছিলেন তিনি।
বিএসএমএমইউর ইন্টারন্যাল মেডিসিন বিভাগের প্রধান চিকিৎসক প্রফেসর সোহেল মাহমুদ আরাফাতের নেতৃত্বে তার চিকিৎসায় দুই দফায় মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরিক্ষা করেও রোগ নির্ণয় করতে পারেনি।
এরপর তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত ভারতের বেঙ্গালুরুতে নারায়ণা ইনিস্টিটিউট অব কার্ডিঅ্যাক সাইন্স হাসপাতালে এক বার, হায়দারাবাদে এআইজি হাসপাতালে দুই বার এবং ভেলোরের সিএমসি হাসপাতালে দুই বার চিকিৎসা নেন। ওই সব হাসপাতালে ৫ দফায় তার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। সেখানে চিকিৎসকরাও সম্পূর্ণ রোগ নির্ণয় করতে পারেনি। তবে ওই সব হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাকে নানা চিকিৎসা সেবা দিয়েছে। তাতেও সাংবাদিক বিষ্ণু প্রসাদ সুস্থ হতে পারেনি। এখনও তিনি নানা উপসর্গের সঙ্গে লড়াই করছেন।
এদিকে করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণ করার পর বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী নানা উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ হওয়ার খবর দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে ওই সংবাদ প্রকাশা ও প্রচার করে।
সাংবাদিক বিষ্ণু প্রসাদ জানান, ভ্যাকসিন গ্রহণ করার আগ পর্যন্ত আমি একজন সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলাম। এরপরেও ভ্যাকসিন গ্রহণ করার পূর্বে করোনা পরীক্ষা করা হয়। রিপোর্ট নেগেটিভ থাকায় অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন গ্রহণ করি। ভ্যাকসিন নেওয়ার সময় আমার শরীর জ্বলে-পুড়ে যাচ্ছিলো। তখনি বিষয়টি আমি চিকিৎসকদের জানাই। এর এক ঘণ্টার মধ্যে শরীরে নানা ধরণের উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। দিন পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে উপসর্গের সংখ্যাও বাড়তে থাকে।
তিনি আরও জানান, দেশ-বিদেশে চিকিৎসা নিয়েও আমি এখনও সুস্থ হতে পারি নাই। সেই থেকে আমি নানা উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ। চলাফেরা করতে আমার কষ্ট হয়। অসংখ্য উপসর্গের সাথে লড়াই করে বেঁচে আছি। উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসরা এবার সিঙ্গাপুর অথবা আমেরিকা যাওয়ার কথা বলছে চিকিৎসকরা।
বাগেরহাট সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রদীপ কুমার বকসী জানান, সাংবাদিক বিষ্ণু প্রসাদ ভ্যাকিসন গ্রহণ করার এক ঘণ্টার মধ্যে নানা উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর পর প্রথমে আমি তার বাসায় গিয়ে চিকিৎসা শুরু করি। সেই থেকে বিভিন্ন সময় আমি তাকে নানা ধরণের চিকিৎসা দিয়ে আসছি। তার শরীরে নানা উপসর্গ রয়েছে। তার অসুস্থতা নিয়ে গবেষণা করা গেলে করোনার অজানা আরও নানা বিষয় সম্পর্কে জানা যাবে। আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে বিষ্ণু প্রসাদ নানা অসুস্থতার সাথে লড়াই করছেন। তার মতো একজন খ্যাতিমান সাংবাদিককে বাঁচিয়ে রাখতে উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারের এগিয়ে আসা খুব জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
বাগেরহাট জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার সমদ্দার জানান, তার রোগ নির্ণয় করতে আরো উন্নত চিকিৎসা করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তাকে নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদর দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার অসুস্থতার কেস ফাইন্ডিংস পাঠানো উচিত। সেই সঙ্গে তার আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর অথবা আমেরিকায় যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আর এই মুহূর্তে তাকে আবারো ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে রেফার্ড করা হয়েছে।