রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার মানিলন্ডারিংয়ের মামলায় গ্রেপ্তার ছাগলকাণ্ডে আলোচিত সাদিক অ্যাগ্রোর চেয়ারম্যান ইমরান হোসেনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত।
মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম. এ আজহারুল ইসলামের আদালত এ আদেশ দেয়। এর আগে দুপুর দেড়টার দিকে তাকে আদালতে হাজির করা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক মো. সায়েদুর রহমান তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। এসময় আসামিপক্ষে জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।
গত বছর কোরবানির হাটের একটি ছাগল সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনায় আসে। পাঞ্জাবের বিটল জাতের ছাগলটি পালা হচ্ছিলো রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রোতে। ১৭৫ কেজি ওজনের খাসিটির চাওয়া হয় ১৫ লাখ। ৬৫ ইঞ্চি উচ্চতার বাহারি ছাগলটি দেখে খুব পছন্দ হয় মুশফিকুর রহমান ইফাত নামের এক তরুণের। সর্বনাশের শুরুটা সেখানেই। এরপর যা ঘটে গেছে তা দেশে এখন ‘ছাগলকাণ্ড’ নামে পরিচিত।
আলোচিত সেই ছাগলের বিক্রয় প্রতিষ্ঠান সাদিক অ্যাগ্রোর চেয়ারম্যান ইমরান হোসেনকে অর্থ পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডি সূত্র জানায়, ইমরানের বিরুদ্ধে ১৩৩ কোটি টাকা পাচারের মামলা রয়েছে। সে মামলাতেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর আগে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও বিধি অনুযায়ী ১৩৩ কোটি টাকা মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন, তৌহিদুল আলম জেনিথ ও অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান সাদিক অ্যাগ্রোর বিরুদ্ধে মামলা করে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
সাদিক অ্যাগ্রোর বিরুদ্ধে চোরাচালান, প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে অনুমোদনহীন ব্রাহমা জাতের গরু আমদানি, ভুটান ও নেপাল হতে চোরাচালানের মাধ্যমে আনা ছোট আকৃতির ভুট্টি গরু বাংলাদেশে নিয়ে এসে তা বিক্রয় করার প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রতারণার মাধ্যমে দেশীয় গরু/ছাগলকে বিদেশি ও বংশীয় গরু/ছাগল বলে প্রচার করে উচ্চমূল্যে তা কোরবানির পশুর হাটে বিক্রয় করে সাদিক অ্যাগ্রো।
টেকনাফ ও উখিয়া, কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে থাইল্যান্ড ও মায়ানমার হতে চোরাচালানের মাধ্যমে গরু ও মহিষ বাংলাদেশে নিয়ে এসে তা বিক্রি করা হয় সাদিক অ্যাগ্রোর মাধ্যমে। অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ অভিযুক্ত ব্যক্তি ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে প্রায় ১২১ কোটি ৩২ লাখ ১৫ হাজার ১৪৪ টাকা হস্তান্তর, স্থানান্তর করেন ইমরান হোসেন।
গত বছরের তিন জুলাই আলোচিত সাদিক অ্যাগ্রোতে অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযানে সাদিকের ডেরা থেকে আমদানি নিষিদ্ধ ছয়টি আমেরিকান ব্রাহমা জাতের গরু উদ্ধার করা হয়।
জাল-জালিয়াতি করে ২০২১ সালে ১৮টি গরু দেশে আনেন সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক আলোচিত শাহ ইমরান হোসাইন। কিন্তু অনুমতি না থাকায় বিমানবন্দরেই সেগুলো জব্দ করে কাস্টমস।
সেখান থেকে দেয়া হয়েছিল সাভারের কেন্দ্রীয় গো প্রজনন কেন্দ্র ও দুগ্ধ খামারে। কিন্তু সাভারের সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে গরুগুলো আবার নিজের কব্জায় নেন ইমরান। এরপর কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য একেকটি গরুর দাম হাঁকা হয় কোটি টাকা।