গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকলে দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি হয়, এটা আওয়ামী লীগ সরকার প্রমাণ করতে পেরেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৪ প্রদান অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ১০ গুণীজনকে স্বাধীনতা পুরস্কার তুলে দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশে যারা সন্ত্রাস করে, তাদের সুমতি হোক। শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে যে দেশ উন্নতি করতে পারে, তা আমরা প্রমাণ করেছি। দেশের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক সেটাই লক্ষ্য।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের কথা তুলে ধরেন তিনি।
বলেন, ১৯৭৫ এর পর জাতির পিতাকে হত্যার পর স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছিলো। ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণ ও জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো।
অবৈধ উপায়ে স্বাধীনতা বিরোধীদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিজয় অর্জন করেও বিজয়ের কথা বলতে পারিনি। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের বীরত্বের কথা বলতে পারতেন না। এমন একটা ভীতিকর অবস্থার মধ্যে চলছিলো বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, ১৯৭৫-এর পর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষদের ও সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা নির্যাতন করা হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে করা হয়েছে প্রহসন।
কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার পুনরায় নির্বাচিত হয়ে সরকার পরিচালনা করার সুযোগ পাওয়ায় দেশের সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করা হচ্ছে। সরকার গঠনের পর দেশের হারানো গৌরব ফিরিয়ে এনেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার।
সাতই মার্চের ভাষণ বিশ্বে স্বীকৃতি পেয়েছে এবং জয় বাংলা স্লোগান জাতীয় স্লোগান হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। বলেন, এখনকার প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে চায়।
২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবসে যারা গণহত্যা চালিয়েছে তাদের প্রতি ঘৃণাও প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
একই সঙ্গে ফিলিস্তিনে চলা গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, যুদ্ধের ভয়াবহতা আমরা জানি।
এদিকে করোনাভাইরাস মহামারির ধাক্কা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বই মূল্যস্ফীতির চাপের মধ্যে পড়েছে বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বেই মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে।
তাই মানুষের কষ্টের কথা চিন্তা করে ইফতার পার্টি না করে, দরিদ্রদের মাঝে তা বিতরণের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত ১০ বিশিষ্ট গুণী ব্যক্তির হাতে সম্মাননা তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এবার ‘স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ’ ক্ষেত্রে তিনজন, ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’ ক্ষেত্রে একজন, চিকিৎসাবিদ্যায় একজন পুরস্কার পান। এছাড়া সংস্কৃতিতে একজন, ক্রীড়ায় একজন এবং সমাজসেবায় তিনজনকে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ এ পদকে ভূষিত করা হয়।
তারা হলেন- ‘স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ’ ক্যাটাগরিতে কাজী আব্দুস সাত্তার, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফ্লাইট সার্জেন্ট মো. ফজলুল হক (মরণোত্তর) ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আবু নঈম মো. নজিব উদ্দীন খাঁন (খুররম) (মরণোত্তর)।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’ ক্যাটাগরিতে ড. মোবারক আহমদ খান, চিকিৎসাবিদ্যায় ডা. হরিশংকর দাশ। সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান এবং ক্রীড়ায় ফিরোজা খাতুন।
‘সমাজসেবা/জনসেবা’ ক্যাটাগরিতে অরণ্য চিরান, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. মোল্লা ওবায়েদুল্লাহ বাকী এবং এস এম আব্রাহাম লিংকন।