ভর্তুকি সমন্বয়ের অংশ হিসেবে বিদ্যুতের পাইকারি ও খুচরা মূল্য বাড়িয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম গড়ে সাড়ে ৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। নতুন দরে গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ৭০ পয়সা।
বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় বিদ্যুৎ বিভাগ এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের বিল থেকেই নতুন এ দাম কার্যকর করা হবে। ফলে মার্চে গ্রাহক যে বিদ্যুৎ বিল দেবেন, তার সঙ্গেই বাড়তি বিল যোগ হবে।
এর আগে পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। সব বিতরণ কোম্পানির ২৩০ ও ১৩২ কেভি লাইনের জন্য পাইকারি বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে যথাক্রমে ৮ টাকা ৪৪ পয়সা এবং ৮ টাকা ৪৭ পয়সা। ফলে গ্রাহক পর্যায়ে সাড়ে ৮ ও পাইকারিতে ৫ ভাগ বাড়লো বিদ্যুতের দাম।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গ্রাহক শ্রেণিভেদে আবাসিকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম সর্বনিম্ন ২৮ টাকা বাড়ানো হয়েছে। দাম বাড়ানোর ফলে লাইফলাইন গ্রাহক অর্থাৎ শূন্য থেকে ৫০ ইউনিটের দাম ইউনিট প্রতি ৪ টাকা ৩৫ পয়সা বেড়ে ৪ টাকা ৬৩ পয়সা, এরপর প্রথম ধাপে শূন্য থেকে ৭৫ ইউনিটের দাম ৪ টাকা ৮৫ পয়সা থেকে বেড়ে ৫ টাকা ২৬ পয়সা, ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিটের দাম ৬ টাকা ৬৩ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৭ টাকা ২০ পয়সা, ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট ৬ টাকা ৯৫ পয়সা থেকে বেড়ে ৭ টাকা ৫৯ পয়সা, ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত ৭ টাকা ৩৪ পয়সা থেকে বেড়ে ৮ টাকা ০২ পয়সা, ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিট দাম ১১ টাকা ৫১ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১২ টাকা ৬৭ পয়সা, ৬০১ ইউনিটের ঊর্ধ্বে ব্যবহারকারীর জন্য দাম ১৩ দশমিক ২৬ টাকা থেকে বেড়ে হলো ১৪ টাকা ৬১ পয়সা।
এদিকে সেচ ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটের দাম ৪ টাকা ৮২ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫ টাকা ২৫ পয়সা। ক্ষুদ্র শিল্পে দাম ৯ টাকা ৮৮ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১০ টাকা ৭৬ পয়সা, নির্মাণে ১৩ টাকা ৮৯ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৫ টাকা ১৫ পয়সা, ব্যাটারি চার্জিং স্টেশনে দাম ছিল ফ্ল্যাট ৮ টাকা ৮৪ পয়সা থেকে বেড়ে ৯ টাকা ৬২ পয়সা করা হয়েছে।
অন্যদিকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ইউনিট প্রতি দাম ১১ টাকা ৯৩ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৩ টাকা ১ পয়সা, শিল্পে ইউনিট প্রতি দাম ৯ টাকা ৭৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১০ টাকা ৮৮ পয়সা করা হয়েছে।
এছাড়া দাতব্য প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদরাসা হাসপাতালে আগের ৬ টাকা ৯৭ পয়সা থেকে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ৭ টাকা ৫৫ পয়সা করা হয়েছে।
সর্বশেষ গত বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন দফায় প্রতি মাসে গড়ে পাঁচ শতাংশ করে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। এ ছাড়া গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে গড়ে আট শতাংশ বাড়ানো হয় পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম।
আগে গণশুনানির মাধ্যমে বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করত এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে আইন সংশোধন করে বিইআরসির পাশাপাশি দাম বাড়ানোর ক্ষমতা হাতে নেয় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এর পর থেকে নির্বাহী আদেশে দাম বাড়াচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
বিদ্যুতের পাইকারি বিদ্যুতের হুইলিং চার্জ ও বিতরণ সংস্থাগুলোর জন্য পাইকারি বিদ্যুতের মূল্যহার ঘোষণা করে দু'টি প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে যা ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কার্যকর হবে।
গত মঙ্গলবার বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটারে ৭৫ পয়সা বাড়ানো হয়। একইসঙ্গে কলকারখানায় ব্যবহৃত ক্যাপটিভ বিদ্যুতের গ্যাসের দামও প্রতি ঘনমিটারে বাড়ে ৭৫ পয়সা করে।