খসড়া টেলিযোগাযোগ নীতিমালা ২০২৫ অনুযায়ী আইসিএক্স বা, ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ লাইসেন্স বাতিল হলে ৩০০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাবে সরকার। বৃহস্পতিবার রাজধানীর রাওয়া কমপ্লেক্সে এক কর্মশালায় এ মন্তব্য করেন আইসিএক্স অপারেটররা। একইসাথে দাবি করেন, আইসিএক্স লাইসেন্স বাতিল হলে টেলিযোগাযোগ খাতে বাড়বে বৈষম্য ও ভারসাম্যহীনতা; পাশাপাশি বিলুপ্ত হতে পারে মধ্যম সারির দেশীয় কোম্পানি এবং কর্মসংস্থান।
টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ, টিআরএনবি আয়োজিত এই কর্মশালার শিরোনাম ছিল- “খসড়া টেলিযোগাযোগ সংস্কার নীতিমালা-২০২৫: আইসিএক্স এর প্রাসঙ্গিকতা”। কর্মশালা শেষে ব্রিফিংয়ে অংশ নেন-অ্যাসোসিয়েশন অব আইসিএক্স অপারেটরস অব বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠানটির কোষাধ্যক্ষ অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. খুরশীদ আলম জানান, আইসিএক্সের লাইসেন্স বাতিল হলে সার্বিক জবাবদিহিতার অভাবে দেশের নিরাপত্তা ও স্বার্থবিরোধী কার্যক্রম বাড়তে পারে। এসময় নীতিমালায় প্রয়োজনীয় মতামত ও সংশোধনের সুপারিশ করেন এআইওবি এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত মুস্তাফিজুর রহমান। এসময় সংগঠনটি বেশ কিছু প্রস্তাবনা দেয়।
আইসিএক্স অপারেটরদের প্রস্তাবনা:
১. ভয়েস নেটওয়ার্কে বড় পরিবর্তনের আগে পাইলট প্রকল্প ও তথ্যনির্ভর বিশ্লেষণ প্রয়োজন।
২. আন্তর্জাতিক এসএমএস খাতকে পরীক্ষামূলকভাবে আইসিএক্স মডেলে এনে ফলাফল পর্যালোচনা করা যেতে পারে।
৩. দেশব্যাপী আইসিএক্স কার্যক্রমকে নির্দিষ্ট পয়েন্ট অব ইন্টারকানেকশনে (POI) কেন্দ্রীভূত করায় এটি কার্যত একটি সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে।
৪. প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় আরও পরিমার্জন আনা যেতে পারে।
আইসিএক্স অপারেটররা আরও বলছেন, কল ড্রপ বা সেবার মানে আইসিএক্স-এর কোনো নেতিবাচক ভূমিকা নেই। বরং এটি স্বচ্ছভাবে কল আদান-প্রদান করে। তাঁদের মতে, আইসিএক্স বাজারের গতিশীলতা বাধাগ্রস্ত না করে, বরং ছোট-বড় সব অপারেটরের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ ও নিরপেক্ষ আন্তঃসংযোগ নিশ্চিত করে। সম্প্রতি প্রায় ১৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে আইপি টেকনোলজি উন্নয়নেও ভূমিকা রেখেছে আইসিএক্সগুলো।
অনুষ্ঠানে আইসিএক্স বাতিলের সম্ভাব্য ক্ষতি সম্পর্কে ধারণা দেয় অ্যাসোসিয়েশন অব আইসিএক্স অপারেটরস অব বাংলাদেশ (AIOB)।
রাষ্ট্রের ক্ষতি:
১. রাজস্ব হ্রাস: গত ১২ বছরে আইসিএক্স থেকে সরকার প্রায় ৬,০০০ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছে। আইসিএক্স তাদের গ্রস রেভিনিউয়ের ৫০% বিটিআরসিকে দেয়, যেখানে মোবাইল অপারেটররা দেয় ৫.৫%। তাই আইসিএক্স বাতিল হলে সরকারি রাজস্ব বিপুল পরিমাণে কমবে।
২. আর্থ-সামাজিক প্রভাব ও কর্মসংস্থান: আইসিএক্স বন্ধ হলে প্রায় ৫০০-৬০০ দক্ষ জনবলের কর্মসংস্থান অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এছাড়া, ঢাকার বাইরে গড়ে ওঠা ডেটা সেন্টারগুলোও হুমকির মুখে পড়বে। এটি প্রধান উপদেষ্টার 'শূন্য বেকারত্ব' নীতির পরিপন্থি।
৩. মনিটরিং ও জবাবদিহিতা হ্রাস: আইসিএক্স-এর অনুপস্থিতিতে বহুমাত্রিক নজরদারি ব্যবস্থা দুর্বল হবে।
৪. নিরাপত্তা ঝুঁকি বৃদ্ধি: অবৈধ ভিওআইপি, ক্লোনিং, নম্বর মাস্কিংয়ের মতো অপরাধ বাড়বে, যেমনটি ২০০৭ সালের আগে দেখা গিয়েছিল।
আইসিএক্স অপারেটরদের মতে, এই সংস্কার প্রস্তাবনা নতুন কিছু নয়, বরং পূর্বের কাঠামোতে ফিরে যাওয়ার শামিল, যা দেশকে বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দেবে এবং কর্মসংস্থানকে হুমকির মুখে ফেলবে। "জুলাই বিপ্লবের" চেতনায় দেশের স্বার্থ, টেলিকম খাতের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা এবং কর্মসংস্থান রক্ষার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।