কিশোরী বয়সে স্থানীয়দের সহায়তায় জর্ডানে যান হাসি (ছদ্মনাম)। করতেন বাসাবাড়ির কাজ। কিন্তু দেড় বছরের মাথায় আবার দেশে ফিরে আসেন। এর মধ্যে অনেকেই আবারও বিদেশ যাওয়া কথা বললেও যাওয়া হয়নি। ততক্ষণে শেষ হয়ে যায় পাসপোর্টের মেয়াদও।
গত বছরের এপ্রিল মাসের দিকে একদিন মাকে বলেন, এক বান্ধবী ভারতে গেছে। এর এক সপ্তাহ পর একদিন বিকেলে সাজগোজ করে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় হাসি। এরপর থেকে ফোন বন্ধ।
নিখোঁজর প্রায় ছয় মাস পর ওই বছরের অক্টোবরে খোঁজ মেলে হাসির। জানা যায়, তিনি আছেন কলকাতার ‘ইমানুয়াল মিনিস্ট্রিস’ নামে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে। দিল্লি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে তাকে। সেখানে কাজ করতেন একটি বিউটি পার্লারে। উদ্ধারের পর কখনও বাড়ি ফেরা আবার কখনও স্বামী শিবার কাছে ফিরতে চাইছিলেন তিনি।
কলকাতার স্থানীয় পুলিশ হাসিকে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়। সেখানে শুরুর দিকে হাসি একেবারেই অগোছালো কথা বলছিলো। আশ্রয়কেন্দ্রের তার কাছে এতোদিনের গল্পগুলো যখন শোনার চেষ্টা চলছিলো তখনও তিনি কখনো অতীতে বাড়ির কথা মনে করে কাঁদছিলেন, কখনো বা শিবা নামে একজনকে বিয়ের কথা বলছিলেন। আবার কখনো বলে উঠছিলেন ‘আমি আর পারছি না’।
হাসির মায়ের আকুতি পৌঁছায় একাত্তর টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক মো. শামসুল হুদার কাছে। এরপর রীতিমতো আটঘাট বেধে নামেন তিনি। কখন, কোথায় চিঠি পাঠাতে হবে সেটাও নিজেই করেছেন। কখন কার অনুমতি প্রয়োজন সেটাও। পাশাপাশি হাসি যেন মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন, সেই ব্যবস্থাও করেন তিনি।
শামসুল হুদার চেষ্টায় নানা আইনি জটিলতা কাটিয়ে ছয় মাস পর মঙ্গলবার ভারত বেনাপোল থেকে ঢাকার সিদ্ধিরগঞ্জের বাড়িতে ফিরবেন তিনি।
তাকে আনতে বেনাপোলে যাচ্ছেন শামসুল হুদা, হাসির মা আর তার ছোট ভাই।
বাংলাদেশের বেনাপোল সীমান্তে পরিবারের কাছে তাকে হস্তান্তরের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। যেখানে উপস্থিত থাকবেন দুই দেশের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়াও পাচার হয়ে যাওয়া হাসির পরিবারের সদস্যরা।