দীর্ঘ তিনমাস ১৭ দিন বন্ধ রাখার পর গত মধ্যরাত থেকে শুরু হচ্ছে বৃহত্তর কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ। প্রথম দিনেই রাঙ্গামাটি বিএফডিসি ৪টি ল্যান্ডিং ঘাট রাঙ্গামাটি, কাপ্তাই, মহালছড়ি ও মারিশ্যা ঘাটে ১৪৫ মেট্রিক টন মাছ আহরণ হয়েছে। যার আনুমানিক বাজারমূল্য সাড়ে ৩ কোটি টাকা। তবে বরফ ও পরিবহন সংকট এবং প্যাকেজিং সমস্যার কারণে ব্যবসায়ী মারাত্মক ক্ষতি সম্মুখীন হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বুধবার মধ্য রাত ১২টা থেকে কাপ্তাই হ্রদের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর থেকে জেলেরা হ্রদে মাছ শিকার শুরু করে। বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) সকাল থেকে মাছ আসতে শুরু করেছে ঝাঁকে ঝাঁকে কাচকি চাপিলাসহ ছোট জাতের মাছ। দীর্ঘদিন পর মাছ আহরণ শুরু হওয়ায় ফিরে পেয়েছে দীর্ঘদিনের কর্মচাঞ্চল্য। সকাল থেকে ব্যবসায়ীদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে মাছ প্যাকিং করে রপ্তানি শুরু করেছে। তবে হ্রদের পানি কম হওয়ায় বিপুল পরিমাণ ধরা পাচ্ছে। আগামী কিছু দিনের মদ্যে মাছ শূন্য হওয়ার আশংকা করছেন ব্যবসায়ীরা।
সাধারণ ব্যবসায়ীরা জানান রাঙ্গামাটি বিএফডিসির মূল সমস্যা হচ্ছে স্থান সংকুলান। যতগুলো ব্যবসায়ী রয়েছে সে পরিমাণ জায়গায় না থাকায় সমস্যায় পড়তে হয়েছে। ইতিমধ্যে জায়গা না থাকার ফলে বোটের মধ্যে মাছ নষ্ট হয়ে গেছে। বিকেলে কয়েকটি ব্যবসায়ী প্রায় দেড় শতাধিক ড্রাম মাছ নদীতে ফেলে দিয়েছে বলে জানান।
কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল শুক্কুর জানান, দীর্ঘদিন পর মাছ শিকার শুরু হওয়ায় আমরা সকলেই খুশি। তবে মাছের সাইজ খুবই ছোট। এই মাছ ঢাকায় যেতে যেতে দাম কী রকম পাবো তা জানি না। আশা করছি আগামী দিন গুলোতে বড়ো মাছের আধিক্য বাড়বে ব্যবসাও ভালো হবে।
এদিকে রাঙ্গামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি উদয়ন বড়ুয়া, এবছর ব্যবসায়ীরা খুবই ক্ষতির দিকে রয়েছে। যেমন পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। তেমনি সকল সেক্টরে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। হ্রদে নাব্যতা কমে যাওয়ায় বেশিদিন মাছ শিকার করতে পারবে তাও আমাদের মনে হচ্ছে না। হ্রদের নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে আমরা বার বার তাগিদ দিলেও কোন কর্ণপাত হয়নি।
তিনি বলেন, হ্রদের মাছ শিকার শুরু হয়েছে। কর্ম চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। পানি কম থাকায় মাছ ও বেশি ধরা পড়ছে। তারপরও আমরা বিএফডিসির সাথে সমন্বয় করে একটি টাইম আমরা মাছ শিকার থেকে বিরত থাকার কথা জানিয়েছি সকল ব্যবসায়ীকে। আশা করছি সকলেই আই নিষেধাজ্ঞা মান্য করবে। প্রতিদিন বিকেল ৩টা পর্যন্ত মাছ ল্যান্ডিং হবে রাতে আর কোন মাছ আসবে না। বিএফডিসি রয়েল্টি বাড়িয়ে দেয়ায় আমাদের বিশাল ক্ষতি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: রোগীকে মেয়াদোত্তীর্ণ ইনজেকশন দেয়ার অভিযোগে ফার্মেসি সিলগালা
বিএফডিসির ব্যবস্থাপক কমান্ডার তৌহিদুল ইসলাম জানান, কাপ্তাই হ্রদের মাছ আহরণ ও বাজার জাত করণের সুবিধার্থে ল্যান্ডিং প্যাকিং করে প্রায় বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ১৪৫শ’ মেট্রিক টন মাছ বাজার জাত করতে পারবে। বিকেল ৩টার পর থেকে মাছ ল্যান্ডিং করা হয়। আবার শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে মাছ ল্যান্ডিং শুরু হয়েছে। সেই চিন্তা ভাবনা করে মাছ শিকার করতে জেলেও ব্যবসায়ীদের অনুরোধ জানিয়েছেন।
কাপ্তাই হ্রদে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে গত ১ মে থেকে ৩ মাসের জন্য হ্রদে মাছ শিকার বন্ধ করে কর্তৃপক্ষ গত মধ্য রাত থেকে শুরু হওয়ায় রাঙ্গামাটি কাপ্তাই হ্রদের সাথে জড়িত প্রায় ২২ হাজার জেলে পরিবার ও ব্যবসায়ীসহ প্রায় ৫০ হাজার পরিবার সুখের মুখ দেখছেন।
একাত্তর/আরএ