রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজকে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে’ ঘোষণার দাবিতে সড়ক অবরোধের পাশাপাশি রেলপথ অবরোধ করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এতে সারাদেশের সঙ্গে ঢাকার রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
সোমবার দুপুর সাড়ে তিনটার পর তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা মহাখালী লেভেলক্রসিংয়ে অবস্থান নেন। পরে মহাখালী রেলগেটে লাইনের ওপর কয়েকজন শিক্ষার্থী শুয়ে পড়েন। এর পরপরই প্রায় সারাদেশের সঙ্গে ঢাকার রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন কয়েক হাজার রেলযাত্রী। তারা বলছেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোনো ট্রেন ছাড়ার খবর আসছে না। এসময় সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে দাবি আদায়ে সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসারও আহ্বান জানান তারা।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার শাহাদাত হোসেইন বলেন, মহাখালীতে রেলপথ অবরোধের কারণে কমলাপুর স্টেশন ছাড়ার অপেক্ষায় রয়েছে ছয়টি ট্রেন। বনানী ও উত্তরা স্টেশন ঢাকা প্রবেশের অপেক্ষায় আছে আরও তিনটি ট্রেন।
তিনি আরও বলেন, অবরোধের কারণে সারাদেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া আরও ২০টি ট্রেনের শিডিউল জটিলতায় পড়েছে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের অবরোধের মুখে উল্টো পথে ফিরে গেছে উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেন।
ট্রেনটির লোকোমাস্টার লতিফ বলেন, ট্রেন আটকে দেওয়ার ঘটনাটি তাৎক্ষণিকভাবেই ঊর্ধ্বতন ও কর্তৃপক্ষকে আমরা জানিয়েছি। তারা আমাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন, ট্রেনটি পেছনের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সে অনুযায়ী আমরা ফিরে যাচ্ছি।
আন্দোলনকারীদের একজন আলী আহম্মেদ মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা কিংবা শিক্ষা উপদেষ্টা এখানে এসে তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত রেলক্রসিং থেকে আমরা নড়বো না।
এরইমধ্যে তিন দফা ঘোষণা করছেন শিক্ষার্থীরা। এগুলো হলো-
১। তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমি ক্যালেন্ডার প্রকাশ করতে হবে।
২। শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করে তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের সকল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মানের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করে যোগ্যতা বিবেচনায় নিজস্ব প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে হবে।
৩। তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন গঠন প্রক্রিয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপর আইন উপদেষ্টার চাপ সৃষ্টি করার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টির দায়ভার মাথায় নিয়ে আইন উপদেষ্টাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
এদিন ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি দেখা গেছে। পুলিশ আন্দোলনকারীদের চারিদিক দিয়ে ঘিরে রেখেছে।
এদিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রাজধানীর মহাখালী রেলগেট এলাকায় চার প্লাটুন বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবি সদস্যরা রেল রেলগেটের বিপরীত পাশে অবস্থান করছেন।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, ঢাকার মহাখালীতে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা রেললাইন অবরোধ করেছেন। সেখানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
এর আগে ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সোমবার সকাল ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মহাখালীতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও রেললাইন অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেন তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা।
সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণার দাবিতে বেশ কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করে আসছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।