সেকশন

সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২
 

রোজা মানব হবার অনুশীলন, দানব হবার নয়

আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৪, ০৭:০৯ পিএম

রোজায় ইফতার পার্টি বা ইফতার মাহফিল দিন দিন চূড়ান্ত ব্যয়বহুল আয়োজনের দিকে যাচ্ছে। অথচ এই সংস্কৃতি এখন থেকে ১৫ থেকে ২০ বছর আগেও সহনীয় ছিল। কয়েকজন মিলে সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে রোজা শেষ করার আনন্দ ভাগাভাগি করাই ছিল মূলত ইফতার পার্টির উদ্দেশ্য। কিন্তু আনন্দ ভাগাভাগির সেই সংস্কৃতি কীভাবে যেন বদলে গেলো। ঘরোয়া আয়োজনটির কলেবর আস্তে আস্তে বাড়লো। প্রথমে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এই আয়োজন বাইরে আনলো, তার পর এর রাজনীতিকরণ হলো।

রাজনীতিকরণের পর পুরোটাই বদলে গেলো ইফতার মাহফিলের আয়োজন। কেন্দ্র থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত হলো সেই আয়োজন। বিভিন্ন অফিস বা সংগঠনের ইফতার আয়োজন তো আছেই। কিন্তু একটি রাজনৈতিক দল এবং এর শাখার প্রশাখা ও আকার মেলালে পুরো রোজার মাসজুড়ে তাদের আয়োজনগুলোই বেশি চোখে পড়তে লাগলো। যে কারণে খানিকটা হুট করেই রমজানের ইফতার রাজনীতি নামে এক ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতি উদ্ভব হলো।

অবশ্য ইফতার নিয়ে নতুন এই রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে খুব সমস্যা ছিল না। বরং ভালোই মনে হচ্ছিল প্রথম দিকে। রাজনৈতিক ইফতারে দলের সব কর্মীরা অংশ নিচ্ছিলেন। অন্য দলের নেতাদের দাওয়াত দেয়া হচ্ছিল। সাধারণত ভিন্ন দলের কর্মসূচিতে আমাদের রাজনৈতিক নেতারা না গেলেও ইফতারে যাচ্ছিলেন। সবমিলিয়ে ইফতার রাজনীতি কার্যকর হচ্ছিল আমাদের দেশে।

কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ইফতার কিছু বিষয় সমালোচিত হচ্ছে। আয়োজনের কোন কোন ক্ষেত্রকে বলা হচ্ছে বিলাসিতা। বিশেষ করে কোভিড এবং বিশ্ব মন্দার পর এই আলোচনা বেশি বেশি সামনে আসছে। গণমাধ্যমেও অনেক সময় সমালোচিত হয়েছে এবং হচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে আমার মত এই সমালোচনা প্রকাশ্য হওয়ার যথেষ্ট যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে।

আমি নিজের অভিজ্ঞতায় দেখেছি এই দুঃসময়ে ইফতার পার্টির আয়োজনে শত শত মানুষের সামনে প্লেট উপচানো খাবার দেয়া হচ্ছে। এর বেশিরভাগ রোজাদার খেতে পারছেন না। টেবিলে প্রায় ভরা এঁটো প্লেট পড়ে থাকছে। ঘণ্টাখানেক পর যে প্লেটগুলো চলে যাচ্ছে ডাস্টবিনে। সবাই জানে একজন মানুষ কতটুকু খেতে পারে । আয়োজকরাও জানেন। কিন্তু প্রচলনটা হয়ে গেলো, রোজাদারের সামনে দ্বিগুণ খাবার দিতে হবে এবং সেটা নষ্ট করতে হবে।

আমি জানি না কোত্থেকে এই অপসংস্কৃতি এসেছে। কারণ আমি নিজেও এর সঙ্গে পরিচিত ছিলাম না। হঠাৎ করেই আগ্রাসনের মত করে এই অপসংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়লো। অন্যসময় হলে হয়তো গম্ভীর হয়ে বলতাম এই অপসংস্কৃতির উৎস কোথায় খুঁজে বের করা দরকার। কোন দেশে কারা গেলো? কারা নিয়ে আসলো রাশি রাশি খাবার নষ্ট করার এই প্রবণতা? নানা প্রশ্ন করতাম হয়তো। কিন্তু আমার মনে হয় আজকের বাংলাদেশে পণ্য উচ্চ মূল্যের এই সময়ে, সেই প্রশ্ন করাও এক ধরনের বিলাসিতা।

কারণ আর কিছু নয়, মানুষের প্রাণ বাঁচানোর চেয়ে জরুরি আর কিছু নেই। সাধারণত রোজার দিনে আমাদের দেশে মানুষের কাজ করার প্রবণতা অনেক কমে যায়। খুব স্বাভাবিকভাবে মানুষ চাইলেও কাজ পায় না। যে কারণে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ে দিন মজুর। রোজা থাকা বা না থাকা বিষয় না, এই সময় বহু মানুষ তার তিন বেলার খাবার জোগাড় করতে পারে না।

ভাবার কোন কারণ নেই যে, এই সমস্যা শুধু শহরের বা গ্রামের। দরিদ্র মানুষের সমস্যা আসলে সবখানেই একরকম। এর মধ্যে মরার ওপর খাড়ার ঘাঁ জিনিসপত্রের উচ্চমূল্য। গরীব মানুষ বাঁচবে কীভাবে? তাই এত সমস্যাযুক্ত মানুষ বাম পাশে রেখে ডানপাশে যদি বিলাসিতার ইফতার চলে, শত মানুষের খাবার নষ্ট হয় সেটাকে তো অনৈতিক আয়োজন বলতেই হবে। যে অনৈতিকতা চলছে আমাদের মানবতা চর্চার রোজার মাসে।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দলের সবাইকে ইফতার পার্টি বা ইফতার মাহফিলের আয়োজন করতে নিরুৎসাহিত করেছেন। এটা নিয়ে নানা বাঁকা মন্তব্য আসছে। অনেকে বলছেন, এতদিন কেন ইফতার বিলাসিতা মনে হলো না? কেউ কেউ আবার আরেক ধাপ এগিয়ে বলছেন প্রধানমন্ত্রী ধর্মীয় সংস্কৃতি থেকে দূরে চলে যাচ্ছেন। প্রথম প্রশ্নে জবাবে বলা যায় সবাই মিলে ইফতার করাতো সভ্য সংস্কৃতি। কিন্তু যখন সেই সংস্কৃতিতে যখন কিছু মানুষ অবহেলিত হয়, তখন সেটা থেকে দূরে না গিয়ে উপায় কী? আর যারা ধর্মীয় সংস্কৃতি থেকে দূরে যাওয়ার দোহাই দিচ্ছেন, তারা নিশ্চয়ই জানেন মহানবী (সাঃ) এর ইফতার সংস্কৃতি। তারা নিশ্চয়ই জানেন, কোন মুসলমানের প্রতিবেশী না খেয়ে রাত কাটালে তার মুসলমানিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।

এদিকে আমাদের দেশের অন্যমত বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি সারাদেশে পুরো রোজার মাসে ৫শ এর বেশি ইফতার পার্টি আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে। এরই মধ্যে পত্রপত্রিকায় তাদের ইফতার আয়োজনের টাকা সংগ্রহের পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রথম রোজায় তাদের দলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান তারেক রহমানের বক্তব্যও শুনলাম। সেখানে তিনি ইফতার সংযমতো দূরের ব্যাপার, কেন আরও নানা বিদেশি ইফতার পণ্য ভর্তুকি দিয়ে সরকার আনাচ্ছে না, এনিয়ে বাঁকা মন্তব্য করছিলেন।

ইফতার এবং সংযম নিয়ে অনেক ধর্মীয় ব্যাখ্যা হয়তো দেয়া যায়। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিয়ে নানা প্রসঙ্গ উঠে আসতে পারে সেখানে। তাতে আলোচনা আরও দীর্ঘ হতে পারে। এতে উৎসাহী হবেন এমন মানুষও আছেন। কিন্তু এই লেখার উদ্দেশ্য সেটা নয়। আমি আসলে ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে চাইলাম, রোজা মুসলমানদের ত্যাগের শিক্ষা দেয়। সেই ত্যাগ যেন কোন ভাবেই ভোগ বা প্রতিপক্ষ দমনের হাতিয়ার না হয়ে ওঠে। রোজা আসলে ভালো মানুষ হওয়ার অনুশীলন, দানব হওয়ার নয়।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।

এআরএস
জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগে হস্তক্ষেপ ও পাঠ্যপুস্তক ছাপানোয় কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্যসচিব গাজী সালাউদ্দিন তানভীরকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তাকে...
জলবায়ু সঙ্কট মোকাবিলায় আঞ্চলিক ও বিশ্বনেতাদের এক সঙ্গে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস।
ঢাকাস্থ মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর সাংবাদিক ফোরামের ২০২৫-২৬ কার্যনির্বাহীর নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুই বছর মেয়াদি এই কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন এটিএন নিউজের বার্তা সম্পাদক সাহাদাৎ রানা ও সাধারণ স
স্থানীয় ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বাজারে শীর্ষস্থান বজায় রাখার পাশাপাশি বিশ্বের অন্যতম সেরা গ্লোবাল ব্র্যান্ড হতে এগিয়ে যাচ্ছে ‘ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি’। চলছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যবসা...
লোডিং...
সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর


© ২০২৫ প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত