বসুন্ধরা গ্রুপের কর্ণধার আহমেদ আকবর সোবহান ও তার ছেলে সায়েম সোবহান আনভীরসহ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিআইডি।
বিভিন্ন উৎস থেকে জানা গেছে, বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্পের প্রস্তাবিত জমির কিছু অংশ রাজউকের অনুমোদন থাকলেও অধিকাংশই রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই ক্ষমতা ও অর্থের বলে জনসাধারণের ও সরকারী সম্পত্তি যেমন: খাল, বিল, নদী, খাস জমি, পতিত ভুমি, কবরস্থান, বধ্যভুমি ইত্যাদি ভরাট করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। “বসুন্ধরা রিভারভিউ” এর ক্ষেত্রেও রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে জায়গা দখল ও ভরাটের কাজ করে সমাজের বিত্তবান মানুষজনের কাছ থেকে প্লট বিক্রির মাধ্যমে অগ্রীম এককালীন ও কিস্তির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বিভিন্ন ব্লকে ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টিজ লিমিটেডের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ জমি দখলের অভিযোগ পাওয়া যায়, যার আনুমানিক মূল্য দেড় লাখ কোটি টাকার বেশি বলে জানা গেছে।
জানা যায়, এসব জমি নিজেদের দখলে নিতে বিভিন্ন প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নেয় বসুন্ধরা গ্রুপ। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সরকারের খাস, নালা, নদীসহ ৮০০ একর (২ হাজার ৪০০ বিঘা) এবং ভাওয়াল রাজ এস্টেটের ২১৬ একরসহ মোট ১ হাজার ১৬ একর জমি বেআইনিভাবে দখল করার অভিযোগ রয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপের বিরুদ্ধে।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, বসুন্ধরা গ্রুপ দেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত জামানত না রেখে প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে বিঘাপ্রতি ২০-২৫ লাখ টাকায় কেনা জমি কাঠাপ্রতি ৩ কোটি টাকা দাম দেখিয়ে ৪২ হাজার কোটি টাকারও বেশি ঋণ নিয়েছে যার বেশিরভাগ অর্থ পাচার করা হয়েছে দুবাই, সিঙ্গাপুর, সাইপ্রাস, লন্ডন, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে। বসুন্ধরা গ্রুপের সিঙ্গাপুর অফিস দেখাশোনা করছেন সাদাত সোবহান তানভীর। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে একের পর এক প্রকল্প দেখিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিলেও সেসব ঋণ পরিশোধ না করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বসুন্ধরা ওয়েল এন্ড গ্যাস (কেরানীগঞ্জ,ঢাকা) নামক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ট্রেড বেসড মানিলন্ডারিংয়ের আশ্রয় নিয়ে বিদেশ থেকে আনুমানিক দুই হাজার কোটি টাকার বিটুমিন আমদানি করে এবং পরবর্তীতে সেই আমদানিকৃত বিটুমিন একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে ইচ্ছামতো দাম নিয়ন্ত্রণ করে মনোপলি বিজনেসের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করার অভিযোগ রয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে আরও জানা যায়, বাংলাদেশের স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটের অন্যতম নিয়ন্ত্রক বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর। এসব সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে দেশে একটি কৃত্রিম সংকট তৈরী করে প্রায়শই স্বর্ণের বাজার অস্থিতিশীল করে তোলার তথ্য পাওয়া যায়।
এছাড়া বসুন্ধরা গ্রুপের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জাল জালিয়াতি, শূল্ক ফাঁকি, ভ্যাট ফাঁকি, আন্ডার ইনভয়েসিং বা ওভার ইনভয়েসিং করে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার সংক্রান্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে মানিলন্ডারিং অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিআইডি।